আমেরিকান একাডেমি অব সায়েন্সেস নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি বংশ্ভুত মার্কিন বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এম. জাহিদ হাসান তাপস।
গত ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির অফিসিয়্যাল পেজে এ তথ্য জানানো হয়। এই অনুষদে তিনিসহ মোট ১২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। ২৭৬ স্কলার্স, বিজ্ঞানী, চিত্র শিল্পী এবং জনপ্রতিনিধিকে অলাভজনক ও প্রাইভেট খাতে অবদানের জন্য এ স্বীকৃতি দেয়া হয়।
জাহিদ হাসান পদার্থ বিজ্ঞানে ইউজিন ও হিগিংস অধ্যাপক। ২০০২ সালে তিনি এ অনুষদে যোগদান করেন। সে সময় থেকেই তিনি গবেষণা দলকে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেন। ২০০৯ সালে তিনি স্লোয়ান রিসার্চ ফেলোশিপ লাভ করেন। ২০১৩ সালে আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে উত্তীর্ণ হন।
আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর আগে ১৯২৯ সালে বিজ্ঞানী হারম্যান ভাইল এই ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ নামক অধরা কণার অস্তিত্বের কথা প্রথম জানিয়েছিলেন। তার নামেই এক কণার নামকরণ করা হয়েছিল। সেই ১৯২৯ সাল থেকেই বিশ্বের নামি-দামি সব পদার্থবিজ্ঞানী চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন ‘ভাইল ফার্মিয়ন’-এর অস্তিত্ব প্রমাণের। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন বাংলাদেশের এক কৃতিসন্তান অধ্যাপক ড. জাহিদ হাসান তাপস। অবশেষে ৮৫ বছর পর এই ‘ভাইল ফার্মিয়ন’ কণার অস্তিত্ত্ব আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে।
১৯৭০ সালের ২২ মে ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন ড. জাহিদ হাসান তাপস। অ্যাডভোকেট রহমত আলী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর একদিন শিশুপুত্র তাপসকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু তখন তাপসকে আদর করে কোলে নিয়ে বলেছিলেন, তোমার এই ছেলে একদিন অনেক বড় হবে। ওর জন্য আমার অন্তহীন আশীর্বাদ রইলো। তিনি বলেন, ‘সন্তানের প্রতিভার কাছে পিতার পরাজয় বরণ করার চেয়ে গর্বের আর কী আছে?’ জাহিদ হাসান তাপস ১৯৮৬ সালে ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে তাপস চারটি শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন।
১৯৮৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে চার শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে এইচএসসি পাস করেন। এরপর গণিতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বেশিদিন ক্লাস করেননি। কারণ তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের হাতছানি দিয়েছিল ওই সময়ে। মাত্র চার দিন ক্লাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই বছরই স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান স্বপ্ন বাস্তবায়নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন পদার্থবিজ্ঞানে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার কারণে সুযোগ হয় নোবেল বিজয়ী তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ভাইনভার্গের কাছে শিক্ষা গ্রহণের। এরপর মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে চলে যান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মূলত তখন থেকেই পদার্থবিজ্ঞানের জগতে তার নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আর ওই সময় থেকেই তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কাজ করেন অসংখ্য খ্যাতিমান ও নোবেলজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে। এরই মধ্যে বিশেষ আমন্ত্রণে অতিথি হয়ে লেকচার দিতে যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার লেকচার শুনে মুগ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ উপস্থিত সব দর্শক। সেদিনই প্রস্তাব আসে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের। আর তিনি ওই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেন। যোগ দেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে।
পিএইচডি শেষ করে ২০১২ সালে আইনস্টাইন, নিলস বোর, ওপেন হাইমারের বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতেও কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। তার অধীনে ২০ জন শিক্ষার্থী পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত একশটি দেশে প্রায় আড়াইশত আন্তর্জাতিক সেমিনারে লেকচার দেন তিনি। সুইডেন, ফ্রান্স, ভারত, ইতালি, জাপান, চীন, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক নানা সেমিনারে নিয়মিত লেকচার দিচ্ছেন তিনি।