অপর্যাপ্ত ঘুম মাইগ্রেনের মাথাব্যথার মূল কারণ। গবেষণায় দেখা যায় যে, মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে খুব সকালে ক্লাস শুরু হয় এবং প্রায়ই শিক্ষার্থীরা তাদের মাইগ্রেনে এর ব্যথা অনুভব করে। এই পর্যায়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই কিশোর-কিশোরী, আর তাদের সহজাত প্রবণতা হলো রাতে দেরিতে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা।
সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য তাদেরকে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হয়, ফলে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর সুযোগ পায় না। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা মাথাব্যথা অনুভব করে। তাদের এমন অসুস্থতা দেখে অভিভাবক এবং শিক্ষকমন্ডলী সবাই উদ্বিগ্ন।
‘The Journal of Head and Face Pain এর একটি প্রতিবেদনে গবেষকরা বলেছেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকাল ৮:৩০ এর আগে ক্লাস শুরু হয় সেইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেশি মাইগ্রেনের ব্যথা হয়ে থাকে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৭.৭ দিন তাদের মাথাব্যথা থাকে।

নিউরোলজিস্ট অ্যামি গ্যালফ্যান্ড বলেছেন, “ঘুম এবং মাইগ্রেনের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে।নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমালে মাইগ্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাস পাবে।”
আমেরিকান একাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন পরামর্শ দিয়েছে যে, কিশোর -কিশোরীদের রাতে ৮-১০ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স পরামর্শ দিয়েছে যে, ‘উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকাল ৮:৩০ টার আগে ক্লাস শুরু করা উচিত নয়।’ তবে এই নির্দেশ মাত্র ১৮ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেনে চলে।
বর্তমানে ‘COVID-19’ এর জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে, স্কুল খুললে মাইগ্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি কেমন প্রভাব ফেলবে তা প্রমাণ করার জন্য গবেষকরা একটি জরিপ করেছিলেন। জরিপটি ভালোভাবে সম্পন্ন করার জন্য ১০ ডলার উপহার হিসাবে ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছিল।
জরিপে দেখা যায়, প্রায় এক হাজার জন শিক্ষার্থী মাইগ্রেনে আক্রান্ত এবং তাদের মধ্যে ৫০৯ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হয় সকাল ৮টার আগে এবং ৫০৩ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস শুরু হয় সকাল সাড়ে ৮টার পরে।
উভয় গ্রুপে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াতের সময় ছিল গড়ে ২৪ মিনিট। প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা সকাল ৬:২৫ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে এবং ৭:৫৬ মিনিটে স্কুলে যায় এবং দ্বিতীয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা সকাল ৭:১১ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে এবং স্কুলে যায় ৮:৪৩ মিনিটে। স্কুল চলাকালীন সময়ে প্রথমে গ্রুপটি রাত ১০:১৯ মিনিট এবং ২য় গ্রুপটি ১০:৫৪ মিনিটে ঘুমাতে গিয়েছিল।
সমীক্ষায় দেখা যায় যে, প্রথম মাসে ১ম গ্রুপটির মাথাব্যথা ছিল গড়ে ৭.৭ দিন এবং ২য় গ্রুপটির মাথাব্যথা ছিল গড়ে ৪.৮দিন। গবেষকরা বলেছেন, দুইটি গ্রুপের ঘুমের পার্থক্য খুব বেশি না। তবে ঘুম ছাড়াও আরও অনেক কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা হতে পারে। তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। যেমন, কাজের ধরণ, খাদ্যভাস, লিঙ্গ, গ্রেড প্রভৃতি।

গ্যালফ্যান্ড বলেছেন, “মাইগ্রেনের মাথাব্যথা হ্রাস করতে হলে মাইগ্রেনের মাথাব্যথার প্রতিষেধক নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।”
তিনি আরও বলেছেন, “১২-১৭ বছরের শিশুদের এপিসোডিক মাইগ্রেন এর কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে।
প্রাপ্ত বয়স্কদের দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা দূর করার জন্য Toxic A(Botox) খুবই কার্যকারি ইঞ্জেকশন।”
তিনি বলেছেন, “শিক্ষার্থীরা আমাদের ভবিষ্যৎ, তাই তাদের ভবিষ্যৎ এর কথা বিবেচনা করে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সকালে দেরিতে ক্লাস শুরু করতে হবে।এর ফলে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে পারবে এবং মাইগ্রেন এর ব্যথা থেকে মুক্তি পাবে।”
২০১৯সালে, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল যে, সকাল ৮:৩০টার আগে বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করা যাবেনা। তাদের এই আইন ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রয়োগ করা হবে।
গবেষকরা বলেছেন, মাইগ্রেনের মাথাব্যথা দূূূর করতে ঘুুুমের বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুুুমই মাইগ্রেন মাথাব্যথার মূূূল প্রতিষেধক!!
আমেনা আঁখি /নিজস্ব প্রতিবেদক
এগুলো পড়ুন
জড়বস্তুর সাথে প্রেম, স্বাভাবিক নাকি মানসিক ব্যাধি? নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যে চাঁদ এ চীনের মিশন চ্যাং ই-৫ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন কি চিরস্থায়ী? কিভাবে হবে এর শেষ? |
তথ্যসূত্র: সাইটেক ডেইলি
+1
2
+1
1
+1
+1
1
+1
+1
+1