১৯৮২ সালের ৪ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে নিকের যখন জন্ম হয়,তখন তাকে তার মা কোলে নিতে অস্বীকার করেন।আজব না?
স্কুলজীবনের মাত্র ১০ বছর বয়সে এই নিক আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।কিন্তু সে যাত্রায় তিনি বেঁচে যান।তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন,জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া যাবে না। চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।জীবনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে এর সঙ্গে লড়াই করে যেতে হবে। নিকের বয়স তখন ১৭।হাইস্কুলের ছাত্র।স্কুলের একজন সিকিউরিটি গার্ড তাকে জনসমক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।৫৩ বার প্রত্যাখাত হওয়ার পরে নিক যেদিন স্টেজে উঠলেন,সেদিনও তাকে দেখে দর্শক সারির প্রায় সম্পূর্ণটাই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।
কারণটা কী?
নিক ভুজিসিক হাত-পা ছাড়াই পৃথিবীতে এসেছিলেন।এটাও কী সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। ‘টেট্রা এনিমেলিয়া সিনড্রোম’-এর কারণে নিক হাত-পা ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।WNT3 জিনের কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়।নিকের হাত-পা না থাকলেও শরীরের অন্য সবকিছু স্বাভাবিক।
এসবের পরে কিন্তু তিনি কখনও মনে করেননি যে, সম্ভব না! তিনি অবিরতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং অভাবনীয়ভাবেই জনগনের কাছে থেকে ব্যাপক সাড়া পেতে থাকেন।
তিনি তার পায়ের মাত্র দুটি আঙ্গুল দিয়ে মিনিটে ৪৭ টি শব্দ টাইপ করতে পারেন, যা অনেকে ১০টি আঙ্গুল দিয়েও পারে না। আমরা যেখানে একবার স্নাতক করতেই টায়ার্ড খেয়ে যাই, সেখানে নিক ফিন্যান্সিয়াল প্ল্যানিং ও অ্যাকাউন্টিংয়ে দু-দুবার স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। স্নাতক সম্পন্ন করার পর এখন পর্যন্ত তিনি ৬০ টিরও বেশি দেশে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষের কাছে নিজের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য পৌঁছে দিয়েছেন।
তার লেখা গ্রন্থ Life Without Limits: Inspiration for a Ridiculously Good Life প্রকাশিত হওয়ার পর এটি প্রায় ৩০ টি ভাষায় অনুদিত হয় এবং ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলারের স্বীকৃতি অর্জন করে। এই নিক ভুজিসিক প্রায় ৫ লক্ষ মার্কিন ডলার মূল্যের একটি প্রতিষ্ঠানের একজন সফল উদ্যোক্তা।
হাত-পা না থাকলে কী হবে নিক Life Without Limbs নামে একটি প্রতিষ্ঠানও চালান। এছাড়াও Attitude is Altitude নামে একটি সংগঠনের সাথেও রয়েছে নিকের সম্পৃক্ততা। এই সংগঠনটি প্রণোদনামূলক বক্তৃতা ও দুর্বলদের ঠাট্টা-বিদ্রুপ না করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে থাকে। সত্যিই হাত-পা না থাকলে কী হবে, মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন নিক ভুজিসিক। হাত-পা নেই বলে যাকে একদিন স্কুলের ছেলেরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো সেই নিক ভুজিসিক আজ সকলের কাছেই এক প্রেরণার উৎস। সৃষ্টির ধারাবাহিকতা ব্যত্যয় যতোই ঘটুক না কেন, ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সবকিছুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে সাহসিকতার সাথে চলতে পারলে এই দুনিয়াতে বড় অনেক কিছুই করা যায় সে প্রমাণ রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের নিক ভুজিসিক।