প্রতিবছরই প্রযুক্তি তার নতুনরুপে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়, ২০১৮ সালের মত ২০১৯ এই আরও উন্নত আর বিস্ময়কর প্রযুক্তি নিয়ে আসছে টেকজায়ান্টরা৷
ফোল্ডেবল স্ক্রিন , ৫জি এবং এআর যা ২০১৯ সাল মাতিয়ে তুলবে।
২০১৯ সালে মোবাইলের অত্যাধুনিক যান্ত্রিক স্লাইডার, ৫ জি , স্মার্ট ভয়েস এ্যাসিসটেন্ট , ফোল্ডেবল স্ক্রিনসহ আরও নানান ডিভাইস আপনাকে ডিজিটাল ভর্টেক্স থেকে সুইচ করতে প্ররোচিত করবে।দেখে নেয়া যাক কি কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যঃ
Fold it:
মোবাইলের ডিসপ্লেকে আরো নমনীয় করার প্রযুক্তি নিয়ে আগে থেকেই গবেষণা চলছে। Samsung একটি মুঠোফোনকে টেবলেটে পরিবর্তনের মাধ্যমে এই প্রযুক্তিকে অন্য ধাপে নিয়ে গিয়েছে। একে বলা হচ্ছে The Infinity Flex Display এবং এ সিরিজের ১ম ফোনটি বাজারে আসবে ২০১৯এ। এ ডিসপ্লের আকার সুবিধামতো পরিবর্তিত হবে। যখন কোনো কল এর উত্তর দিতে হবে বা পকেটে রাখা হবে তখন তার আকার ছোট হবে আবার কোনো ভিডিও দেখার সময় ডিসপ্লে বড়ও করা যাবে। আবার সুবিধামতো ফোল্ড করার সুযোগও থাকবে।
Digital Detox :
স্মার্ট ডিভাইস যেমন আমাদের জীবন সহজ করে দিয়েছে , তেমননি আমাদের জীবনের মূল্যবান সময় কেড়েও নিচ্ছে ৷ আমরা আমাদের অজান্তেই হয়তো অনেকটা সময় অপচয় করে ফেলি ৷ কিন্তু Digital Detox Apps এর সাহায্যে আমরা খুব সহজেই Time Management করতে পারি ৷ এই Apps টি বলে দিবে আমরা সারাদিন কতটা সময় Social Media তে অথবা গেম খেলে অতিবাহিত করেছি ৷ এর সাহায্যে আমরা খুব সহজেই আমাদের সময় কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব ৷ এর সাহায্যে আমরা সময় সীমা নির্ধারণও করে দিতে পারি ৷ যেমন আমরা আজকে ১ ঘন্টা Social Media ব্যবহার করব ৷ আমরা এর চেয় বেশি সময় Social Media ব্যবহার করলে Apps টি আমাদের Notification এর মাধ্যমে তা জানিয়ে দিবে ৷
0 to 100 % within a coffee break:
ব্যাটারী প্রযুক্তি বর্তমানে চরম শিখরে আছে। কিন্তু চার্জং আরও দ্রুত হতে পারে। যা আমরা দেখেছি এই বছর। One Plus Dash Charge ছিল সবচেয়ে দ্রুত যতক্ষণ না পর্যন্ত Oppo’s SuperVooc One plus এর দ্রুত চাজিংকে হারিয়ে দিতে সমর্থ হয়। SuperVooc এ ব্যবহার হয় ৫০-ওয়াট এর চাজিং সলিউশন যা মাত্র ৩৫ মিনিটে ব্যাটারী ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত চার্জ করে দিতে সক্ষম। তাই , রাতভর ফোন চার্জ করার ঝামেলা আর নেই। শুধুমাত্র চা-কফির একটা ছোট বিরতিতেই এখন ফোন ব্যাটারী হয়ে যাবে সম্পূর্ণ চার্জ।
5G Cometh :
5G Network এ দু’টি আপগ্রেড রয়েছে ৷ একটি হলো উচ্চ গতি এবং অপরটি হলো খুব কম বিলম্ব ৷ এইটা তেমন বড় কিছু না ৷ কিন্তু কেউ যদি এমন একটা Network পায় যা 4G এর তুলনায় ১০০ গুণ উচ্চ গতি সম্পন্ন এবং যেখানে বিলম্বের সময় শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব ,তবে সেইটা আমাদের জীবনে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে ৷
যখন 5 জি সম্পূর্ণরূপে অপ্টিমাইজ করা হয় এবং উচ্চ গতিতে (তাত্ত্বিকভাবে 10 গিগাবাইট পর্যন্ত), তখন ব্যয়বহুল অপটিক ফাইবার তারগুলি স্থাপন করার প্রয়োজন নেই।
তথ্যের বিনিময়ে বিলম্ব সময় কমিয়ে আনা হয় এবং এটি স্বচালিত যানবাহন, দূরবর্তী এলাকায় চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং আইওটি / সংযুক্ত পণ্যগুলির জন্য উপযোগী।
সবশেষে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের একটি আধুনিক ও সংযুক্ত শহরের স্বপ্নের ৷
Hands Off , Voice on:
ভয়েস একটি চমৎকার প্রযুক্তি , যদি একজন নিয়মিত ফোন এ্যাসিসটেন্ট (Google , Siri) স্মার্ট স্পিকার (Google Home , Amazon Alexa) এবং অন্যান্য কানেকটেড ডিভাইস ব্যবহার করে। ভয়েস এ্যাসিসটেন্ট এখন আরও উন্নত হয়ে গিয়েছে। উদাহরণস্বরুপ – ধরা যাক , তুমি jazz গান শুনতে বেশি পছন্দ কর অপরদিকে তোমার বন্ধু Bollywood গান শুনতে পছন্দ করে। যখন তুমি ভয়েস এ্যাসিসটেন্টকে কমান্ড করে Play Music তখন jazz গান চালু হয়ে যাবে। আবার , একই কমান্ড তোমার বন্ধু দিতো তাহলে Bollywood গান চালু হতো।
90 & 120 Hz Display
আমাদের মধ্যে অনেকেই সারাদিন ডিসপ্লেতে তাকিয়ে থাকে। কিছু ডিসপ্লে একটি অপরটির থেকে ভালো। এর কারণ উচ্চ রেজুলেশন , উজ্জল স্ক্রিন এবং OLED এর মতো নতুন প্রযুক্তি। ডিসপ্লের জন্য স্ট্যান্ডার্ হচ্ছে ৬০ হার্জ। এর মানে এটা সেকেন্ডে ৬০ বার ছবিটিকে রিফ্রেশ করতে পারে। এটা যদি আরও বাড়ানো যায় তবে আরও ভালো মানের ছবি দেখা যাবে। অ্যাপেল এর ‘আইপ্যাড প্রো’ এর ডিসপ্লে ১২০ হার্জ পর্যন্ত রিফ্রেশে সক্ষম। আর এখন পর্যন্ত আমাদের দেখা Razer Phone এই ১২০ হার্জ ডিসপ্লে দেখা গিয়েছে।
One Notch up:
২০১৮ সালে দেখা মিলেছিল এই নচযুক্ত মোবাইলের সঙ্গে, প্রাথমিকভাবে সবাই মনে করেছিল যে এটা খুবই ভালো ধারণা। এতে রয়েছে ক্যামেরা , ইয়ারপিস, প্রক্সিমিটি সেন্সর এবং এম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর। আবার এটা ডিভাইসের আকার বৃদ্ধি ছাড়াই স্ক্রিন সাইজ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।
এই বছর, ওয়ানপ্লাস 6T এর মতো ফোনগুলিতে water-drop স্টাইল notch রয়েছে যা শুধুমাত্র সামনে ক্যামেরা এবং সেন্সরগুলিকে ধরে রাখে। ভিভো নেক্স এবং অপপো এক্স পেয়েছে অন্যের আগে প্রায় বেজেল-কম বর্ণন (চারপাশে ছোট বেজেলগুলির সাথে এবং ছোট্ট চেইন দিয়ে সম্পূর্ণ)।এই কাজে তারা ক্যামেরা প্রকাশ করার জন্য স্লাইড যে motorized উপাদান ব্যবহার করে । দীর্ঘায়ু এবং স্থায়িত্ব সন্দেহজনক ছিল যদিও এবং চলন্ত অংশ সঙ্গে ডিভাইসের জন্য আইপি রেটিং থাকতে পারে না।
Self-Driving Car:
‘টেসলা’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক ইতোমধ্যেই টেসলার বর্তমানে পরীক্ষাধীন প্রায় স্ব-চালিত (Semi-autonomous) চালক সহায়তা প্রযুক্তি ‘অটোপাইলট’র নতুন একটি আপডেট পরীক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন।
নতুন এই সেলফ-ড্রাইভিং প্রোগ্রামটি তার আগের সংস্করণের চেয়ে অন্তত ১ হাজার শতাংশ বেশি দক্ষ বলে জানিয়েছেন মাস্ক। ২০১৯-এ যত দ্রুত সম্ভব স্ব-চালিত গাড়ি বাজারে আনতে বদ্ধপরিকর তিনি।
Shopping Augumented :
আমরা এখন অনেকেই online এ কেনাকাটা করে
থাকি ৷ মূলত অনলাইন শপিং চালাচ্ছে ছোট শহর এবং গ্রামীণ এলাকাগুলো যেখানে কোনও পণ্য কিনতে দোকানে যাওয়ার চেয়ে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করা সহজ।
ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক দিয়ে ভারতের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়, যদিও অনলাইনে কেনাকাটা করা মানুষের সংখ্যা এখনও কম।
ই-কমার্স কোম্পানি কিছু roadblock দূর করতে পারে,তবে এখানে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে ৷
Biometrics Everywhere :
ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং এবং ফেইস আনলক অপশনগুলো বেশ কয়েকবছর ধরেই মুঠোফোনে ব্যবহৃত হচ্ছে। দিনদিন এগুলোর আরো নিরাপদ ভার্শন বের হচ্ছে। Apple অন্যতম নিখুঁত ফেইস আনলক সিস্টেমের সূচনা করেছিল iPhone X এ। দিন যতোই আগাবে বায়োমেট্রিক স্ক্যানারগুলোর প্রসার আরো বাড়বে। যেমন, দরজার ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার এ আঙ্গুল রাখলেই দরজা খুলে যাবে। গাড়ির স্টার্ট/স্টপ বাটন আঙ্গুলের সাহায্যেই এক্টিভেইট হবে। এছাড়াও গাড়ির তাপমাত্রা, সিট এর অবস্থান, স্টিয়ারিং হুইল এর পজিশন ব্যবহারকারী অনুসারে পরিবর্তিত হবে। Hyundai ২০১৯ এ তাদের কিছু গাড়িতে এধরণের প্রযুক্তি সংযুক্ত করবে।
Insta Healthcare:
Apple Watch Series 4 এর সাহায্যে যেকেউ তার কব্জি থেকেই ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম মাপতে পারছেন। এরকম ওয়ারেবল ডিভাইসগুলো স্মার্ট হেলথকেয়ারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০১৯ সালে এই প্রযুক্তিগুলো আরো নিখুঁত হবে। এর সবচেয়ে বড় সুফল হচ্ছে এর মাধ্যমে রোগ মারাত্মক হবার আগেই তা শনাক্ত করা যাবে ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে। তাছাড়াও দূর থেকেই রোগীর অবস অবস্থা ডাক্তার মনিটরিং করতে পারবেন এবং রোগীর সুবিধা অনুযায়ী পারসোনালাইজড চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারবেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ব্লাড গ্লুকোজ মনিটরিং এর জন্য যতো সহজ এবং নিখুঁত যন্ত্র আবিষ্কৃত হবে ততোই মঙ্গল!
প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উৎকর্ষতার সাথে একটি সুস্থ বিশ্বের প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
+1
+1
+1
+1
+1
+1
+1