পুরো পৃথিবী জুড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমান সময় উপযোগী নয় বলে বিল গেটস, স্টিভ জবস, মার্ক জুকারবার্গ এর কলেজ ড্রপ আউটের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া বন্ধ করার সময় হয়ে গেছে।
বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ, স্টিভ জবস এর মত সফল উদ্যোক্তাদের কলেজ ড্রপ আউট হবার ঘটনা ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে সাথে জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ এই গল্প গুলো সাধারনত তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক, গল্প গুলো উদ্যোক্তাদের তাদের পড়াশোনা বাদ দিয়ে সৃজনশীল আইডিয়া দিয়ে ব্যবসায়িক ফান্ড পাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
অন্যদিকে নীরব ভাবে এটা বোঝায়, তাদের কলেজ বা প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনা তাদের সৃষ্টিশীলতাকে সামনে এগিয়ে যেতে দেয় না। শুধুমাত্র আমেরিকাতে কলেজ ড্রপ আউটের এই তিনজন ভাগ্যবান ব্যক্তির কৃতিত্ব থেকে অনুপ্রাণিত হবার কিছুই নেই বরং আরো অসংখ্য কলেজ ড্রপ আউট আছে যারা ড্রপ আউট হয়ে কোনো সফলতার দেখা পাননি।
সত্তরের দশকের গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস যুক্ত অপারেটিং সিস্টেমের ধারণাটা সকলের কাছেই অচেনা ছিল আর বিল গেটস ও স্টিভ জবস এই সিস্টেম সকলের সামনে প্রথমবারের মতো তুলে ধরার সুবিধা পেয়েছিলেন। বিল গেটস উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এর সফটওয়্যারের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন অন্যদিকে স্টিভ জবস তার ম্যাকের ফন্টের জন্য টাইপোগ্রফি প্রবর্তন করছিলেন।
৭০ এর দশকের মাঝামাঝিতে সাধারণ জনগণ যখন কম্পিউটার সম্পর্কে কিছুই জানতো না তখন তারা দুজন এমন কিছু নিয়ে কাজ করছিলেন যা পরবর্তী বছরগুলোতে পৃথিবীর রুপ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। ৮০ এর দশকের মাঝামাঝিতে মোটামুটি সব জায়গায় কম্পিউটার ছড়িয়ে গিয়েছিল যা মূলত অ্যাপল এবং মাইক্রোসফটের সিইও এর সফলতা।
আরো দুই দশক পরে আসেন মার্ক জুকারবার্গ, যিনি হার্ভার্ডে পড়ার সময় ফেসবুক নামক সামাজিক নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটে ফোকাস করেন এবং কলেজ ছেড়ে দেন। তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল তার কলেজের বন্ধুদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক স্থাপন বা আন্তঃযোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করা যা বর্তমানে পুরো বিশ্বের মানুষজনকে সংযুক্ত করেছে। তার আইডিয়াটা বিল গেটস ও স্টিভ জবস এর মত চ্যালেঞ্জিং না হলেও তিনি মাইস্পেস ও অরকুটের সামাজিক যোগাযোগের ধারণাটিকে নতুন রূপ দিয়েছিলেন।
বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গ ও স্টিভ জবস ছিলেন হার্ভার্ড ও রিড কলেজের ড্রপ আউট। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ বা এশিয়ার যে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল ফারাক রয়েছে। কিন্তু এই গল্পগুলো আমাদের দেশের মানুষের মাঝে খুবই জনপ্রিয়।
এছাড়াও মানুষের বুঝতে হবে বর্তমানের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পুরোনো শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করা প্রয়োজন। বর্তমানে চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো যোগ্যতাগুলো এখন বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়।
স্কুল থেকে প্রতিটি গ্রেডের শিক্ষা এসব দক্ষতা ও শিল্প সুযোগ মুখী হওয়া দরকারি। শিক্ষার্থীদের এসব শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন যেন তাঁরা বাস্তব জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক শিক্ষা পদ্ধতি অকেজো হবার উপরে না হয়ে সময়ের সাথে সাথে এর উন্নয়নের উপর হওয়া উচিত।
জ্যাক মা, যিনি আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন ধনী চীনা ব্যক্তি, তিনি মুক্ত ভাবে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি সম্পর্কে বলেছেন।
তিনি মনে করেন শিক্ষার্থীদের কে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন :
১. ভয় কে জয় করতে শেখানো
২. নতুন দক্ষতা শিখার আগ্রহ সৃষ্টি করা
৩. সিদ্ধান্ত নিতে শেখানো
৪. পরিকল্পনা করতে শেখা
৫. অর্থ উপার্জনের আইডিয়া বের করা
৬. জীবনে বেড়ে উঠতে শেখানো।
তাছাড়াও শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেওয়া জরুরি। যারা শিক্ষা ব্যবস্থার ভুল গুলো সম্পর্কে কথা বলতে থাকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অকেজো বলে তা সরিয়ে ফেলা বা বিলুপ্ত করার মত প্রকাশ করে, তাদের বোঝা প্রয়োজন জীবনের সবকিছুই চ্যালেঞ্জ এবং উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া আপনি তা কখনোই অতিক্রম করতে পারবেন না।
সবকিছুর শেষে মানুষজনকে এ সকল ড্রপ আউট গল্প গুলো নিয়ে গর্ববোধ করা বন্ধ করতে হবে যা ভিন্ন যুগের, ভিন্ন পরিবেশের এবং অবশ্যই একটি মাত্র দেশ থেকে এসেছে। আর শিক্ষার্থীদের কে দক্ষতা অর্জনে আগ্রহী করে ভবিষ্যৎ দূরদর্শিতা ও অর্থ উপার্জনের সুযোগ খুঁজে বের করার উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
সাদিয়া বিনতে চৌধূরী/নিজস্ব প্রতিবেদক