কথিত আছে, যুদ্ধ বা মারামারির ক্ষেত্রে কুকুর গুরুত্বপূর্ণ নয়; কিন্তু কুকুরের ক্ষেত্রে যুদ্ধ বা মারামারি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তেমনিভাবে একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটে তার বন্ধুদের দ্বারা।
আপনার কখনোই শ’খানেক বন্ধুর প্রয়োজন হবে না। মুষ্টিমেয় কিছু বিশ্বস্ত বন্ধু থাকলেই যথেষ্ট যারা আপনাকে প্রয়োজনের সময় সাহায্য করবে এবং বিপদে সবার আগে এগিয়ে আসবে। কথায় বলে না, ”বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু”।
এটার মানে এই, যে সবসময় আপনার জন্য প্রস্তুত সেই আপনার আসল বন্ধু।
জিম রোহনের বাস্তব জীবনের উপর ভিত্তি করে বলা একটি তত্ত্ব হলো, ”আপনি আপনার চারপাশের ৫-৬ বন্ধুর গড়”। অর্থাৎ আপনি যাদের সাথে মিশছেন তাদের চরিত্র, বাহ্যিক আচরণ ছাড়াও বিভিন্ন অভ্যাস আপনার ভেতর পরিলক্ষিত হবে। আপনার যদি এমন বন্ধু থাকে যারা জীবন, বাস্তবতা, অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে তবে আপনার খুশি হওয়া উচিৎ।
একইভাবে যারা আপনাকে উৎসাহ দেয়, সমর্থন করে, আপনাকে উঁচু স্থানে আসীন করে তারা সবসময় আপনার জীবনের চলার পথে গতির জোগান দেয়। কোনো কিছু অর্জনে উৎসাহ দেয়। এজন্যই অলস, বাউন্ডুলে বা উদ্দেশ্যহীন ধরনের বন্ধুর চেয়ে এই ধরনের বন্ধুরা অনেক বেশি উপকারী এবং ভালো।
বিভিন্ন গবেষণা ও উপাত্ত মতে, আমজনতার তুলনায় বুদ্ধিমান ও সচেতন ব্যক্তিদের কম বন্ধু থাকে। কারণ আপনি যতই সচেতন এবং বুদ্ধিমান হবেন ততই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। একইসাথে আপনি আপনার জীবন নিয়েও সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। কারণ আপনি শুধু চাইবেন আপনার সফলতা যা শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রমের দ্বারাই সম্ভব। আবার উচ্চ জ্ঞানসমৃদ্ধ ব্যক্তি সামাজিক ক্ষেত্রে দুর্বল হয়।
যদিও এটা প্রমাণিত যে সমাজের সাথে মিশলে চিন্তামুক্ত এবং সুখী হওয়া যায়, কম বা কোন বন্ধু না থাকার কারণেই বুদ্ধিমান মানুষেরা জীবনের দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্যগুলিতে মনোযোগী হয়। তারা অনেক বড় স্বপ্ন দেখে যা তাদের বুদ্ধিমত্তার প্রতিফলন এবং এই ব্যাপারটিই তাদেরকে আরও বেশি উঁচুতে পৌঁছে দেয়।
যদি আপনি জীবনে সফল ব্যক্তিদের জীবনধারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তবে দেখতে পাবেন যে তারা যখন কিছু অর্জনের প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে তখন খুব কমই সামাজিকভাবে কাজ করে। তারা মানুষের সাথে আলাপচারিতা এড়াতে এবং সামাজিকীকরণ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে কারণ তারা শুধুমাত্র তাদের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে চায়।
বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা নিজেদের মঙ্গল নিয়ে অনেক সচেতন থাকে এবং এমন কিছু থেকে বিরত থাকে যা তাদেরকে হতাশ করতে পারে। তারা সামাজিকীকরণকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখে। তারা ভাবে নতুন কারো সাথে দেখা করা বা যোগাযোগ করা তাদেরকে কাজের ক্ষেত্রে অমনোযোগী করে তুলবে। এই ধরনের মানুষেরা তাদের চারপাশে সমসময় পছন্দের জিনিস এবং পরিবেশ তৈরি করতে ভালোবাসে।
নতুন কোনো অভিজ্ঞতার জন্য তারা খুব কমই নিজেদের পছন্দের পরিবেশ থেকে বেড়িয়ে আসতে চায়। এধরণের মানুষরাই জীবনে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করতে পারে। কারণ তারা তাদের লক্ষ্যে সর্বদা স্থির থাকে এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে যে কোনো কিছুকে উৎসর্গ বা উপেক্ষা করতে পারে।
সফল হতে হলে লক্ষ্য থাকতে হবে স্থির। মস্তিষ্ককে এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে কোনো কিছু আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রভাব না ফেলতে পারে। নিজেকে সবার থেকে আলাদাভাবে গড়ে তুলতে হবে পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।