রমজান মাস অফুরন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস।সুস্থ দেহ ও মনের জন্য রোজার গুরুত্ব অতুলনীয়।
পবিত্র রমজান মাসে মুসলমানরা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন। এ পানাহারের মধ্যে মুখ দিয়ে খাওয়ার ওষুধ (tablet,capsule,syrup)এবং এমন কোনো ইনজেকশন নেওয়া যাবে না, যা দ্বারা খাদ্য গ্রহণের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ ও শক্তি অর্জন হয়।
তাহলে আমরা কখন,কিভাবে ওষুধ সেবন করবো?
রমজান মাসে প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনমতো রদবদল করা আবশ্যক। বর্তমানে বিভিন্ন রোগের ডেইলি সিঙ্গল ডোজ (২৪ ঘণ্টায় একবার) ওষুধ কিংবা সাসটেইন্ড রিলিজড ওষুধ (Sustained Release Drug )পাওয়া যাচ্ছে। রোগের ধরন ও প্রকৃতি অনুসারে এসব ডেইলি সিঙ্গল ডোজ বা বিডি ডোজ (মানে ২৪ ঘণ্টায় দুবার) ওষুধ প্রয়োজনমতো প্রেসক্রিপশন করতে হবে।
রোজার সময় নিজে নিজে ওষুধের মাত্রা বা ডোজ পরিবর্তন করা উচিত নয়। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। রমজান আসার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা,ওষুধ সেবন এবং পানাহার সংক্রান্ত নিয়মাবলি বুঝে নেয়া।
আবারও বলছি নিজে নিজে ওষুধের মাত্রা বা ডোজ পরিবর্তন করবেন না।
একটি বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নালে “Drug Intake During Ramadan” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়।
ওই নিবন্ধে বলা হয়:
1) চিকিৎসার প্রয়োজনে ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করলে এবং ওই সব উপাদান ত্বকের গভীরে প্রবেশ করলেও রোজার কোন সমস্যা হবে না।
2) রোজা রেখে দাঁত তোলা যাবে, দাঁতের ফিলিং করা যাবে এবং ড্রিল ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া দাঁত পরিষ্কারের সময় অসাবধানবশত কোন কিছু গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হবে না।
3) রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত দেয়া যাবে এবং কাউকে রক্তদানেও কোন বাধা নেই। একই সঙ্গে রক্তগ্রহণ করতেও বাধা নেই। চিকিৎসার জন্য যোনীপথে ট্যাবলেট কিংবা পায়ুপথে সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে।
4) লিভারসহ অন্য কোন অঙ্গের বায়োপসি করা যাবে। পেরিটোনিয়াল কিংবা মেশিনে কিডনি ডায়ালাইসিস করা যাবে। রোজা রাখা অবস্থায় সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে রোগীর অপারেশন করলে রোজা নষ্ট হয় না।
5) ইনজেকশন ও ইনস্যুলিন : ইনজেকশনের কারণে রোজা ভাঙে না। এমনিভাবে একজন রোজাদার ইনস্যুলিন ইনজেকশন নিতে পারেন।কিন্তু স্যালাইন, ডেক্সট্রোজ প্রোটিনজাতীয় জিনিস ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না কারণ ওগুলো খাদ্যের জোগান দেয়।
6) ইনহেলার: বর্তমানে অ্যারোসল জাতীয় বেশকিছু ওষুধ দ্বারা বক্ষব্যাধি, হার্টঅ্যাটাক (নাইট্রোগ্লিসারিন) ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে। গ্যাস জাতীয় এসব ওষুধ রোগীর মুখের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়।এতে রোজা নষ্ট হয় না।
চিকিৎসকরা বলেছেন, মারাত্মক জটিল রোগী ছাড়া অন্য সবারই সেহরিতে এক ডোজ ইনহেলার নেয়ার পর পরবর্তী ডোজের ক্ষেত্রে ইফতারির পর নেয়ার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং রোগীর কর্তব্য হল বিষয়টি তার চিকিৎসকের নিকট থেকে বুঝে নেয়া এবং রোজা অবস্থায় তা ব্যবহার না করা।
রোজা অবস্থায় বমি হলে রোজা ভাঙবে না। তা খাদ্য বমি হোক বা রক্ত বমি। বমির পরিমাণ বেশি হোক বা কম হোক। বমি হওয়ার পর রোজা পালনে সক্ষম হলে তা পূর্ণ করবে; অক্ষম হলে রোজা ছেড়েও দিতে পারবে; এই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীরা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ ও খাবারবিধি সম্পর্কে জেনে নিবেন।
আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, রমজান ত্যাগের মাস, ভোগের মাস নয়। আমরা অনেকে সাহ্রি ও ইফতারিতে এমন ভোজনরসিক হই, এতে অনেকের শরীরের ওজন পর্যন্ত বেড়ে যায়। আমরা আসলে রোজার উদ্দেশ্যই ভুলে যাই।
অনেকে অসাবধানতা ও উদাসীনতার কারণে সাহ্রি না খেয়েই রোজা পালন করেন; এটা উচিত নয়। কারণ, এতে সাহ্রি সুন্নতের সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর হতে পারে। অনুরূপ কেউ কেউ যথাসময়ে ইফতার গ্রহণেও অলসতা করেন। এতেও ইফতারের সুন্নতের সওয়াব না পাওয়া এবং ইবাদতে বিঘ্ন ঘটা ও অসুস্থতার কারণ ঘটতে পারে।
সাহ্রিতে এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে রোজা পালন সহজ হয়। ইফতারেও এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে স্বাস্থ্য রক্ষা হয় এবং রাতে তারাবির নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের সহায়ক হয়। একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ না করে রাতে বারবার অল্প অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের পর থেকে সাহ্রি পর্যন্ত পানি ও তরল খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সুস্থ,সুন্দর ও সঠিক ভাবে রোজা পালন করার তৌফিক দান করুক, আমিন
Reference:
https://www.youtube.com/watch?v=R4NbN4muXB4
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC521001/
@Mohammad Hirok
Department of Pharmacy,
Jahangirnagar University