নয়টি জীবিত সন্তান জন্ম দিয়ে একত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাচ্চা জন্ম দেয়ার নতুন বিশ্বরেকর্ড আফ্রিকার দেশ মালির এক নারীর। তিনি পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ে একসাথে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে জন্ম দেন।
২৫ বছর বয়স্ক এই নারীর নাম হালিমা সিসি। মালিতে যখন তার আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করা হয় তখন তার গর্ভে সাতটি সন্তানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এই ঘটনা পুরো দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমনকি সেদেশের রাজনীতিকরাও বিষয়টির দিকে মনোযোগ দেন। মালির চিকিৎসকেরা হালিমার স্বাস্থ্য ও তার সন্তানদের বেঁচে থাকার ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিলেন। কেননা একসাথে এতবেশি সন্তানের জন্ম নেয়া খুবই বিরল ঘটনা। এ ধরনের ঘটনাগুলোতে চিকিৎসা জটিলতায় সাধারণত সন্তানগুলো বাঁচে না।
হালিমার ব্যাপারে দেশটির ডাক্তারদের দুশ্চিন্তার পরপরই সেদেশের ট্রানজিশনাল নেতা বাহ নডো হালিমাকে উন্নত চিকিৎসা প্রযুক্তি লাভের জন্য মরোক্কোতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। মরোক্কোতে ২য় দফা আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাতেও সাতজন সন্তানের কথা জানানো হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত হালিমা নয়জন জীবিত সন্তানের জন্ম দেন।
হালিমা সিসির এ Multiple birth-এর কীর্তি বিশ্বজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যান্টা সিবি বলেন মা ও সন্তানেরা সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। তারা দ্রুত বাড়ি ফিরবেন বলে তিনি জানান। হালিমার স্বামী এ সময়টিতে তাদের বড় মেয়েকে নিয়ে মালিতেই ছিলেন।
তিনি বলেন,
“খোদা আমাদের এই সন্তান দান করেছেন। এদের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্বও তাঁর। আমি এতে মোটেই চিন্তিত নই। মহাশক্তিমান স্রষ্টা কী করবেন তা তিনিই ভাল জানেন।”
ইতোপূর্বে Multiple birth বা একাধিক সন্তান জন্মের ঘটনা:
সর্বপ্রথম নয় সন্তান জন্ম দেবার কথা শোনা যায় ১৯৭১ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। এরপর ১৯৯৯ সালে এ ধরণের আরও একটি ঘটনা শোনা যায়। তবে ঐ দুটো সময় কোন সন্তানই বেঁচে ছিল না। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সবাই মারা যায়। এরপর ২০০৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় এক নারী আটটি সন্তানের জন্ম দেন। তিনি সে সময় সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়ে প্রথম বিশ্বের নজরে আসেন। এবারের ঘটনাটি সেই বিশ্বরেকর্ড ভেঙেছে।
কেন ঘটে Multiple birth:
সাধারণত আফ্রিকার মহিলাদের অন্য যে কোনো অঞ্চলের মহিলাদের তুলনায় একত্রে একাধিক সন্তান জন্মদানের হার বেশি। এর প্রধান কারণ ঐ এলাকার নারীরা ফার্টিলিটি ওষুধ সেবন করে থাকেন। এতে নারীর ডিম্বপাতের হার বেড়ে যায়।
নারীর মাসিক চক্রের কোন মাসে অধিক ডিম্বপাত হলে মিলনের সময় প্রতিটি ডিম্বাণু আলাদা শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হবে। ফলে একাধিক ভ্রূণ বিকশিত হবে। জেনেটিক্যালি এই বাচ্চাদের মধ্যে খুব বেশি মিল দেখা যায় না। এদের বলা হয় ফ্রাটার্নাল (fraternal) বেবি।
একাধিক সন্তানের আরও একটি কারণ রয়েছে। এখানে নারীর ডিম্বপাত একবার হয়। নিষেকও একবার ঘটে। কিন্তু নিষেক পরবর্তী সময়ে উৎপন্ন কোষটি একাধিক বার বিভাজিত হয়। এতে জন্ম নেয়া সন্তানেরা জেনেটিক্যালি একই বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। এদের বলা হয় আইডেন্টিক্যাল (identical) বেবি।
ধারণা করা যায় হালিমার সন্তানগুলোর মধ্যে ফ্রাটার্নাল ও আইডেন্টিক্যাল দুই ধরনের ভাই-বোনই রয়েছে।
ফলাফল:
যখন গর্ভে অধিক ভ্রূণ থাকে তখন ধারণা করা হয় এগুলো সব একই সময়ের নয়। অর্থাৎ প্রথম ভ্রুণ সৃষ্টির পরবর্তী কোন চক্রে অন্য কোন ভ্রুণ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে প্রি-ম্যচিউর সন্তানদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল এবং ফুসফুস অপরিণত। ফলে অনেকক্ষেত্রেই এরা বাঁচে না। আবার একসাথে অনেক শিশু থাকলে এদের সেরিব্রাল প্যালাসির সম্ভাবনাও অনেক বেশি। যা পরবর্তীতে তাদের নড়াচড়ায় প্রভাব ফেলে।
মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, অন-হেলথ
+1
1
+1
+1
+1
6
+1
3
+1
1
+1
1