শীতকালে সাধারণত বেড়ানোর ধুম পড়ে যায়। শুধু মানুষ না, পাখিদের মধ্যেও এ প্রবণতা দেখা যায়! এক বিশেষ শ্রেণির পাখি এক দেশ থেকে আরেক দেশে বেড়াতে আসে, যাদের আমরা অতিথি পাখি বলে থাকি।
বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি। কিছু কিছু পাখি তাই প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল প্রতিবছর এই দূরত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে। আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা অতটা পথ পাড়ি না দিলেও তারাও অনেক দূর থেকেই আসে।
বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশির ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে।এসব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া স্বচ্ছ পানির বালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, রাজসরালি, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কেন এই অতিথি পাখিরা আসে?
উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে শীতকালে প্রচুর ঠান্ডা পড়ে। সেই কনকনে শীতের মধ্যে খাবার জোগার করা তো দূরের কথা, জীবন রক্ষা করাই কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। আমদের দেশ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশ, অর্থাৎ এখানে খুব বেশি শীত ও নেই আবার কাঠফাটা রোদও নেই।
সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন থেকে তাই প্রচুর পাখি দক্ষিণের দিকে উড়াল দেয়। মূলত অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে তারা আসতে শুরু করে, এবং শীত কাটিয়ে মার্চের দিকে নিজের দেশে ফিরে যায়।
হাজার হাজার কিলোমিটার পথ তারা কিভাবে রাস্তা মনে করে পাড়ি দেয়, তা আজও বিজ্ঞানীদের ভাবায়। সাধারণত আসার সময় অভিজ্ঞরা থাকে ঝাঁকের সামনের দিকে, নবীনদের রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যায়। আর যাওয়ার সময় নবীনরা দলের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে।
ঢাকায় বা তার আশেপাশে যাদের বাসা, তারা চাইলেই অতিথি পাখির ঝাঁক দেখতে যেতে পারেন। সাভারে অবস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর প্রচুর অতিথি পাখির সমাগম হয়। পুরো ক্যাম্পাসে ছোট-বড় ১৭ টি লেক রয়েছে, তার মধ্যে তিনটিকে পাখিদের জন্য অভ্যারণ্য ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ে মাছ চাষ কমানোর পর পাখিদের সংখ্যা আরো বেড়েছে।
২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকতায় গত বছরের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনুষ্ঠিত হয় “পাখি মেলা”। লেকের পাড়ে দাড়াঁলেই দেখা যাবে অজস্র সরালি, পাতারি, গাঈগেনি, পান্তামুখি, খঞ্জনা সহ নাম না জানা পাখির ঝাঁক। হাজার হাজার পাখির কলকাকলি একবার শুনে আসা যেতেই পারে।