আমাদের চারপাশে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য এখন মেশিন লার্নিং এর সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আর এই প্রযুক্তির সূচনা করার চিন্তা করা হচ্ছে মৌমাছির সংখ্যা বাড়াতে।
মৌমাছি খাবারের সন্ধানে অনেক দূরত্ব ভ্রমণ করে। কিন্তু এই যাত্রায় রোগ, আবহাওয়াসহ নানা প্রতিকূলতা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় হুমকি হল ভ্যারোয়া মাইট। এই পরজীবী দ্বারা মৌমাছি আক্রান্ত হলে আর পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে একটি কলোনি ১-৩ বছরের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এটি দ্বারা আক্রান্ত হলে পরজীবীটি মৌমাছি আর লার্ভা হতে রক্ত শুষে নেয়। যদিও এতে সাথে সাথে মৌমাছি মারা যায়না, তবে অনেক দূর্বল হয়ে যায় আর পরবর্তী প্রজন্মেও বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
যেহেতু, পরজীবীগুলো খুবই ছোট, তাই খুব ভালোভাবে না তাকালে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বোঝাও যায়না। মৌয়ালরা স্বভাবতই এই অবস্থা এড়িয়ে চলতে চায়। একমাত্র সমাধান ছিল মৌচাকের নীচে একটি অনুভূমিক তল রাখা এবং কয়েক দিন পরপর তা বের করে সব আবর্জনা,ময়লা ঘেটে তা পরীক্ষা করা। এটি প্রচন্ড কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। আবার, এই প্রক্রিয়ায় পরজীবীর পরিমাণ কম হলে তা চোখের আড়ালে থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।
আর, এখানেই মেশিন লার্নিং হতে পারে আশীর্বাদ। খুব বেশি ডেটা থেকে কাঁটছাঁট করে প্রয়োজনীয় কাঙ্ক্ষিত ডেটা বের করতে মেশিন লার্নিং খুবই দরকারি। এই ধারণাটাই আমরা কাজে লাগাবো। তলে থাকা অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বডি পার্টস, অপ্রয়োজনীয় উপাদান, আবর্জনা ঘেঁটে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত মাইটসগুলো শনাক্ত করা যায়।
সুইজারল্যান্ডের École Polytechnique Fédérale de Lausanne এর ছাত্রছাত্রীরা Apizoom নামের একটি ইমেজ রিকগনিশন এজেন্ট তৈরী করেছে, যেটি কোনো ছবি থেকে কয়েক সেকেন্ডে পরজীবীগুলো শনাক্ত করতে পারে। মৌচাষীদের শুধু স্মার্টফোনে একটি ছবি তুলে চেক করতে হবে। এই প্রজেক্টটি শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। মডেলটিকে ট্রেইন আপ করা হয়েছিল ১০ হাজারেরও বেশি স্যাম্পল ছবি দিয়ে। এখন পর্যন্ত সফলতার হার ৯০%। বর্তমান পরিকল্পনা হচ্ছে এই প্লাটফর্মটিকে সবার জন্য সহজলভ্য করে তোলা! আশা করা যায়, এই প্রযুক্তি মৌচাষীদের কাছে দ্রুতই পৌঁছাবে। আর পরবর্তীতে মৌমাছিরা এর জন্যে ধন্যবাদ দিবে, সন্দেহ নেই।
আর সবাইকে বিশ্ব মৌমাছি দিবসের শুভেচ্ছা।