ঃHIV সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানি। এই ভাইরাস দেহে প্রবেশের ফলে এইডস রোগ হয়। এইডস শুনেই প্রথমে যা মাথায় আসে তা হলো মৃত্যু। কারণ এইডসের নির্দিষ্ট কোনো প্রতিকার নেই। কিন্তু চলতি কিছু খবরে আমরা হয়তো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো HIV–ভাইরাস থেকে মুক্তি মিললো এক আর্জেন্টাইন নারীর। ৩০ বছর বয়সী এই নারীর দেহে ২০১৩ সালে চিকিৎসকরা তার দেহে HIV ভাইরাসের আলামত খুঁজে পান। সেই নারীর দেহে কোনো রেগুলার ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়নি, আর এইডস-এ আক্রান্ত হওয়ার আট বছর পর তার দেহে ভাইরাসের কোনো আলামত খুঁজে পাননি চিকিৎসকরা। এর আগে একবারই মাত্র চিকিৎসকরা এরকম ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এইডসের মতো মরণব্যাধি নিরাময়ে বিভিন্ন ফ্রন্টে কাজ করেছিলেন। যেমন,
জিন থেরাপি; কিক এন্ড কিল-দেহস্থ এইচআইভি ভাইরাসকে এর ধারক কোষ থেকে আলাদা করে ধ্বংস করা।
তারপর, ব্লক এন্ড লক– ভাইরাসকে আক্রান্ত কোষ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয় যাতে এর ক্লোনিং সম্ভব না হয়। এছাড়াও,
থেরাপিয়্যুটিক ভ্যাকসিন- ভ্যাক্সিনেশনের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
আরেকটি রয়েছে যা অত্যন্ত জটিল এবং একই সাথে ঝুঁকিপূর্ণ উপায়— তা হলো স্টেম সেল প্রতিস্থাপন। এর মাধ্যমে দুজন এইডস রোগী সুস্থতা পায়। এর মধ্যে প্রথম জন্য হলেন টিমথি রে ব্রাউন ওরফে “দ্য বার্লিন পেশেন্ট” এবং দ্বিতীয় জন হলেন অ্যাডাম ক্যাস্টিল্লেজা। এরা উভয়েই অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এইচআইভি মুক্ত হয়।
এখন আসা যাক, সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে আসা The Esperanza Patient খ্যাত আর্জেন্টাইন নারীর ব্যাপারে।
গত 2020 সালের আগস্টে nature.com এ Dr. Yu এর একটি রিসার্চ পেপার প্রকাশিত হয়, যেখানে Dr.Yu ৬৪ জন ব্যক্তির উপর গবেষণা করেন, যারা সেই আর্জেন্টাইন নারীর মতো এলিট কন্ট্রোলার। যেখানে ধারণা করা হয়েছিলো, তারা সেই দুইশো জনের মধ্যে একজন, যাদের ইমিউনিটি সিস্টেম ভাইরাসকে নির্মূল করতে সক্ষম।
২০১৭-২০২০ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টাইন সেই নারীর ব্লাড স্যাম্পল কালেক্ট করছিলেন Yu, Dr. Natalia (Argentina) এবং মার্চ ২০২০ এ তার প্রেগন্যান্সির সময় প্লাসেন্টাল টিস্যুও কালেক্ট করা হয়। ২০১৩ এর মার্চে HIV ধরার পর ২০১৯ পর্যন্ত তিনি কোনো ধরনের অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্ট নেননি। এরপর প্রেগন্যান্সির সময় ছয় মাস তিনি tenofovir, emtricitabine, raltegravir মেডিসিন গ্রহণ শুরু করেন এবং সুস্থ, HIV নেগেটিভ বেবি জন্ম দেওয়ার পর আবার তিনি থেরাপি নেওয়া বন্ধ করেন।
এর পূর্বেও ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন উইলেনবার্গ নামক এক নারী তার দেহের লাখ লাখ কোষ এইচআইভি সংক্রমিত হওয়া সত্ত্বেও আশ্চর্যভাবে এইচআইভি নির্মূলে সক্ষম হয়। Dr.Yu এর মতে, আর্জেন্টাইন নারীর ঘটনাটিও লরেন উইলেনবার্গের অনুরূপ। ভাইরোলজিস্টদের ধারণা উভয় নারীর দেহেই পটেন্ট কিলার টি-সেল বিদ্যমান যা ভাইরাসকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৮ মিলিয়নের কাছাকাছি। প্রতিবছরই এইডস এর ফলে অসংখ্য মানুষ মারা যান। গতবছর এই সংখ্যাটা ৬৯০,০০০ এ গিয়ে দাঁড়ায়। যদি মানুষের শরীরেই এই মরণব্যাধি নিরাময়ের হাতিয়ার থাকে, তাহলে আশা করা যায়, সেইদিনও আর খুব বেশি দূরে নয় যখন AIDS এর সামনে থেকে মরণব্যাধি ট্যাগ সরে যাবে।
মিথিলা ফারজানা মেলোডি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সায়েন্স এলার্ট, বিবিসি, সিএনএন, টাইম
+1
+1
+1
+1
+1
3
+1
+1
2