আপনি কি Puppet নাকি Puppet Master?
হিউম্যান সাইকোলজি সম্পর্কিত একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে, আপনার সামনে যদি এখনই নিচের দুইটি অপশন দিয়ে বলা হয় এদের মধ্য থেকে যে কোন একটি কাজ বেছে নিয়ে সেটা সম্পন্ন করতে-
-
30 মিনিট মোবাইলে গেমস খেলা বা আপনার প্রিয় ওয়েব সিরিজটির পরবর্তী একটি এপিসোড দেখা।
-
30 মিনিট হাঁটা।
বেশিরভাগ লোকই শারীরিক ব্যায়ামের গুরুত্ব জানার পরও প্রথম অপশনটি কে বেছে নেয়।
একইভাবে আরো একটি প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা যাক, স্কুল কলেজের পরীক্ষা বা এখনো আমরা যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হই, পরীক্ষার মাঝে অনেকদিন গ্যাপ থাকলে শুরুর দিকে পড়তে বসা নিয়ে আমাদের অধিকাংশরই বেগ পেতে হয়। অনেকে আবার আমরা ভাবি আজ থাক আগামী কাল থেকে পড়বো। এমনটি কেন হয়? কে নিয়ন্ত্রন করছে আমাদেরকে? কেন আমরা কোন কাজটি করতে হবে জানা সত্ত্বেও করতে পারছিনা?!
কেন আমরা কোন বিশেষ কাজের প্রতি বেশি সংবেদনশীল?
যেকোনো কাজ করার পূর্বে প্রথমে মস্তিষ্ক একটি সংকেত গ্রহণ করে। সেই সংকেত অনুযায়ী আমরা কাজটি করার আকাঙ্ক্ষা বোধ করি এবং কাজটি করি। এটি একটি থ্রি-স্টেপ প্রসেস। কোন কাজ করার পর আমাদের ভালো লাগার সাপেক্ষে মস্তিষ্কে একটি একটি তথ্য সঞ্চিত থাকে। যাতে পরবর্তীতে যখন পুনরায় কাজটি করা হবে তখন মস্তিষ্ক সেই অনুসারে dopamine ক্ষরণ করতে পারে। আর যে সমস্ত কাজ পুনরায় করার ফলে মস্তিষ্কের dopamine এর ক্ষরণ বেড়ে যায় আমরা সে সমস্ত কাজই বেশি বেশি করার চেষ্টা করি। আর এভাবেই কোন বিশেষ কাজের প্রতি আমরা বেশি সংবেদনশীল হয়ে যাই।
Dopamine কি?
আমাদের শরীরে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে। Dopamine হল মস্তিষ্কে উৎপন্ন তেমনই একটি রাসায়নিক উপাদান যা কোনো কাজে আগ্রহ জাগানো, ঘুম, মানসিক অবস্থা ও মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
এই dopamine কে মস্তিষ্কের রিওয়ার্ডিং সিস্টেম বলা হয়। কোনো কাজে যদি dopamine বেশি ক্ষরণ হয় তবে মস্তিষ্ক সেই কাজ বার বার করতে আমাদেরকে উৎসাহিত করে এবং আমরা সহজাত প্রবৃত্তি হিসেবেই সে কাজটি করে ফেলি। যে কাজগুলো dopamine বেশি ক্ষরণ করে এর মধ্যে আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলোই বেশি থাকে, তবে Dopamine Detox বা Dopamine Fasting এর মাধ্যমে এ সংবেদনশীলতা কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুনঃ
ভার্চুয়াল জগতের নেশা, ডোপামিন এর মায়াজাল
লাইফস্টাইলের ধরন ব্যক্তিগত জীবনের সাফল্য অর্জনে কতটা ভূমিকা রাখে?
ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে হাতে ধরেধরে বিভিন্ন জিনিস শেখানো হয়। কিন্তু কিভাবে কোন অভ্যাস গঠন করতে হয় কিংবা কিভাবে তা ধরে রাখাতে হয় সেটা হয়তো সেভাবে শেখানো হয় না, যেভাবে শেখানোর প্রয়োজন ছিল। যার কারণে আমরা বিভিন্ন অভ্যাস গঠন করতে গিয়ে তা ধরে রাখতে পারিনা, ডিসিপ্লিন আর কনসিসটেন্সি এর অভাবে পরগাছার ন্যায় বিভিন্ন বদ অভ্যাস গড়ে তুলি। এই বদ অভ্যাসগুলি আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট কমফোর্ট জোনে সীমাবদ্ধ করে প্রোডাক্টিভিটি কমিয়ে দেয়।
এটার অবশ্য একটা ব্যাখ্যা রয়েছে, আমাদের মস্তিষ্কের একটা সহজাত প্রবণতা হলো অতীতের সুখকর অনুভূতিগুলোকে বারবার অনুকরণের চেষ্টা করা। এটাকে অনেকে ইনস্ট্যান্ট গ্রাটিফিকেশন বা সাময়িক পরিতৃপ্তির ফাঁদ বলে। বিশেষজ্ঞদের মতে আপনার লাইফস্টাইলের ধরণই বলে দিতে পারে আপনি ব্যক্তিগত জীবনে কতটা সফল হবেন। কারণ আমাদের লাইফ-স্টাইলগুলো মূলত কিছু অভ্যাস বা আসক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
অভ্যাস গঠন ও বদলানোর সূত্রঃ
মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির কারণেই অভ্যাস গড়ে ওঠে। ভালো অভ্যাসের মতোই খারাপ অভ্যাসগুলো আমাদের মধ্যে তৈরি হয়। ইচ্ছে করলেই অভ্যাস পরিহার করা যায় না, কিন্তু চেষ্টা করলে নিজেকে ইতিবাচক উপায়ে বদলে ফেলা সম্ভব। তাহলে চলুন প্রথমে অভ্যাস তৈরির চক্র সম্পর্ক জেনে নিই।
নতুন অভ্যাস তৈরির ক্ষেত্রে চারটি কথা মাথায় রাখা জরুরি:
- অভ্যাসটিকে স্পষ্ট করুন।
- এটিকে আকর্ষণীয় করুন।
- অভ্যাসটি যেন হয় সহজ।
- এটি যেন আপনাকে তৃপ্তি দেয়।
উদাহরণ দিয়ে বললে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। কেউ যদি ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে চায়, তবে তাকে এটি আগে ঠিক করতে হবে যে সে কখন ঘুম থেকে উঠবে। (আগামীকাল ভোরে ঘুম থেকে উঠব—এমনটা না ভেবে আগামীকাল ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠব।)
আবার বদ-অভ্যাস ত্যাগের ক্ষেত্রে মানতে হবে চারটি কথা:
- অভ্যাসটিকে অনাকর্ষণীয় ও কঠিন করে তুলুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কাজটি করতে গিয়ে বারবার কোনো ফিজিক্যাল প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়।
- অন্য কোনো কাজ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত করে রাখা ।
- একটি ডায়েরি মেনে চলতে পারেন। যেখানে আপনি কাজটি কতবার করছেন সেটা লিপিবদ্ধ থাকবে।
- উপযুক্ত বা সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা। উপযুক্ত সময় বলে কিছু নেই যা আছে সেটা হলো কাজটি না করার অজুহাত আর সদিচ্ছার অভাব।
Dopamine Detox:
ড. ক্যামেরন সেপাহ Dopamine detox ধারণার প্রবর্তক ৷ Dopamine detox এর সময়, একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার গুলিকে ট্রিগার করে এমন ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে ডোপামিনের সহনীয় মাত্রাকে কমিয়ে আনে।
Dopamine Detox যেভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে:
Dopamine Detox যে কাজগুলোতে আমাদের অতিরিক্ত ডোপামিন ক্ষরণ হয়, যেমন গান শোনা, ভিডিও গেমস খেলা, পর্নআসক্তি, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি ইত্যাদি যেকোনো আসক্তির প্রতি সংবেদনশীলতা কমিয়ে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে। বিরত থাকতে থাকতে একসময় যখন মস্তিষ্কের ডোপামিন সহ্যের মাত্রা কমে আসবে তখন যে সমস্ত কাজে কম ডোপামিন ক্ষরণ হয় যেমন পড়াশোনা, গল্প লেখা, ছবি আঁকা, শরীরচর্চা করা ইত্যাদি কাজগুলোর প্রতি মস্তিষ্কে আগ্রহ তৈরি হবে ৷ কারণ ঐ কম মাত্রার ডোপামিন তখন মস্তিষ্কের কাছে অনেক বেশি মনে হবে। এর ফলে আপনি আগের থেকেও অনেক বেশী ফোকাসড এবং স্টেবল অনুভব করবেন, সময় অপচয় কমে যাবে। এককথায় আপনি আরও প্রোডাক্টিভ হয়ে উঠবেন। আপনার কাজ করার সময়ও বেড়ে যাবে।
মোঃ গালীব হাসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: Webmd, Your Habits Determine Your Future, Medical News Today