ফিনিশ স্টাডির গবেষণা অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় কোলেস্টেরল বা ডিমের উপস্থিতি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় নাঃ
ইউনিভার্সিটি অফ ইস্টার্ন ফিনলান্ড এর নতুন গবেষণায় দেখা যায় যে দৈনিক খাদ্যতালিকায় পরিমিতরূপে উচ্চ কোলেস্টেরল গ্রহণ বা দিনে একটি ডিম গ্রহণ বাড়তে থাকা স্ট্রোকের ঝুঁকির সাথে যুক্ত নয়। এছাড়াও এর সাথে এপিওই-৪ ফেনোটাইপ এর বাহকের সংযুক্ততাও পাওয়া যায়নি যা কোলেস্টেরল বিপাককে প্রভাবিত করে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত হয়েছে।
পূর্ববর্তী বিভিন্ন গবেষণায় খাবারে কোলেস্টরল বা ডিম গ্রহণ স্ট্রোকের ঝুঁকির সাথে কীরূপে সম্পর্কযুক্ত তা নিয়ে প্রাপ্ত ফলাফলগুলো ছিল পরস্পরবিরোধী।
কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে উচ্চ কোলেস্টরেলের উপস্থিতি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, যেখানে অন্য গবেষণাগুলো বলছে ডিম খাওয়া(যেটা উচ্চ কোলেস্টরলপূর্ণ) স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ মানুষের জন্য খাবারের কোলেস্টরেল তাদের সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রভাবিত করায় খুব ছোট ভূমিকা পালন করে।
তবে এপোলিপোপ্রোটিন ফেনোটাইপ-৪ এর বাহক গুলো কোলেস্টেরল বিপাককে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে, আর তাই সিরাম কোলেস্টেরলের মাত্রায় এই খাদ্যতালিকাগত কোলেস্টেরলের প্রভাব বেশি। ফিনল্যান্ডে বংশগতভাবে এপিওই-৪ এর প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত উচ্চ, যার বহনকারী প্রায় এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা। তবুও খাদ্যে কোলেস্টরেলের উচ্চমাত্রা এবং এই জনগোষ্ঠীর স্ট্রোকের ঝুঁকির সংযুক্ততা সম্পর্কিত গবেষণা তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
কার্ডিওভাসকুলার রোগের কোন বেসলাইন ডায়াগনসিস ছাড়াই 42 থেকে 60 বছর বয়স্ক 1950 জন পুরুষের খাদ্যাভ্যাস ইউনিভার্সিটি অফ ইস্টার্ন ফিনল্যান্ড কুওপিও স্কিমিক হার্ট ডিজিজ রিস্ক ফ্যাক্টর স্টাডি, কেআইএইচডি(KIHD) তে মূল্যায়ন করা হয়েছিলো(১৯৮৪–১৯৮৯)। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১০১৫ জন পুরুষের এপিওই ফেনোটাইপ তথ্য পাওয়া যায় তাদের মধ্যে ৩২% এপিওই-৪ এর চিহ্নিত বাহক ছিলেন। ২১ বছরের ফলো আপ করার সময় ২১৭ জন পুরুষের স্ট্রোক ধরা পড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যের কোলেস্টেরল বা ডিমের শোষণ কোনোটিই স্ট্রোক এর সাথে সংযুক্ত ছিল না এমনকি এপিওই-৪ এর বাহকদের ক্ষেত্রেও নয়।
প্রাপ্ত ফলাফল থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায়, পরিমিত কোলেস্টরেল গ্রহণ বা প্রতিদিন ডিম খাওয়া স্ট্রোক এর সাথে সংযুক্ত নয় এমনকি যাদের জিনগতভাবে সিরাম কোলেস্টেরলের উপর খাদ্যের কোলেস্টেরলের প্রভাব বেশি তাদের ক্ষেত্রেও।
সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রিত গ্রুপে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন খাদ্যে কোলেস্টেরল গ্রহণের মাত্রা ছিল 520 মিলিগ্রাম এবং তারা দিনে গড়ে একটি ডিম গ্রহণ করতেন,
সুতরাং প্রাপ্ত ফলাফল এই লেভেলের নিচে/বাহিরে সাধারণীকরণ বা গড় করা যায়না।
একটি ডিমে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে।
এই গবেষণায় মোট কোলেস্টরলের এক-চতুর্থাংশ ডিম থেকে এসেছে। এছাড়াও গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের যথার্থতাও দুর্বল, কারণ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের আগে থেকে কোন কার্ডিওভাসকুলার রোগ ছিল না এবং অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
অতএব, গবেষণার ফলাফল গুলো যাচাই করা উচিত আরও বৃহত্তর পরিসরে এবং পূর্ব থেকে কার্ডিওভাসকুলার রোগ আছে এমন রোগীদের মধ্যে হতে, যাদের বর্তমানে ডিম এবং কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণে সীমাবদ্ধতা দেওয়া হয়েছে। তাহলে আরো ত্রুটিমুক্ত ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে।