রুপা তুমি কি এক্ষুনি নীল রঙের একটা শাড়ি পড়ে তোমাদের ছাদে উঠে কার্নিশে ধরে নিজের দিকে তাকাবে? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
-ময়ূরাক্ষী -হুমায়ূন আহমেদ
উপরিউক্ত লাইনগুলো আমাদের অনেকেরই জানা। নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, নীল আকাশ কিংবা নীল মহাসাগরের দিকে আপাতদৃষ্টিতে তাকালে নীল রং কে আমাদের বেশ সাধারণই মনে হবে। কিন্তু প্রকৃতির অন্যান্য অংশের দিকে চোখ বুলালেই আমরা বুঝতে পারবো নীল রং আশ্চর্যজনকভাবে দুষ্প্রাপ্য। প্রকৃতির প্রতি 10 টি গাছের মধ্যে একটিরও কম গাছের ফুলের রং নীল থাকে এবং নীল প্রাণী হয়।
কিন্তু নীল রঙ কেন এতটা বিরল? এখন আমাদের আগে জানতে হবে এই রং কিভাবে উৎপন্ন হয়? আর আমরা কিভাবে সেটি দেখি। আমরা রং দেখতে পাই কারণ আমাদের প্রতিটি ৬ থেকে ৭ মিলিয়ন আলো সংবেদনশীল কোষ রয়েছে, যা শঙ্কু নামে পরিচিত। একজন সাধারন দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির চোখে তিন ধরনের শঙ্কু থাকে এবং প্রতিটি শঙ্কুর ধরন আলোর একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। লক্ষ লক্ষ শঙ্কু থেকে তথ্য আমাদের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক সংকেত হিসেবে পৌঁছায় যা আমরা তার দ্বারা প্রতিফলিত সমস্ত ধরনের আলোকে যোগাযোগ করে, যা পরে রঙের বিভিন্ন ছায়া হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
উদ্ভিদের জন্য নীল প্রাকৃতিকভাবে ঘটতে থাকা রঙ্গকগুলোকে মিশ্রিত করে তৈরি হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় লাল রঙ্গক, যাকে বলা হয় অ্যান্থোসায়ানিন, যেটির উপস্থিতি বিভিন্ন অম্লতা দ্বারা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো প্রতিফলিত আলোর সাথে যুক্ত হয়ে বেশ কিছু সুন্দর সৃষ্টি আমাদের উপহার দিয়েছে, যেমনঃ-ডেলফিনামস, মর্নিং গ্লোরি, হাইড্রানজাস, কর্নফ্লাওয়ার।
এবার আসি প্রানীদের আলোচনায়। ব্লু মরফো প্রজাপতির ডানার যদি ভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয় তবে তাদের নীল রঙ অদৃশ্য হয়ে যাবে।-চার্লস প্যাট্রিক ইউইং।
প্রাণীদের অনেক রঙ্গক আসে তারা মূলত যে খাবার খায় তা থেকে। যেমন: ফ্লেমিঙ্গো গোলাপি রঙের হয়, কারণ তাদের প্রিয় খাদ্য চিংড়ি। তেমনি গোল্ডফিশের সোনালী রং তাদের খাবারের মাধ্যমে আসে। কিন্তু উদ্ভিদে যেহেতু সত্যিকারের কোনো নীল রঙ্গক নেই, তাই প্রাণীরা খাদ্যের মাধ্যমে নীল হতে পারে না। রঙ্গক মিশ্রন বা পরিবর্তনের পরিবর্তে আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করে এমন কাঠামো তৈরি করে অনেক প্রাণীর দেহে নীল রঙের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ব্লু মরফো প্রজাপতিকে আমরা নীল রঙ দেখি কারণ তার ডানার শৈলশিরার আকৃতি। এটা এমনভাবে বাঁকানো থাকে যে একমাত্র নীল তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রতিফলিত হয়।
নীল পাখি, ব্লু জে, কিন্তু তাদের এ রঙ সামান্য ভিন্ন প্রক্রিয়ায় লাভ করে। এদের প্রতিটি পালক এমনভাবে আলো বিচ্ছুরণ করে, যাতে নীল ব্যতীত আলোর প্রতিটি তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাতিল হয়ে যায়।
প্রকৃতির একমাত্র ব্যতিক্রম হলো ওব্রিনা অলিভিন প্রজাপতি যা সত্যিকারের নীল রঙ তৈরীর জন্য একমাত্র পরিচিত প্রাণী।
প্রাণীদের জন্য নীল রং বেশ ভালো একটি মনোযোগ আকর্ষণের উপায়। এই রঙ দ্বারা সঙ্গীকে ভালোভাবে নিজের দিকে আকর্ষিত করতে পারে প্রানীরা। আবার পয়জন ডার্ট নামের একধরনের বিষাক্ত ব্যাঙ তাদের উজ্জ্বল নীল দেহ দিয়ে শিকারীদের সতর্ক করে দেয়।
আসলে নীলের সঙ্গে প্রকৃতির বৈচিত্র্যতার শেষ নেই। এই বৈচিত্র্যতা চলতে থাকুক, আমরাও দেখতে থাকি প্রকৃতির অদ্ভুত নতুন নীলাভ রূপ……
নিজস্ব প্রতিবেদক/ অনামিকা রায়
তথ্যসূত্র : The University of Adelaide | Why blue is so rare?