আচ্ছা, আপনি কি কখনো আপনার মস্তিষ্ক এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির গঠন ও তার কর্মক্ষমতা উন্নত করার কোনো উপায় নিয়ে ভেবেছেন? আপনার শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর মতোই মস্তিষ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা আপনার জন্য খুবই জরুরি।
আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো মস্তিষ্ক। কিন্তু আমরা বর্তমানে এমনই এক যুগে বাস করি যেখানে আমাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি এবং নিত্যদিনের কিছু খারাপ অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্ককে বিকৃত করে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অত্যাধুনিক জীবন যাপন করার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের গ্রে-ম্যাটার মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের নিউরন গুলো প্রতিনিয়ত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কিছু খারাপ অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্ককে ধীর করে দিচ্ছে। ফলস্বরুপ, সৃজনশীল কর্মকান্ড থেকে এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
আমরা যদি আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ এবং সুরক্ষিত রাখতে চাই, তাহলে আমাদের উচিত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলো পরির্বতন করা। আমরা ইতিমধ্যে জানি যে অপর্যাপ্ত ঘুম, নিম্নমানের ডায়েট এবং অনিয়মিত ব্যায়াম আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তাই আমাদের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, যেসকল অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর সেসকল অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা, উন্নত মস্তিষ্ক গঠনের উপায় সম্পর্কে জানা। যেমন:
১. অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দূর করা
আপনি হয়তো নিজেকে মাল্টিটাস্কিং এ দুর্দান্ত দাবি করেন। কিন্তু আসলেই কি তাই? আসলে আপনার ধারণা ভুল। নিউরো-সায়েন্সের আর্ল মিয়ার ব্যাখ্যা করেন, মানুষের মস্তিষ্ক মাল্টি টাস্কিং এ ভালোভাবে দক্ষ নয়। অন্যান্য গবেষকরাও বারবার প্রমাণ করেছেন, যেসকল ব্যক্তি নিজেরদেরকে মাল্টিটাস্কিং এ দক্ষ দাবি করেন, তারা আসলে দক্ষ নয়। কারণ, মাল্টিটাস্কিং কর্মদক্ষতা না বাড়িয়ে বরং কর্মদক্ষতা হ্রাস করে দেয়। পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও নিস্তেজ করে দেয়।
২. মুখোমুখি কথোপকথন
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন মাত্র ১o মিনিট মুখোমুখি কথোপকথন স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায় এবং মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।
৩. অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
দীর্ঘদিন অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণের ফলে আমাদের দেহে প্রোটিন এবং পুষ্টি গ্রহণের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলস্বরুপ, আমরা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকি যা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দেয়। তাই আমাদের অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, মস্তিষ্ক শুধুমাত্র গভীর ঘুমের সময় নিজেকে টক্সিন মুক্ত করে বিশুদ্ধ হয়। অপর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের কোষগুলোর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যার ফলে স্মৃতিশক্তি এবং কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়। তাই সকল ব্যক্তির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য।
৫. ধূমপান এড়িয়ে চলা
আচ্ছা, আপনি কি জানেন সিগারেটে উপস্থিত নিকোটিন আপনার মস্তিষ্ককে সংকুচিত করে? দীর্ঘদিন মস্তিষ্কের সংকোচন আলঝাইমার রোগের কারণ হতে পারে। তাই, সবাইকে ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে।
৬. উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
গবেষণায় দেখা যায়, যদি কোনো ব্যক্তি দীর্ঘদিন উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করে তাহলে তার স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমাদের উচিত উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকা।
৭. পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ
আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৮o% পানি। খুব দ্রুত চিন্তা করতে এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়াতে মস্তিষ্কের পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। সুতরাং, একজন মানুষের উচিত সবসময় নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে মানুষের দেহ এবং মস্তিষ্ক উভয়ই ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
পরিশেষে, আমরা বলতে পারি নিজেদেরকে সৃজনশীল ও কর্মক্ষম রাখতে আমাদের মস্তিষ্ক-এর গঠন উন্নত অর্থাৎ সবল করে গড়ে তুলতে হবে। আর তাই, উপরোক্ত উপায়সমূহ মেনে চলা আমাদের জন্য অপরিহার্য। মস্তিষ্ক সুস্থ থাকলেই আমরা সুস্থ থাকব।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: Psychology Today, Pharmi Web