পৃথিবীর কক্ষপথ পাড়ি দেওয়া থেকে শুরু করে লকডাউনের সুরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আমাদের মধ্যে বহুল আলোচিত একজন মানুষ হলেন ইলন মাস্ক। গত মাসে তাঁর টুইটার একাউন্টে তিনি হোয়াটসএপ মেসেজিং অ্যাপের সর্বশেষ গোপনীয়তার নীতি আপডেটের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপ এর পরিবর্তে তিনি ব্যবহারকারীদের এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন সিগন্যাল (Signal) অ্যাপ বেছে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। যদিও সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ তাদের প্রাইভেসি পলিসি চেঞ্জ করছেনা। চলুন জেনে নিই কি এই সিগন্যাল।
টুইটটি তখন টুইটারের সিইও জ্যাক ডর্সি রিটুইট করেছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরই, সিগন্যাল টুইট করে যে তারা নতুন ব্যবহারকারীর ঢেউ সামলাতে কাজ করছে।
ইলন মাস্কের টুইটের সাথে ঘটনাক্রমে বায়োটেকনোলজি সংস্থা সিগন্যাল অ্যাডভান্সের শেয়ার আরও বেড়েছে, যদিও এটি সিগন্যালের সাথে কোনোভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়।
ফেসবুকের পলিসিগুলো নিয়ে মাস্কের উদ্বেগ প্রকাশ এবারই প্রথম না। ২০১৮ সালে, তিনি শুধুমাত্র তার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজটি সরাননি, এর পাশপাশি টেসলা এবং স্পেসএক্স এর ফেসবুক পেইজও সরিয়ে ফেলেন।
হোয়াটসএপ এবং সিগন্যাল, উভয় এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপে এই পর্যন্ত অনেক বাগ (Bug) শনাক্ত হয়েছে, এবং এদের সমাধানও হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে হোয়াটসঅ্যাপ খোলামেলাভাবে নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর ডেটা সংগ্রহ করেছে ফেসবুকের সাথে শেয়ার করার জন্য। হোয়াটসঅ্যাপ সর্বশেষ নীতি পরিবর্তন করা কেবল মাত্র তাদের এই কাজটিকে প্রসারিত করারই নীতি ছিলো।
অন্যদিকে, সিগন্যালের এমন একটি সত্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস রয়েছে, যা কিনা আপনার ডেটা জমা করে এবং যেখানে যেখানে সম্ভব সেখানে সেখানে আপনার ডাটাকে বেনামে ব্যবহার করে।
আপনি যদি মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন সিগন্যাল (Signal) ব্যবহার করতে আগ্রহী হন, তাহলে সিগন্যালের কিছু বিষয় আপনার জানা উচিত।
সিগন্যাল একটি সাধারণ মেসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশন যা আপনারা সাধারণত গুগলের প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের মতো স্টোরগুলোতে পাবেন এবং এটি সাধারণ মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনের মতোই কাজ করে। এডওয়ার্ড স্নোডেনের মতো হাই-প্রোফাইল প্রাইভেসি আইকনেরা বছরের পর বছর ধরে এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে আসছেন।
সিগন্যালের মূল কাজটি হলো এটি আপনার এবং অপর পাশের ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাই করার পরে টেক্সট, ভিডিও, অডিও এবং ছবি এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন (end-to-end encryption) দ্বারা সুরক্ষিত করতে পারে। End-to-end encryption হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ডাটা প্রেরণের সময় কোনো থার্ড পার্টিকে ডেটাগুলো পড়তে বা পর্যবেক্ষণ করতে বাধা দেয়।
আপনি গ্রুপ ভয়েস এবং ভিডিও কলগুলি করতেও এটি ব্যবহার করতে পারেন। সিগন্যালের মূল চাবিকাঠিই হলো এই এনক্রিপশন।
সাধারণ এসএমএস মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলির বিপরীতে, এটি (সিগন্যাল) আপনার বার্তা প্রেরণের আগেই তা সুসজ্জিত করে নেয় এবং যাচাইকৃত প্রাপকের জন্যই কেবল এগুলিকে বোধগম্য করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, আপনার মোবাইল ক্যারিয়ার এবং অন্যান্য স্নুপিং সংস্থা বা অ্যাপ গুলোকে এটি আপনার বার্তাগুলি পড়তে বাধা দেয় (এসব ঘটনা আপনি যা ভাবেন তার চেয়েও বেশি ঘটে)।
যখন গোপনীয়তার বিষয়টি আসে তখন সিগন্যালের অফারটি পরাজিত করা শক্ত। এটি ব্যবহারকারীর ডেটা সংরক্ষণ করে না এবং এর এনক্রিপশন দক্ষতার বাইরেও, এটি আপনাকে অ্যাপ্লিকেশনে নির্দিষ্ট লক, ফাঁকা পপ-আপ বন্ধ, ফেস-ব্লারিং এবং অদৃশ্য বার্তা পাঠানোর কিছু সময় পর তা অদৃশ্য করে দেওয়ার মতো অনস্ক্রিন গোপনীয়তার ফিচারগুলো দেয়। মাঝেমধ্যে কিছু বাগ প্রমাণ করেছে যে এই প্রযুক্তিটিও পুরপুরি বুলেটপ্রুফ না, তবে সিগন্যালের খ্যাতি এবং সামগ্রিক ফলাফল এটিকে ব্যবহারকারীদের পরিচয় সুরক্ষা করার মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর তালিকার শীর্ষে রেখেছে।
বছরের পর বছর ধরে, সিগন্যালের মূল চ্যালেঞ্জ তার প্রযুক্তিটিতে নয় বরং এর বৃহত্তর ব্যবহারকারী গ্রহণের ক্ষেত্রে রয়েছে। একটি এনক্রিপ্ট করা ‘সিগন্যাল’ বার্তা প্রেরণ করার দুর্দান্ত তবে আপনার প্রাপক যদি ‘সিগন্যাল’ ব্যবহার না করে তবে আপনার গোপনীয়তার ফলাফল শূন্য হতে পারে।
ইলন মাস্ক এবং জ্যাক ডর্সিদের মতো সেলেব্রিটিদের সমর্থন এই এপের গ্রাহক সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে, এই অ্যাপ্লিকেশনটি হয়ে উঠছে আরো জনপ্রিয়।
কী বলেন, হয়ে যাবেন নাকি একজন ‘সিগন্যাল’ প্রেরণকারী ?
কায়েস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ cnet
+1
9
+1
6
+1
3
+1
3
+1
2
+1
2
+1
3