ইন্টারনেট অব সেন্স বা আইওএস ভবিতব্য বিশ্বের একটি অন্যতম প্রযুক্তি বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ২০০০ হাজার বছরের ও আগে গ্রিক দার্শনিকেরা মনে করতেন, মানুষ সব সময় একা থাকবে এবং কখনই জানতে পারবে না যে তার অস্তিত্ব অন্য কোথাও রয়েছে। তবে, এই একা থাকা বা মানুষের এই বিচ্ছিন্নতা ছিলো মানুষের অবস্থার একটা অংশ মাত্র, তবে সম্ভবত এটি বেশি সময়ের জন্য ছিলো না।
মানুষের এই এক অপরের জানার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এর ভূমিকা ছিলো অনেক। বর্তমানে দৈনন্দিন আমাদের জীবন ইন্টারনেট ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। আর ২০৩০ সালের মধ্যেই আমরা যে “ইন্টারনেট অব সেন্স” প্রযুক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছি তাও ইন্টারনেটের অংশ।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ৫ জি এবং অটোমেশন দ্বারা তৈরি করা হবে ইন্টারনেট অব সেন্স প্রযুক্তিটি। এরিকসন কনজিউমার ল্যাব এর মতে, ইন্টারনেট অব সেন্স কে অনেকে ৫ জি এর অভিজ্ঞতার পরবর্তী ধাপ বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন যা কিনা অনেক ভিডিও গেইমার এবং অনলাইন ক্রেতারা এর জন্য অপেক্ষা করছেন। তাছাড়া, কনজিউমার ল্যাব তাদের এক সমীক্ষায় দেখতে পায় যে, ভবিষ্যতে যেন দৃষ্টি, শব্দ, স্বাদ, গন্ধ এবং স্পর্শ করার মাধ্যমে প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত হয়ে তা পরিচালনা করতে পারেন এমনটাই আশা করছেন অধিকাংশ ভোক্তারা।
ইন্টারনেট অব সেন্স শব্দটি আসে ইন্টারেন্ট অব থিংস (IOT) শব্দটি থেকে। “ইন্টারনেট অব থিংস” শব্দটি ১৯৯৯ সালে সর্ব প্রথম ব্যবহার করেছিলেন ব্রিটিশ প্রযুক্তির অগ্রদূত কেভিন অ্যাশটন। প্রক্টর এবং গেম্বলে (P&G) কোম্পানিতে কাজ করার সময় সমগ্রবিশ্ব যে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে সংযুক্ত বিষয় টি বোঝাতেই ইন্টারনেট অব থিংস শব্দটি ব্যবহার করেছেন। প্রায় এর ২০ বছর পর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে ইন্টারনেট অব সেন্স শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
কনজিউমার ট্রেন্ডসের প্রতিবেদন অনুসারে, আমাদের ব্রেইনকে ইন্টারনেটের ইন্টারফেস হিসাবে ব্যবহার করা হবে ইন্টারনেট অব সেন্স প্রযুক্তিতে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা শুধু কেবল কমান্ডগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করবে এবং ডিভাইসগুলো অটোমেটিক কাজ করতে শুরু করবে। তাছাড়া, স্মার্টফোন গুলোও টাচ স্ক্রিন ছাড়াই কাজ করবে। সেক্ষেত্রে কিন্তু কী-বোর্ড, মাউস, গেম কন্ট্রোলার সহ অন্যনা ডিজিটাল ডিভাইস গুলোর ব্যবহারের ও সমাপ্তি হতে পারে, এমন টা অনেকেই মনে করেছন।
তাছাড়া প্রায় ৫৯ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন যে, তারা কোনো গন্তব্যের কথা চিন্তা করলেই ভি আর চশমা গুলোতে মানচিত্র এবং রাস্তা সহজেই দেখতে পারবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।
সবচেয়ে অসাধারণ বিষয় হচ্ছে ইন্টারনেট অব সেন্স প্রযুক্তিতে অগমেন্টেড রিয়ালিটি ব্যবহারে মাধ্যমে আমাদের অনেক অকল্পনীয় অ্যাপ্লিকেশন গুলো বাস্তবে রূপ ধারন করবে। যেমন: আপনি কাউকে চেনেন কিন্তু নাম মনে করতে পারছেন না? অথবা তার সাথে আপনার কোথায় দেখা হয়েছিলো তাও বুঝতে পারছেন না?
অগমেন্টেড রিয়ালিটির তৈরি চশমা গুলো তাদের সেই তথ্য গুলো প্রদর্শন করবে আমরা যার সাথে দেখা করছি এবং পূর্বে কোথায় দেখা করেছিলাম ইত্যাদি। তাছারা এ প্রযুক্তির কারনে, আমাদের চিন্তা করা এবং কার্য সংগঠন করা মাঝখানে দূরত্বটাও অনেক কমে যাবে।
এরিকসন কনজিউমার ল্যাব মনে করছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ইন্টারনেট অব সেন্স আমরা উপভোগ করতে পারব।
তাছাড়া এটা সহজেই ধারণা করা যাচ্ছে, এই প্রযুক্তির আমাদের গোপনীয়তা এবং সততা শব্দের নতুন এক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে।
আল আমিন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং