মঙ্গল গ্রহে নাসা দ্বারা প্রেরিত পার্সিভিয়ারেন্স রোভার ৩০ জুলাই ২০২০ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়। রোভারটি মঙ্গল গ্রহের যাত্রার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি পথ অতিক্রম করে ফেলেছে এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে মঙ্গল গ্রহের জিজেরো গহ্বরের ভূমিতে অবতরণ করবে। রোভারটি বিভিন্ন প্রতীক, আদর্শবাণী ও ছবি বহন করছে এবং সিলিকনের তৈরি ছোট ছোট তিনটি চিপ লাগানো হয়েছে যেটিতে প্রায় ১০.৯ মিলিয়ন মানুষের নাম রয়েছে।
পার্সিভিয়ারেন্স রোভার, যেটি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে নির্মিত হয়েছিল এবং তারাই এই মিশনটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। রোভারে আরোহণের বেশিরভাগ অংশ দ্বৈত উদ্দেশ্যে কাজ করবে। চলুন পার্সিভিয়ারেন্স রোভার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
মাস্টক্যাম-জেডঃ
মাস্টক্যাম-জেড হল একটি বহুবিধ ঘনদর্শনমূলক যন্ত্র যা নাসা কর্তৃক পরিকল্পিত মঙ্গল ২০২০ মিশনের সময় পার্সিভিয়ারেন্স রোভারে ব্যবহার করার জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। এই যন্ত্রটির প্রধান তদন্তকারী ছিলেন আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জিম বেল। ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে অবস্থিত ম্যালিন স্পেস সাইন্স সিস্টেমসের বিজ্ঞানীরা যন্ত্রটি তৈরি করেছিল। যন্ত্রটি মঙ্গল গ্রহ হতে সূর্যের অবস্থান এবং আকাশের ধূলিকণা চিত্রগুলিতে আলোকে প্রভাবিত করতে পারে। বিজ্ঞানীরা প্রাচীন হ্রদ, স্রোত এবং অন্যান্য জলের সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যগুলির লক্ষণগুলি খুঁজে পেতে মাস্টক্যাম-জেড ব্যবহার করতে পারেন।
ফাইন্ডিং শেরলকঃ
শেরলক যন্ত্রটির প্রধান তদন্তকারী লুথার বিগল এবং উপ-প্রধান তদন্তকারী হলেন রোহিত ভারতিয়া। এটি একটি স্পেকট্রমিটার ইমেজিং যন্ত্র। ওয়াটসন নামক একটি ক্যামেরা এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে। ওয়াটসন যখনই মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠের ছবি তুলবে এটি সাথে সাথে নাসার ওয়েবসাইটের পার্সিভিয়ারেন্স ইমেজ গ্যালারীতে প্রদর্শিত হবে এবং যে কেউ এই ওয়েবসাইট থেকে ছবি গুলো দেখতে পারবে। খনিজ, জৈব অণু এবং সম্ভাব্য বায়োসিগন্যাচারের সু-স্কেল সনাক্তকরণে শেরলক ব্যবহৃত হবে।
সুপারক্যামঃ
সুপারক্যাম হলো একটি লেজার যন্ত্র। এই লেজারের সাহায্যে মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন পাথর, শিলা এবং মাটিকে বাষ্পে পরিণত করতে পারবে। সুপার ক্যাম যন্ত্রটি আলামস ন্যাশেনাল ল্যাবরেটরি ফরাসি স্পেস এজেন্সি ও স্পেনের ভালাগোলিড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছিল।
প্রায় ১১ মিলিয়ন নামঃ
পার্সিভিয়ারেন্স রোভারে সংযুক্ত তিনটি ছোট স্টেনসিল্ড চিপে প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষের নাম রয়েছে। নাসার ওয়েবসাইটে “Send Your Name to Mars” ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়া প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষের নামগুলোই চিপ তিনটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এর আগে কিউরিওসিটি রোভার ১.২ মিলিয়ন মানুষের নামসহ একটি মাইক্রোচিপ বহন করছে।
কোভিড মেমোরিয়াল অন মার্সঃ
২০২০ বছরটি করোনাভাইরাস মহামারীর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কোভিড-১৯ মহামারীটির প্রভাব স্মরণ করে এবং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে রোভারের বাম পাশে একটি বিশেষ অ্যালোমিনিয়াম প্লেট লাগানো হয়েছে যাতে রয়েছে পৃথিবীর মানচিত্র এবং প্রাচীন গ্রিক প্রতীক যা নিরাময় ও ঔষধের প্রতীক হিসাবে একটি সাপ জড়ানো যা এস্কেলপিয়াসের রড আশ্রিত।
মঙ্গলে নাসার পার্সিভিয়ারেন্স রোভার প্রেরণের একটি মূল উদ্দেশ্য হলো জ্যোতির্জীববিজ্ঞান, এর মধ্যে রয়েছে প্রাচীন অণুজীবগুলোর লক্ষণগুলির সন্ধান করা। রোভারটি মঙ্গল গ্রহের ভূতত্ত্ব এবং অতীত আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করবে এবং এই গ্রহে মানব অনুসন্ধানের পথ সুগম করবে।
মো: মিরাজুল ইসলাম/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: Scitechdaily