জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের সার্বিক নিরাপত্তায় সবসময়ই সোচ্চার ছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ফেসবুকের ইঞ্জিনিয়াররা একটি নতুন মেথড বানালেন যার মাধ্যমে স্প্যাম ছড়ানো, অন্যকে স্ক্যামিং করা বা বিভিন্ন অস্ত্র বা মাদক কেনা ও বিক্রি করার মতো খারাপ কাজগুলো শনাক্ত করতে ও তা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। ফেসবুকের একটি প্যারালাল ভার্সনে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বট এর সাহায্যে ফেসবুক ব্যবহার করা অসৎ ব্যক্তিদের কার্যকলাপ ও চালচলনগুলো সিমুলেট বা ধারণা করা হবে। পরবর্তীতে গবেষকরা এই বটের আচরণগুলো বিশ্লেষণ করে এবং এর উপর গবেষণা করে তা বন্ধ করার জন্য উপায় বের করতে পারবে।
সিমুলেটরটির নাম “WW” (উচ্চারণঃ “ডাব ডাব”)। সিমুলেটরটি ফেসবুকের রিয়েল কোড এর উপর তৈরি। ডাব ডাব বলার পিছনে কারণ হচ্ছে এটি “WWW” (ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ) এর থেকে সংক্ষেপিত একটি রুপ। এ বছরের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি “WW” এর উপর একটি পেপার প্রকাশ করলেও খুব সম্প্রতিই তারা এর ব্যাপারে আরো নতুন সব তথ্য দিয়েছে।
গবেষণাটির মূল নেতৃত্বে আছেন ফেসবুক ইঞ্জিনিয়ার মার্ক হারম্যান এবং প্রতিষ্ঠানটির লন্ডনে অবস্থিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভাগ। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় হারম্যান বলেন, ”ডাব ডাব একটি অতি কার্যকর টুল যা ফেসবুকে বড় পরিসরে ক্ষতিকর বা অসৎ কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারবে।“
তিনি একটি উদাহরণও দেন কিভাবে এই সিমুলেশন ব্যবহার করে স্ক্যামারদের বিরুদ্ধে নতুন একটি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। হারম্যান এই প্রজেক্টিকে শহরের রাস্তার পরিকল্পনার সাথে তুলনা করেছেন যেখানে ব্যস্ত রাস্তাগুলোতে গাড়ির গতি কমানোর চেষ্টা করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রথমে ইঞ্জিনিয়াররা একটি ট্রাফিক ফ্লোর উপর একটি মডেল তৈরি করেন এবং পরে গতি নিরোধকের মতো কিছু কিছু পদ্ধতি অল্প সংখ্যক রাস্তার উপর প্রয়োগ করে দেখেন যে তার প্রভাব কতটুকু রাস্তার উপর।ডাব ডাব সিমুলেশন ফেসবুককে ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ঠিক এরকমই কিছু করতে সাহায্য করবে।
হারম্যান বলছিলেন- “আমরা আমাদের বটস করতে পারে এমন কিছু কার্যপদ্ধতি এবং পর্যবেক্ষণের উপর “গতি নিরোধক” এর মতো কিছু জিনিস প্রয়োগ করবো এবং খুব দ্রুতই জানার চেষ্টা করবো, অসৎ কার্যকলাপ বন্ধ করতে ঠিক কি কি পরিবর্তন আমরা করতে পারি যেন ভাল কাজগুলোর কোনরকম ক্ষতি না হয়। আমরা এটিকে দশ বা শ’খানেক বটের উপর প্রয়োগ করতে পারি যেন বেশি থেকে আরো বেশি সম্ভব ধ্রুবক ভেক্টর খুঁজে পেতে পারি।“
মেশিন লার্নিং এর ক্ষেত্রে, আচরণ বা কার্যকলাপ সিমুলেশন খুব সাধারণ হলেও ডাব ডাব আলাদা কারণ এটি ফেসবুকের রিয়েল ভার্সনের উপর নির্মিত। ফেসবুক তাদের এই পদ্ধতির নাম দিয়েছে, ”ওয়েব বেসড সিমুলেশন”।
হারম্যান জানান, “গতানুগতিক সিমুলেশনে যেখানে সবকিছুই সিমুলেট বা ধারণা করা হয়, ওয়েব বেসড সিমুলেশনে সেখানে পর্যবেক্ষণ ও ক্রিয়াকলাপগুলো হয় শুধুমাত্র বাস্তব অবকাঠামোর উপর যার কারণে এটি আরো বাস্তবধর্মী হয়।“
ডাব ডাব ফেসবুকের জিইউআই (গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস) থেকে সরাসরি এর ফলাফল প্রস্তুত করবে না, বরং এর থেকে প্রাপ্ত সকল তথ্যগুলো নিউমেরিক ডেটা হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখবে।পার্থ্যকটা এমন যে, একদিকে একটি ফুটবল ম্যাচ দেখা (ফেসবুক) আর অন্যদিকে শুধু ওই ম্যাচ এর পরিসংখ্যান দেখা (ডাব ডাব)।
হারম্যান বলেন, ”এ মুহূর্তে আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে বটটিকে আরো প্রশিক্ষণ দেয়া যেন আপাতত ফেসবুকে যা হয় এবং যা আমরা জানি তা ধারণা করে নিতে পারে এটি। কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে আর অনুশীলনের মাধ্যমে এটি আরো অনেক কিছু করতে পারে যা আমরা আগে কখোনোই দেখিনি আর এমন কিছুই আমরা আশা করছি। কারণ আমরা শুধু অসৎ কিছু ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইনা, আমরা এটিকে বন্ধ ও প্রতিরোধ করতেই এ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।“
হারম্যান এর মতে, তাদের টিম বটের মধ্যে অপ্রত্যাশিত কিছু কার্যকলাপ দেখেছে কিন্তু তার ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে চাননি। তিনি কোন স্ক্যামারকে এ ব্যাপারে কোনরকম ক্লু বা ধারণা দিতে চাচ্ছেন না।
বর্তমানে ডাব ডাব টিম, বাস্তব আচরণগুলোর সাথে সিমুলেশনের উপর বিভিন্নরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে যেন রিয়েল লাইফ চেঞ্জগুলো খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়। তবে হারম্যান এর ধারণা প্রজেক্টটির সব কাজ শেষ করে এ বছর শেষেই ফেসবুকের মূল কোডের মধ্যে পরিবর্তন আনা হবে।
তন্ময় দাশ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ দ্যা ভার্জ