নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দ্রুত কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করা হলে মেরু ভাল্লুক শতাব্দীর শেষের দিকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
উত্তর গোলার্ধের বরফ হ্রাসের ফলে ভাল্লুকের মতো মাংসাশী প্রাণি যারা সীল শিকারের জন্য বরফের উপর নির্ভরশীল ছিল তারা ইতিমধ্যেই তাদের বেঁচে থাকার চরম সীমায় পৌঁছে গেছে।
বরফ ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে প্রাণিগুলি দীর্ঘ দূরত্বে বা লোকালয়ে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়, যেখানে তারা খাবার খুঁজে পেতে এবং তাদের বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য লড়াই করে।
দ্রুত বরফ গলার ফলে গ্রীষ্মের মাসগুলিতে খাবারের জন্য চারণ করা তাদের পক্ষে ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই তাদের বেঁচে থাকার জন্য দেহের সঞ্চিত চর্বির উপর অধিক নির্ভর করতে হচ্ছে। যদিও মেরু অঞ্চলের ভাল্লুক কয়েক মাস না খেয়েও নিজের দেহের সঞ্চিত চর্বির সাহায্যে বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু, গ্রীন হাউজ গ্যাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মেরু অঞ্চলের বরফ গলা শুরু হয়ে যায় ফলস্বরূপ তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান চর্বি সঞ্চয় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন) ইতিমধ্যেই মেরু অঞ্চলের ভাল্লুককে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণিদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনই এর প্রধান কারন।
কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. পিটার মোলনারের মতে, মেরু ভাল্লুক “জলবায়ু পরিবর্তনের পোষ্টার চাইল্ড” এবং তারা ইতিমধ্যে বিশ্বের শীর্ষে বসে আছে, বরফ চলে গেলে তাদের যাওয়ার আর কোনও জায়গা থাকবে না।
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন জার্নালে প্রকাশিত মেরু ভাল্লুকের উপর করা এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, পৃথিবীতে প্রায় ২৫ হাজার মেরু ভাল্লুক রয়েছে যাদের মোট ১৯ টি উপ-প্রজাতিতে ভাগ করা যায়। এদের মধ্যে ১৩ টি উপ-প্রজাতি যারা মোট সংখ্যার ৮০ শতাংশই আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্তান্তে অবস্থান করছে।
সমীক্ষায় আরো বলা হয় যে, বরফ গলার ফলে মেরু ভাল্লুক তাদের খাবার ও আবাসস্থল হারানোর সাথে সাথে মা ভাল্লুকরা শাবকদের লালন-পালনের জন্য দুগ্ধ উৎপাদন করতে ব্যর্থ হবে এবং নিজেদের প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে যা তাদের বিলুপ্তির হার আরো তরান্বিত করবে।
দ্রুত গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের হার নিয়ন্ত্রন করা না হলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে পৃথিবীর সিংহভাগ প্রাণিই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে ।
তাহমিদ শিহাব/নিজস্ব প্রতিবেদক