যদি মঙ্গল গ্রহে আমাদের বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা থাকে, তবে আমাদের হয়তো মানুষ থেকে সামান্য পরিবর্তিত হয়েই সেখানে যেতে হতে পারে আর এদিকেই ইঙ্গিত করছেন বিজ্ঞানীরা।
মঙ্গলে মানব মিশন, যেটা নাসা আশা করছে ২০৩০ সাল নাগাদ শুরু করতে পারবে, সেটা আমাদের নভোচারীদের জন্য কঠিন হবে। তারা সেখানে মুখোমুখি হবেন অতি উচ্চমাত্রার রেডিয়েশনের, তাদের সাথে থাকবে একেবারেই নগণ্য পরিমাণ মধ্যাকর্ষন যা আস্তে আস্তে তাদের হাড় ক্ষয় করে দেবে এবং আরো নানা রকম পরিবেশগত প্রতিকূলতা যা তারা প্রায় বেশ কিছু বছর ধরে অনুভব করবেন। কিন্তু এরপরেও, আমাদের ক্রু রা বলা যায় প্রায় সুস্থ অবস্থায়ই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন, এই কথা জানিয়েছেন এজেন্সিটির কর্তারা।
কিন্তু গল্পের ধরণটা একটু ভিন্ন হবে তাদের জন্য যারা ঠিক করবেন মঙ্গলে স্থায়ী ভাবে থাকার। তাও, যদি আমরা আমাদের এই প্রিয় গ্রহকে পিছনে ফেলে নতুন গ্রহের (মঙ্গল বা অন্য কোন গ্রহ) এর উদ্দেশ্যে স্থায়ী ভাবে বাস করতে চাই, তাহলে হয়তো আমাদের ব্লু প্রিন্টেই সামান্য ঘষামাজা করা লাগবে।
আরও পড়ুনঃ ১। ৪৪.২ টেরাবাইট পার সেকেন্ড; ইন্টারনেট স্পিডে নতুন রেকর্ড ২। প্রাণধারণের উপযোগী পৃথিবীর মতো নতুন গ্রহ আবিষ্কার, মিলবে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব? |
“জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে যদি আমরা মঙ্গল গ্রহে বসবাস, বাচ্চা প্রতিপালন এবং আমাদের জীবনযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এভাবেই প্রযুক্তিগুলো অতিপ্রয়োজনীয় এবং অত্যাধিক সংবেদনশীল হয়ে পড়বে,” বলেন বিজ্ঞানী ক্যান্ডা লিঞ্চ যিনি হাউসটনে লুনার এন্ড প্লেনেটারি ইন্সটিটিউটে এস্ট্রোবায়োলজিস্ট এবং জিওমাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।
“নাসা এবং অন্যান্য স্পেস এজেন্সিগুলো ইতোমধ্যে তাদের নভোচারীদের রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। এর ভেতর আছে স্পেসশিপ গুলিকে যথাযথ ভাবে আবৃত করা, আর নভোচারীদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে নানা রকম ঔষধের সাহায্য নেওয়া। তাই, এটা যে খুব বড় একটা তাত্ত্বিক সাফল্য তাও বলা যাচ্ছে না। তাছাড়াও, এই এজেন্সি থেকে নেওয়া পদক্ষেপগুলো যে ঝুঁকি কমায় সেটা আগেই প্রমাণিত,” বিজ্ঞানী মেসন বলেন।
“এছাড়াও আমরা নৈতিক দিক থেকেও আবদ্ধ, নয় কি? তাও, এটা যদি খুব লম্বা কোন মিশন হয় তবে হয়তো অন্য কিছু করা হবে যা আমরা এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারছি না। টার্ডিগ্রেড এবং Extremophile microbes যেমন অতি বিকিরণ সহ্যকারী, Deinococcus radiodurans প্রাকৃতিক ভাবে কিছু অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী, এদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।” বিজ্ঞানী মেসন বর্তমানে নাসার নভোচারী স্কট ক্যালি এর ব্যাপারটি স্টাডি করছেন। স্কট ক্যালি ২০১৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মহাকাশ মিশনে ছিলেন।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অন্তত আমাদের এই সাহায্য করবে যে, আমাদের ইউরোপায় নভোচারীদের পাঠানোর সক্ষমতা আছে। ইউরোপা হলো জীবন বিকাশের জন্য পৃথিবীর পর সৌরজগতের সবচেয়ে উত্তম জায়গা। তবে বিজ্ঞানী লিঞ্চ-এর মতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শুধু নভোচারী বা কলোনিস্ট দের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকবে এমন নয়।
বর্তমানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপক উন্নতির ফলে তৈরি হয়েছে ডিজাইনার মাইক্রোব। এরা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে অনেক জটিল জিনিস ভেঙ্গে মানুষের ব্যবহার উপযোগী বস্তুতে পরিণত করতে পারে। কিছু বিজ্ঞানীর মতমত হল, মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠাবার আগে এই মাইক্রোব ব্যবহার করে অন্তত একটা সহনশীল পরিবেশ তৈরি করা। দেখা যাক সামনে কি হয়…
ঋভু/ নিজস্ব প্রতিবেদক