বাচ্চাদের লালন-পালন করা খুবই কঠিনই বটে। তারা এত ছোট আর নিষ্পাপ যে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তবুও তাদের মন বোঝা অনেক কষ্টকর। বাচ্চা কেন কাঁদছে? তারা ঘুমাচ্ছে না কেন? গন্ধটা কিসের (!)?
এমন প্রশ্ন সব সময় বাবা-মার মনে সবসমএই উঁকি দেয়। তাদের জন্যে আছে এক বিশাল সুখবর। বিজ্ঞানীরা খুব শীঘ্রই বাচ্চাদের ছোট্ট মাথায় কি চলছে তা বোঝার উপায় বের করতে চলেছেন।
ছোট বাচ্চাদের জন্য তাদের আশেপাশের জগতের সাথে যোগাযোগ করার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো কান্না করা। কান্নার মাধ্যমে তারা তাদের প্রয়োজন প্রকাশ করে আর বাবা মার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাই বাবা মা-রা তাদের কান্নার কারণ জানতে চায়। আর বিজ্ঞানীরা সেই প্রযুক্তি আবিষ্কারের কাছাকাছি রয়েছেন যেটা ঠিক এই কাজটা করতে পারে। IEEE/CAA Journal of Automatica Sinica (http://www.ieee-jas.org/article/doi/10.1109/JAS.2019.1911435?viewType=HTML&pageType=en) এ গবেষকরা প্রকাশ করেছেন কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বাচ্চাদের কান্না বুঝতে কাজে লাগানো যায়।
কোন বিদেশী ভাষা অনুবাদের জন্য যেমন দুই ভাষায় পারদর্শী অনুবাদককে দরকার হয় তেমনি গবেষকরাও বাচ্চাদের কান্না বুঝার জন্য নবজাতক বাচ্চাদের পরিচর্যা করা নার্সদের সহায়তা নিয়েছিলেন। গবেষকরা মাইক্রোফোনের সাহায্যে তিন থেকে ছয় মাস বয়সী বাচ্চাদের ৪৮ টি কান্না রেকর্ড করেন। এরপর নার্সরা তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে কান্নাগুলোর কারণ নিরূপণ করার চেষ্টা করেন।
যদিও প্রতিটি বাচ্চার কান্নার শব্দ আলাদা, তবে স্যাম্পলগুলোর মধ্যে কিছু প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায়। যেমন ক্ষুধা লাগলে বাচ্চাদের কান্নার শব্দ হয় ‘নেহ’ এর মত। ‘ওয়াহ’ দ্বারা বোঝায় বাচ্চার ঘুম আসছে। আবার ‘হেহ’ দিয়ে প্রয়োজন বোঝায়।
গবেষক দল পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্যাম্পলগুলোকে ভাগ করেন:
১. মনোযোগ আকর্ষণ,
২. ডায়াপার পরিবর্তন করতে চাওয়া,
৩. ক্ষুধা লাগা,
৪. ঘুম আসা,
৫. অস্বস্তিতে ভোগা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম চার ধরনের কান্না স্বাভাবিক হলেও ৫ম ধরণের কান্নাটি সহজাত নয় কারণ আঘাত, গ্যাস হওয়া বা অন্য কোন কারণে ব্যথা পেলে শিশুরা এরকম কান্না করতে পারে।
অ্যালগরিদম এর সাহায্যে ৪৮টি রেকর্ড এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং প্যাটার্নগুলো চিহ্নিত করা হয়। এরপর ডেটাগুলোর সাহায্যে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম কান্নার মাঝে পার্থক্য তৈরির চেষ্টা করা হয়।
এখন পর্যন্ত সিস্টেমটি ৭৬% সফলতার সাথে কাজ করতে পারে।
এখন পর্যন্ত শুধু পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হলেও ভবিষ্যতে গবেষকরা আরও নিখুঁতভাবে বাচ্চাদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করছেন। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশু চিকিৎসকরাও লাভবান হতে পারেন। ভবিষ্যতে হয়তো বাচ্চারা কাঁদলে বাবা-মা রা মোবাইল নিয়ে বসে যাবেন তাদের কান্নার কারণ বোঝার জন্য।
আপাতত এজন্যে আপনাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে।