একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের প্রতিটি কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্নিহিত। এরই অংশ হিসেবে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যেসব শিক্ষার্থীরা দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা কিংবা তার অধিক সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করে তাদের মুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ৪৩% বেড়ে যায়। এছাড়া আরও কিছু অভ্যাসের কারণে এদের মাঝে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মোবাইল ফোন সহজলভ্যতা, অসংখ্য পরিসেবা, তথ্য ও বিনোদনের উৎস হিসেবে নিঃসন্দেহে আকর্ষনীয়। তবে সকলের উচিৎ মোবাইল ফোনকে আমাদের আচরণ ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ব্যবহার করা।
কলম্বিয়ার বারানকুইলার সিমেন বলিভার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের কার্ডিয়াক পালমোনারি এবং ভাস্কুলার পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ মিরারি ম্যান্টিলা-মরন বলেছেন,” স্মার্টফোনের সামনে খুব বেশি সময় ব্যয় করা অলস আচরণের সুযোগ দেয় , শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সময়কে হ্রাস করে,
যা অকাল মৃত্যু, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার, অ্যাস্টিওআর্টিকুলার অস্বস্তি এবং পেশীবহুল রোগগুলির ঝুঁকি বাড়ায়।”
গবেষকরা জুন থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ এর মধ্যে সিমেন বলিভার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের ১০৬০ জন শিক্ষার্থীর উপর গবেষণা করেছেন যেখানে ছেলে ও মেয়ে ছিলো যথাক্রমে ৭০০ ও ৩৬০ জন। সকলের গড় বয়স ছিল ১৯-২০ এর মধ্যে।
একটি নির্দিষ্ট সময় পর দেখা যায় ৩৬.১% ছেলের ওজন বেড়ে গিয়েছে এবং ৪২.৬% ছেলের অস্বাভাবিক স্থূল হয়ে গিয়েছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ওজন বেড়েছিল ৬৩.৯% এবং স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ৫৭.৪%।
গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে যদি কেউ কোনও স্মার্টফোন দিনে পাঁচ বা ততোধিক ঘন্টা ব্যবহার করে তবে স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে যায় ৪৩ শতাংশ, কারণ অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বেশি পরিমাণে শর্করাযুক্ত পানীয়, ফাস্টফুড, মিষ্টি, নাস্তা পান করছিলো যা তাদের স্বাভাবিক খাবারের দ্বিগুণ ছিল এবং তাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ হ্রাস পেয়েছিল।
শিক্ষার্থীদের মাঝে যারা দিনে নূন্যতম ৫ ঘন্টা মোবাইল ব্যবহার করেছে তাদের মধ্যে ২৬ শতাংশের ওজন অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল।
এই গবেষণার ফলাফল আমাদের শারীরিক স্থুলতার অন্যতম প্রধান কারণ এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির ব্যাপারে অবহিত করে। ম্যান্টিলা-মরন আরো বলেন “যে ব্যক্তি টেকনোলজি বিশেষ করে মোবাইল ফোন যত বেশি সময় ধরে ব্যবহার করবে তার স্থূলতার বিকাশও তত দ্রুত সংঘটিত হবে।”