এ বছরের ডেঙ্গু আরো শক্তিশালী। টেস্ট করানোর আগে বোঝা যাচ্ছে না ডেঙ্গুর উপসর্গ। স্বাভাবিক অবস্থার কিছুটা বেশি তাপমাত্রার জ্বরে আক্রান্ত অনেকের শরীরে ধরা পড়ছে ডেঙ্গুর জীবাণু।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরে দৃশ্যমান উপসর্গ দেখা যাওয়ার আগেই অনেক ডেঙ্গু রোগী শরীরের অভ্যন্তরীণ নানা জটিলতায় পড়ছে। ডেঙ্গুর উপসর্গ হিসেবে এতদিন জেনে আসা উপসর্গগুলো ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পরও রোগীটির চিকিৎসাসেবা শুরু করার পর্যায় ও ডেঙ্গুর ধরন নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন অনেক চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,সিসিডি এর পরিচালক বলেন,” এবারে ডেঙ্গুর যে নতুন পরিবর্তিত রূপ দেখা দিয়েছে সেটা আমরা টের পেয়েছিলাম গত বছর থেকেই। সে অনুসারে আমরা পুরনো গাইডলাইন আপডেটের কাজ শুরু করি।
তা ওয়েবসাইট, ই-মেইলের মাধ্যমে ঢাকাসহ বড় বড় সব জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের কাছে পাঠিয়ে দিই।
সেটা ফলো করার জন্যও বলা হয়। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি আমরা এ বছরের পরিস্থিতি দেখে মাত্র গত সপ্তাহেই আরেকটি আপডেটেড পকেট গাইডলাইন করেছি, যা এখনো আপডেট চলছে।”
নতুন উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-
-সচরাচর টানা পাঁচ–ছয় দিন জ্বর থাকে। কিন্তু এবার অপেক্ষাকৃত কম সময় ধরে জ্বরের পরই হঠাৎ ক্রিটিক্যাল ফেজে মোড় নিচ্ছে।
– র্যাশ বা গায়ে ব্যথার পরিবর্তে কাশি, পাতলা পায়খানা, বমির মতো নতুন ধরনের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
-দ্রুত এসজিপিটি ও ক্রিয়েটিনিন বাড়তে থাকা, কারও কারও লাইপেজ বেড়ে যাওয়া।
-মাল্টি অর্গান ফেইলিউর বা বিভিন্ন অঙ্গে আঘাত হানা (যেমন কিডনি ফেইলিউর, যকৃতের সমস্যা, মায়োকার্ডাইটিস), বুক ও পেটে পানি জমার মতো জটিলতা।
-অনেকের ডেঙ্গু হওয়া সত্ত্বেও রক্তে ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন নেগেটিভ থেকে যাওয়া।
-এ ধরনের নতুন বিশেষত্ব নিয়ে দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গু। তৃতীয় বা চতুর্থবারের মতো আক্রান্ত হওয়ার কারণেই তীব্রতার এ মাত্রা। তাই এ সময় জ্বর হলেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
গতানুগতিক লক্ষণের থেকে এবারের লক্ষণগুলো ব্যতিক্রম বলেই জানালেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ শফী আহমেদ। তিনি বলেন, কম তাপমাত্রায় জ্বরে আক্রান্ত হয়েও অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। উপসর্গগুলো অনেক অদৃশ্যমান রয়ে যাচ্ছে। আগে ডেঙ্গুর লক্ষণ ছিল জ্বর আর মাথাব্যথা। চোখের পেছনে ব্যথা হতো, গায়ে র্যাশ দেখা দিত। তবে এবারের লক্ষণগুলো অন্যরকম। এবারে কারও তীব্র পেটব্যথা হচ্ছে,
কারও হার্টের সমস্যা বেড়েছে। কারও ব্রেনে এফেক্ট করছে, লিভার বড় হয়ে যাচ্ছে বা পানি জমে যাচ্ছে। অন্য বছরের চাইতে এবারে এই জটিলতাগুলো অনেক। তাই অভিভাবকরা বুঝে ওঠার আগেই অনেকসময় ডেঙ্গু আক্রান্ত বাচ্চাগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবার ডেঙ্গুর উপসর্গ ও আক্রমণ করার ধরন পাল্টে গেছে বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ শফী আহমেদ।
মানুষের শরীরে আদর্শ অণুচক্রিকার পরিমাণ হলো প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে ১.৫ লাখ থেকে ৪.৫ লাখ।ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের শরীরে রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ প্রতি মাইক্রোলিটারে ১ লাখের নিচে নেমে আসে।
করণীয় :
১. পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিন।
২. প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খান।
৩. পর্যাপ্ত শাক–সবজি ও ফলমূল খান।
৪. এলার্জিক মেডিসিন বা পেইনকিলার গ্রহণ করবেন না।
৫. খাবারের জন্য পুষ্টিবিদ এর পরামর্শ নিন।
৬. চিকিৎসাসেবায় পরামর্শ নিন একজন বিশেষজ্ঞের।
-জমে থাকা খোলা পাত্রের পানিতে মশকী ডিম পাড়ে। পোষা প্রাণির খাবার পাত্র, পানির পাত্র, ফুল গাছের টব, নারকেলের মালা ইত্যাদিতে পানি জমে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার রাখবেন।
-দিন ও রাতে আলোতেও এরা কামড়ায়। তাই দিনের বেলাতেও মশারী ব্যবহার করুন।
-আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে ভয়ের কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চললে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায়।