চিকিৎসাবিজ্ঞানে গবেষকদের মতে, ফুসফুস এর ক্যান্সার এর প্রথম লক্ষণ হিসেবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়া খুবই অস্বাভাবিক একটি বিষয়। সচরাচর কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গে টিউমার বা কোষ পুঞ্জের অস্বাভাবিকতার কারণে ক্যান্সার হয়। যদি অনির্ণীত ফুসফুস ক্যান্সার এর প্রথম লক্ষণ হিসেবে কোনো এক চোখে ক্ষত দেখা যায়, এটি মোটেও সাধারণ ঘটনা নয়! এটি বিরল ক্ষেত্রে দেখা যায়।
এমন একটি বিরল ঘটনা ঘটেছিল ৩২ বছর বয়সী এক ইন্ডিয়ান মহিলার সাথে। মহিলাটি প্রথম তার ডান চোখে দৃষ্টিশক্তি হারায় এবং বাম চোখ স্বাভাবিক ছিল। ২০ দিন পর্যন্ত বাম চোখে স্বাভাবিকভাবেই দেখতে পারছিল। সে সুস্থ ছিল, কোনো অন্যান্য লক্ষণ ছিল না, এমনকি ধূমপানের কোনো ইতিহাসও ছিল না (যেটার কারণেই মূলত ফুসফুস ক্যান্সার অধিকতর দায়ী)। তারপর এ আকস্মিক ঘটনাটি ডাক্তারের নজরে পড়ে।
যাইহোক, পরবর্তীতে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরে, ডাক্তাররা দেখতে পান যে, তার ডান চোখের পিছনের দিকে কিছু বড়, সাদাটে-হলুদাভ ক্ষত দেখা যাচ্ছে। চোখের প্রধান আলোক সংবেদনশীল অংশ রেটিনার নিচে তরলও জমা হয়। যার ফলে রেটিনা চোখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার বাম চোখে একই রকম কিছু ছোট ছোট ক্ষত দেখা যায়, কিন্তু রেটিনা এখনও অক্ষত আছে।
এসব লক্ষণের পিছনের কারণ কি তা নির্ধারণ করতে ডাক্তাররা মহিলার রক্তও পরীক্ষা করেন। তারা দেখতে পান যে, রক্তে ভাইরাসের কোনো সংক্রমণ নেই বা রক্ত সম্পর্কিত কোনো ডিসঅর্ডার নেই। কারণ তার লোহিত রক্তকণিকা এবং রোগ প্রতিরোধক কোষের সংখ্যা স্বাভাবিক রয়েছে। তার হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) সংক্রমণ বা অটোইমিউন জনিত কোনো রোগ নেই। এ দুই সমস্যা মানুষের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস করে। তাহলে এর পিছনে কারণ কি সেটা এই পর্যন্ত অজানাই থেকে যায়। কিন্তু…
অবশেষে, বুকের এক্সরে এবং পুরো শরীর স্ক্যানের পর কি কারণে এমনটা হচ্ছে তা খুঁজে পাওয়া যায়। মহিলাটির ডান ফুসফুসের নীচের অংশে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ক্যান্সারযুক্ত টিস্যু বা টিউমার পাওয়া যায় । এই টিউমারটি কোরয়েড নামক চোখের অংশ সহ অন্যান্য একাধিক অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
যদি ক্যান্সার কোনো একটি নির্দিষ্ট অংশে বিকশিত হয়, তারপর শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তাকে মেটাস্ট্যাটিক ক্যান্সার (metastatic cancer) বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোখে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার কোরয়েডে জমা হতে থাকে। চোখে ছড়িয়ে পড়া টিউমার ফুসফুসের ক্যান্সারে খুব কমই ঘটে। ক্যান্সার কোষগুলোর মাত্র 0.1% থেকে 7% চোখে স্থানান্তরিত হয়।
হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে চোখের পরীক্ষার সময়, ডাক্তাররা নির্ধারণ করেন যে, তার চোখ সুস্থ দেখাচ্ছে। চোখগুলো সমস্যা সংক্রান্ত বা লালচে দেখাচ্ছে না এবং চোখের গঠন যেমন- লেন্স, পিউপিল, আইরিশ, চোখের রঙিন অংশসহ সব ঠিকঠাক আছে। কোনো লক্ষণীয় অস্বাভাবিকতা দেখা যায় নি।
ফুসফুস ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ হিসেবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া খুবই দুর্লভ। এখন পর্যন্ত, চিকিৎসা শাস্ত্রে এই ধরনের প্রায় ৬০ টি কেস বর্ণনা করা হয়েছে। উক্ত মহিলার কেসটি আরও বেশি বিরল, একদম নেই বললেই চলে। কারণ তিনি ধূমপান করেননি কেননা বেশিরভাগ কেসে ফুসফুস ক্যান্সার হয় ধূমপানের ফলে।
যে ডাক্তাররা মহিলাটির চিকিৎসা করেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, তার কেসটি একজন অধূমপায়ী মহিলার প্রথম উদাহরণ হতে পারে, যার ফুসফুস ক্যান্সার হয়েছে এবং প্রথম লক্ষণ হলো দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা।
১৭ এপ্রিল, ২০২৪-এ রেডিওলজি কেস রিপোর্ট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘সঞ্জয় গান্ধী পোস্টগ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স’-এর ড. অলোক প্রতাপ সিং জানান,
“মহিলাটির সম্ভবত ফুসফুস ক্যান্সারের একটি আলাদা ধরণ রয়েছে যা মেটাস্ট্যাসিসের লক্ষণ সৃষ্টি না করেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
ক্যান্সার ধরা পড়ার পরে, মহিলাটিকে চিকিৎসার জন্য একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করা হয়েছিল; উক্ত কেস রিপোর্টে মহিলাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানানো হয় নি। এই আলাদা ধরনের ফুসফুস ক্যান্সার যতদ্রুত সম্ভব নির্ণয় করা এবং অন্যান্য লোকের মধ্যে যদি এমন লক্ষণ পাওয়া যায় তার চিকিৎসার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন, ডাক্তাররা প্রতিবেদনে লিখেছেন।
রিয়াজুল ইসলাম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: লাইভ সাইন্স , সাইন্স ডিরেক্ট , দা সান