বর্তমান প্রেক্ষাপটে আত্মহত্যা একটি অতি সাধারণ ঘটনা। প্রায়ই বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আত্মহত্যার নিউজ শোনা যায়। কিন্তু আত্মহত্যা প্রতিরোধের জন্য সর্বোপরি কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা ছিলো না। ফলে দিনদিন এর মাত্রা বেড়েই যাচ্ছিলো।
উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলা যায়। গত এক প্রজন্ম ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর ১,০০,০০০ আমেরিকান মধ্যে ১৪.২% আত্মহত্যায় প্রাণ হারান। যা মৃত্যুর ১১ তম প্রধান কারণ।
এই সমস্যা সমাধানে একদল গবেষক বহুদিন যাবত গবেষণা করে যাচ্ছিলেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং মনোবল এনে দেয় মানবসভ্যতার ইতিহাসের এক বিষ্ময়কর মাইলফলক। ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার (VUMC) VSAIL আবিষ্কার করে।
VSAIL কী?
Vanderbilt Suicide Attempt And Ideation Likelihood হলো একটি এআই মডেল। যা রোগীর ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেকর্ড পর্যালোচনা করে পরবর্তী ৩০ দিনে তার আত্মহত্যার ঝুঁকি আছে কিনা তা নির্ধারণ করে থাকে। VSAIL দুটি পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এই কাজটি সম্পূর্ণ করে থাকে। একটি হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় পপ-আপ সিস্টেমের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ অন্যটি হচ্ছে ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ডে তথ্য প্রর্দশন।
ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার (VUMC) এর মেডিসিন ও সাইকিয়াট্রির সহযোগী অধ্যাপক ড. কলিন ওয়ালছ বলেন,
“আত্মহত্যা করা অধিকাংশ ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্ববর্তী সময়ে মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টের সহায়তা নিয়ে থাকে। তবে সবসময় যে তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য, সেটা ঠিক নয়।”
গবেষণাতে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৭৭% আত্মহত্যা করা ব্যক্তি আত্মহত্যা করার আগে মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টের সাথে যোগাযোগ করেছিল।
বিষয়টি বিবেচনা করে ড. কলিন এবং তার দল গবেষণাটি তিনটি নিউরোলজি ক্লিনিকে নিয়মিত আসা রোগীদের উপর করেছিলেন। যেখানে দেখা যায়, পপ-আপ এলার্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ৪২% পর্যন্ত এলার্ট পাওয়া যায় এবং ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেকর্ডের মাধ্যমে তা প্রায় ৪% এর মতো। VSAIL এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা এই উচ্চ ঝুকিপূর্ণ রোগীদের প্রতি ২৩ জনের ১ জন পরবর্তীতে আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কথা স্বীকারও করেছিলেন।
গবেষণাটি নিউরোলজি ক্লিনিকে করার পিছনে কারণ ছিলো যে, নির্দিষ্ট কিছু মানসিক অবস্থার সঙ্গে আত্মহত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আশা করা যায়, VSAIL নামক এই প্রযুক্তিটির উন্নতি সাধন এবং সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আত্মহত্যার মাত্রা অনেকাংশেই কমে আসবে।
সজিবুল আলম ভূইয়া / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: মেডিকেল এক্সপ্রেস, জামানেটওয়ার্ক.কম