দাবি (Claim)
সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “পবিত্র আল-কুরআনে বর্ণিত যাক্কুম ফলের ছবি” দাবিতে বেশকিছু পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। একই ধরনের ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন: এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্ট (Fact)
‘Team Science Bee’ এর অনুসন্ধানে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডে থাকা ছবিগুলো যাক্কুম ফলের নয় বরং স্ন্যাপড্রাগন গাছের শুকনো Seed Pod/ বীজশুঁটিকে যাক্কুম ফল দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
যাচাই পদ্ধতি এবং ফলাফল
প্রাথমিকভাবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত ফটোকার্ডে থাকা ছবিগুলো সম্পর্কে বিস্তর অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘National Wildlife Federation’ এর ওয়েবসাইট হতে ভাইরাল হওয়া একটি ছবির মূল উৎস খুঁজে পায় আমাদের ফ্যাক্ট-চেক টিম।
উক্ত ওয়েবসাইট হতে জানা যায়, ফটোগ্রাফার Karl Zemlin এর তোলা এই ছবিটি “National Wildlife’s 2018 Photo Contest Honorable Mentions”-এ তালিকাভুক্ত হয় এবং ‘Landscapes & Plants’ ক্যাটেগরিতে তালিকাভুক্ত হওয়া এই ছবিটি মূলত স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজশুঁটি বা ‘Seed Pod’ এর।
তাছাড়া একইভাবে ফটো শেয়ারিং ওয়েবসাইট Flickr হতেও ভাইরাল হওয়া ছবিটির ফটোগ্রাফার এবং ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। উক্ত ওয়েবসাইটে ফটোগ্রাফার উল্লেখ করেন যে, ছবিটি ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে ধারণ করা হয় এবং একই সাথে ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়।
একইভাবে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডে থাকা ডান পাশের ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ফটো শেয়ারিং ওয়েবসাইট Flickr হতে জানা যায়, স্ন্যাপড্রাগন সিড পডের এই ছবিটি kath_bar নামক একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা হয়। উক্ত ওয়েবসাইটে ফটোগ্রাফার উল্লেখ করেন যে, ছবিটি ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে ক্যামেরায় ধারণ করা হয় এবং ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয় ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে।
অর্থাৎ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডে সংযুক্ত দুটি ছবিরই মূল উৎস খুঁজে পাওয়া যায় এবং উভয় ছবির চিত্রগ্রাহকরাই এগুলোকে স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজশুঁটি বা ‘Seed Pod’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
‘বীজশুঁটি’ মূলত কী?
Seed Pod বা বীজশুঁটি হলো উদ্ভিদের বীজ রাখার একটি বিশেষ অংশ বা খোল। এটি অনেক ক্ষেত্রে ফলের ন্যায় কাজ করে, যার ভেতরে বীজ থাকে। যখন পডটি পরিপক্ব হয়, তখন এটি ফেটে যায় বা খুলে যায় এবং বীজ বাইরে উন্মুক্ত হয় বা ছড়িয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ: শিম এবং মটর গাছের শুঁটি হলো সীড পড, যা ভেতরে বীজ বহন করে।
স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজশুঁটি সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ‘Gardening Know How’ ওয়েবসাইট কর্তৃক ‘Snapdragon Seed Heads: Tips For Snapdragon Seed Collecting’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল খুঁজে পায় আমাদের ফ্যাক্ট-চেক টিম।
উক্ত আর্টিকেল হতে জানা যায়, স্ন্যাপড্রাগন নামক ফুলটির নামকরণ হয়েছে মূলত এর আকৃতি থেকে। এই ফুলটি দেখতে অনেকটাই ছোট ড্রাগনের চোয়ালের মতো যা পার্শ্ব থেকে আলতোভাবে চাপ দিলে এর মুখ খোলে এবং বন্ধ হয়। সাধারণত এই খণ্ডিত ফুলগুলোকে পরাগায়িত করতে তুলনামূলক আকারে বড় এবং শক্তিশালী Bumble Bee-এর প্রয়োজন হয়, কারণ সাধারণ Honey Bee এই ফুলের মুখ খোলার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। পরাগায়িত ফুলগুলো শুকিয়ে মারা যাওয়ার পর এই উদ্ভিদের আরো একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। যখন স্ন্যাপড্রাগনের ফুলগুলো মরে যায়, তখন শুকনো বীজের শুঁটি (Pod) আকারে ছোট, বাদামি, সংকুচিত খুলি (মাথার খুলি)-এর মতো আকৃতি ধারণ করে।
তাছাড়া স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল এবং এর বীজশুঁটি নিয়ে আরো বিস্তারিত অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্সের মাধ্যমে ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবে বিদ্যমান বেশকিছু ভিডিও ফুটেজের সন্ধান পায় আমাদের ফ্যাক্ট-চেক টিম, যেখানে স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুলগুলো শুকিয়ে যাওয়ার পর বীজশুঁটি কেমন আকৃতি ধারণ করে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ইউটিউবে আপলোডকৃত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
স্ন্যাপড্রাগন গাছ এবং যাক্কুম গাছ কি এক নাকি অভিন্ন?
আল-কুরআনে উল্লিখিত ‘যাক্কুম’ গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত বিস্তারিত অনুসন্ধানে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল (IRFI) ওয়েবসাইট কর্তৃক “Zaqqum in the Light of Quran – A Scientific Study” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল খুঁজে পায় আমাদের টিম।
ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন ইন্টারন্যাশনাল (IRFI) এর তথ্যমতে, তাদের ওয়েবসাইটে থাকা এই আর্টিকেলটি মূলত National Botanical Research Institute, Lucknow (Govt. of India) এর উদ্ভিদ রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর এবং খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. ইকতেদার হুসাইন ফারুকীর লিখিত “Plants of The Quran” বইয়ের একটি অধ্যায় (নবম সংস্করণ, ২০১১) থেকে নেওয়া হয়েছে।
উক্ত আর্টিকেল তথা “Plants of Quran” বইয়ের এই অধ্যায়টিতে লেখক যাক্কুম শনাক্তকরণ প্রসঙ্গে যা বলেছেন তার সারমর্ম হলো, বর্তমান উদ্ভিদতাত্ত্বিক এবং রাসায়নিক জ্ঞান দিয়ে যদি কুরআনে বর্ণিত যাক্কুম গাছ শনাক্ত করতে হয়, সেক্ষেত্রে কুরআনে বর্ণিত তিনটি বৈশিষ্ট্য মাথায় রাখা উচিত। প্রথমত, যাক্কুম ভক্ষণ করলে তা পাকস্থলীতে বা শরীরের ভেতরে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করবে।
দ্বিতীয়ত, এর ডালপালা দেখতে হবে শয়তানের মাথার মতো, অর্থাৎ বড় গোলাকার বস্তু। তৃতীয়ত, পাপীদের জন্য খাদ্য হিসেবে চারটি আয়াতে এই উদ্ভিদকে শাজরাত আল-মালউনা (অভিশপ্ত বৃক্ষ) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং, পুরো উদ্ভিদটি পাপীদের খাদ্য হিসেবে বোঝানো হয়েছে, কেবল এর ফল নয়।
তাছাড়া বইয়ের অধ্যায়টি থেকে এটাও জানা যায়, বেশিরভাগ উর্দু ভাষার কুরআনের তফসির লেখকরা ভারতীয় থোহার নামক উদ্ভিদকে সম্ভাব্য যাক্কুম হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা আল-কুরআনের বর্ণনার সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বলে মনে হয়।
মূলত, ভারতের উষ্ণ অঞ্চলে Euphorbia গণের ক্যাকটাস সদৃশ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যেগুলো সাধারণত থোহার (Thohar) বা সেহ্ন্দ (Sehnd) নামে পরিচিত। যদিও সারা পৃথিবীতে Euphorbia গণের ১ হাজারের বেশি উদ্ভিদ আছে, তবে ভারতে থোহার বা সেহ্ন্দ হিসেবে পরিচিত উল্লেখযোগ্য কিছু প্রজাতি হচ্ছে:
- Euphorbia caducifolia
- Euphorbia antiquorum
- Euphorbia nivulia
- Euphorbia neriifolia
- Euphorbia royleana
- Euphorbia tirucalli
- Euphorbia trigona
তবে বইয়ের লেখক অর্থাৎ বিজ্ঞানী ইকতেদার হুসাইন ফারুকীর মতে, সাধারণভাবে সকল ইউফর্বিয়া, বিশেষত ক্যাকটাস ধরনের (ডেনড্রয়েড) উদ্ভিদগুলো, কুরআনে বর্ণিত যাক্কুমের বর্ণনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। কিন্তু শত শত ইউফর্বিয়া প্রজাতির মধ্যে কোনটি আসল সে প্রসঙ্গে লেখক তার বইতে উল্লেখ করেন, ১৯৮৬ সালের জুন মাসে মোনাকোর এক্সোটিক গার্ডেন (মন্টে কার্লো) পরিদর্শন করার সময় Euphorbia resinifera নামের উদ্ভিদের আকার এবং গঠন তাকে বেশ বিস্মিত করেছিল কারণ, যদি কেউ মরক্কোর এই ইউফর্বিয়াকে (E. resinifera) ভারতের এবং আরবের ইউফর্বিয়ার সাথে তুলনা করে, তবে স্বাভাবিক উপসংহার হবে যে, “যদিও এই সব ডেনড্রয়েড ইউফর্বিয়া কদাকার এবং ভয়ংকর দেখতে, তবে মরক্কোর উদ্ভিদটি শয়তানের মাথার সাথে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ।”
লেখক তাঁর বইতে আরো বলেন,
“এটা অবশ্যম্ভাবী, কুরআনের নাজিলের সময়কালীন আরব চিকিৎসকরা মরক্কোর বা মৌরিতানিয়ার ইউফর্বিয়া এবং ইউফর্বিয়াম ওষুধ সম্পর্কে পরিচিত ছিলেন। এটা সুপরিচিত ঘটনা যে, আরব চিকিৎসকরা এবং পণ্ডিতরা উদ্ভিদ এবং গ্রিক ঔষধ সম্পর্কে ইসলামের আগেই ভালো জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। যখন কুরআনে যাক্কুম সম্পর্কে বলা হয়েছিল, তখন আরবের বেশিরভাগ লোক, বিশেষত পণ্ডিতরা, সম্ভবত ইউফর্বিয়া রেসিনিফেরা উদ্ভিদের বিপদের ব্যাপারে অবগত ছিলেন।
যাইহোক, আবু জাহেল যখন যাক্কুম সম্পর্কে শুনেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটি খেজুর এবং আমরা এটা জাহান্নামে খাবো এবং উপভোগ করব।’’ এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে যাক্কুম কুরআনের প্রকাশের এলাকায় সাধারণ উদ্ভিদ ছিল না এবং আবু জাহেলের মতো অবিশ্বাসীরা এটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানত না। সুতরাং, এই সমস্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে, Euphorbia resinifera উদ্ভিদটিকে কুরআনের আসল যাক্কুম বলে মনে হয়।”
অর্থাৎ, বিজ্ঞানী ইকতেদার হুসাইন ফারুকির লেখা “Plants of The Quran” বইয়ের যাক্কুম বিষয়ক অধ্যায়টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পবিত্র আল কুরআনে যাক্কুম বৃক্ষের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী যদি বর্তমান উদ্ভিদতাত্ত্বিক ও রাসায়নিক জ্ঞান দিয়ে প্রকৃত যাক্কুম গাছকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয় তাহলে Euphorbia গণের ক্যাকটাস সদৃশ বিভিন্ন প্রজাতির যে-সব উদ্ভিদ পাওয়া যায় সেগুলোর গঠন আল-কুরআনের বর্ণনার সাথে সবচেয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ এবং বইয়ের লেখকের পাশাপাশি বেশিরভাগ উর্দু ভাষার কুরআনের তফসির লেখকরাও প্রায় একই ধারণা পোষণ করতেন বলে জানা যায়।
[ বি.দ্র. IRFI ওয়েবসাইটের আর্টিকেল থেকে এটা স্পষ্ট যে, ইকতেদার হুসাইন ফারুকীর লিখিত বইয়ে যাক্কুম গাছ সম্পর্কিত অধ্যায়টিতে ইউফর্বিয়া গাছই যে কুরআনে বর্ণিত যাক্কুম গাছ এই ব্যাপারে লেখক শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে কিছু বলেনি। বরং তাঁর গবেষণাপ্রসূত ধারণা অনুযায়ী, যদি আল-কুরআনে বর্ণিত যাক্কুম গাছের অস্তিত্ব পৃথিবীতে থাকে সেক্ষেত্রে কুরআনের বর্ণনার সাথে ইউফর্বিয়া জাতীয় গাছ সবচেয়ে সামঞ্জস্যতা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন]
তবে, এবার যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত তথাকথিত যাক্কুম গাছ অর্থাৎ স্ন্যাপড্রাগন গাছের বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাসের উপর আলোকপাত করা হয় তাহলে দেখা যায় স্ন্যাপড্রাগন গাছ Euphorbiaceae পরিবারভুক্ত Euphorbia গণের কোনো ক্যাকটাস সদৃশ উদ্ভিদ নয়।
বরং, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, Plantaginaceae পরিবারভুক্ত Antirrhinum গণের প্রায় ২০টি উদ্ভিদ মূলত স্ন্যাপড্রাগন হিসেবে পরিচিত এবং এরা পশ্চিম উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে স্থানীয় উদ্ভিদ।
স্ন্যাপড্রাগন মূলত স্বল্পস্থায়ী বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ, তবে কিছু প্রজাতি একবর্ষজীবী। এই গাছটির পাতা সাধারণত বর্শাকৃতির হয়। ফুলগুলো দেখতে নলাকার, দ্বি-পার্শ্বিকভাবে সিমেট্রিক্যাল এবং সাধারণত বড়, একটি বন্ধ ঠোঁটের মতো মুখ থাকে যা বেশিরভাগ পোকামাকড়কে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। তবে, আকারে বড় এবং শক্তিশালী মৌমাছিরা এই মুখটি খোলার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারে এবং এরাই ফুলের প্রধান পরাগায়ক। স্ন্যাপড্রাগন গাছের ফুল সাধারণত সাদা, হলুদ, কমলা, লাল, গোলাপি বা হালকা বেগুনি হতে পারে অথবা এই রংগুলোর সংমিশ্রণ হতে পারে।
তাছাড়া, ডক্টর ইকতেদার হুসাইন ফারুকী তার “Plants of The Quran” বইয়ে বর্তমান উদ্ভিদতাত্ত্বিক এবং রাসায়নিক জ্ঞানের মাধ্যমে যাক্কুম বৃক্ষের শনাক্তের ক্ষেত্রে যে-সব বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলোর সাথে স্ন্যাপড্রাগন গাছের সামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়নি। যেমন: স্ন্যাপড্রাগন গাছ প্রাণীদের জন্য বিষাক্ত নয়।
তাছাড়া, স্ন্যাপড্রাগন গাছের ছোট বীজশুঁটি শুকিয়ে গেলে মানুষের মাথার ন্যায় দেখা গেলেও যেহেতু যাক্কুম বলতে পুরো গাছকে বুঝানো হয় সে হিসেবে একটি আপাদমস্তক স্ন্যাপড্রাগন গাছের সাথে আল-কুরআনে বর্ণিত যাক্কুম গাছকে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয় না। কারণ স্ন্যাপড্রাগনের ক্ষুদ্র বীজশুঁটি শুকিয়ে গেলে তা দেখতে মাথার খুলির ন্যায় হলেও কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী এই গাছের ডালপালা (Stem) শয়তানের মাথার মতো বড় গোলাকৃতির নয়। তাছাড়া আমাদের ফ্যাক্ট-চেকিং টিমের অনুসন্ধানে এমন কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়নি যেখানে স্ন্যাপড্রাগন তথা Antirrhinum গণের উদ্ভিদকে আল-কুরআনে বর্ণির যাক্কুম গাছ দাবি করা হয়েছে।
উপসংহার (Conclusion)
মূলত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র আল-কুরআনে বর্ণিত যাক্কুম ফল দাবিতে যে ছবিগুলো প্রচার হচ্ছে তা যাক্কুম ফল নয় বরং Antirrhinum গণের অন্তর্ভুক্ত স্ন্যাপডাগ্রন গাছের বীজশুঁটির। অন্যদিকে আল-কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী যাক্কুম বলতে কেবল ফল নয় বরং পুরো গাছকেই বুঝানো হয়েছে।
বিজ্ঞানী ইকতেদার হুসাইন ফারুকীর গবেষণালব্ধ মতামত হলো, বর্তমান উদ্ভিদতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী Euphorbia গণের ক্যাকটাস সদৃশ উদ্ভিদগুলো যাক্কুম প্রসঙ্গে আল-কুরআনের বর্ণনার সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বলে মনে হয়।
সুতরাং সমস্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ন্যাপড্রাগন গাছের বীজশুঁটিকে যাক্কুম ফল দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
শাহ রেয়াজুর রহমান রাজ / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র (Reference)
- National Wildlife Federation || National Wildlife’s 2018 Photo Contest Honorable Mentions
- Flickr || Photography of ‘Snapdragon Seed Pod’ taken by Karl Zemlin
- Flickr || Photography of ‘Snapdragon Seed Pod’ taken by kath_bar
- vocabulary.com || Definition of ‘Seed Pod’
- The Seed Site || Table Chart: Seedpods, Seeds and Seedlings
- Gardening Know How || Snapdragon Seed Heads: Tips For Snapdragon Seed Collecting
- Scrappy Gardening || How to Collect Snapdragon Seeds
- Mini Modern Homestead || Saving Snapdragon Seeds
- The Garden Tales || How to save snapdragon seeds from the seedpod
- Islamic Research Foundation International || ‘Plants of the Quran’ by M. I. H. Farooqi (Sidrah Publishers, 9th edition, 2011)
- North Carolina State University || North Carolina Extension Gardener Plant Toolbox ; Plant Detail: Euphorbia resinifera
- Britannica || Britannica The Editors of Encyclopaedia. “snapdragon”. Encyclopedia Britannica, 30 Oct. 2023
- The American Society for the Prevention of Cruelty to Animals || Pet Care > Animal Poison Control > Toxic And Non-Toxic Plants > Common Snapdragon
- Wikimedia Commons || File: Antirrhinum majus from Thasos.JPG