ইনস্টিটিউট অফ হাই এনার্জি ফিজিক্স সম্প্রতি বেইজিং-এর একটি কণার সংঘর্ষে কয়েক দশক ধরে কাজ করে অবশেষে একটি গ্লুবলের প্রথম প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। X(2370) নামক একটি নতুন কণা যা ψ(সাই) নামে পরিচিত একটি নির্দিষ্ট ধরনের মেসন থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। কণা পদার্থবিদ্যার স্ট্যান্ডার্ড মডেল হল কর্নারস্টোন তত্ত্ব যা মহাবিশ্ব গঠনকারী মৌলিক শক্তি এবং কণা সম্পর্কে আমাদেরকে একটি বিস্তারিত ধারণা প্রদান করে। কণা পদার্থবিদ্যার জন্য এটিকে একটি পর্যায় সারণি হিসেবে মনে করা যায়।
এই মডেলটি ছয় ধরনের কোয়ার্ক, ছয় ধরনের লেপটন (যেমন ইলেকট্রন) এবং তড়িৎচৌম্বক বলের জন্য বাহক কণা ফোটন, সবল নিউক্লীয় বলের জন্য গ্লুয়ন, মহাকর্ষ বলের জন্য গ্রাভিট্রন এবং দুর্বল নিউক্লীয় বলের জন্য W ও Z বোসন সহ সমস্ত কণা ও শক্তির ধারণা পাওয়া যায়। প্রোটন এবং নিউট্রন স্ট্যান্ডার্ড মডেলের অংশ নয় কারণ তারা কোয়ার্ক থেকে তৈরি এবং আকারে বড় কণা। সমস্ত বড় বা যৌগিক কণা শুধু কোয়ার্ক এবং লেপটন দিয়ে তৈরি।
তাই প্রোটন ও নিউট্রন যেহেতু যৌগিক কণা ও কোয়ার্ক বা লেপটন থেকে তৈরি হয় তাই এগুলোকে স্ট্যান্ডার্ড মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। স্ট্যান্ডার্ড মডেল দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা অনেকগুলি কণার মধ্যে, কিছু এখনও অনিশ্চিত। এর মধ্যে রয়েছে ‘গ্লুবল’ বা সম্পূর্ণরূপে গ্লুয়ন দিয়ে তৈরি কণার বান্ডিল, যে কণাগুলো শক্তিশালী বল প্রেরণ করে।
অন্য কথায়, একটি আঠালো টেনিস বল বা কণা যা সম্পূর্ণরূপে বল বা শক্তি দ্বারা তৈরি। বেইজিং স্পেকট্রোমিটার III থেকে তথ্য সংগ্রহ করার পরে, বিজ্ঞানীরা আত্মবিশ্বাসী যে তারা ‘গ্লুবল’ এর অস্তিত্ব প্রমাণ পেয়েছেন, স্ট্যান্ডার্ড মডেল দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা একটি কণা যা অধরাই রয়ে গেছে।
2008 সাল থেকে বেইজিং স্পেকট্রোমিটার III, একটি ইলেকট্রন-পজিট্রন কোলাইডার, 10 বিলিয়নেরও বেশি কণার অস্তিত্ব পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এর ত্রুটি রয়েছে, স্ট্যান্ডার্ড মডেল আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বুঝতে সাহায্য করতে সফল হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, মডেলটি পারমাণবিক কাঠামোর বিশদ ধারণা প্রদান করেছে, এবং আমরা এখন জানি যে নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে প্রোটন এবং নিউট্রনের চেয়েও বেশি কণা থাকে।
গ্লুবল আসলে কী?
গ্লুয়ন হল উপ-পরমাণবিক কণা যা কোয়ার্ককে একসাথে ধরে রাখে। ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জের বিপরীতে, গ্লুওনের চার্জকে রং দ্বারা উল্লেখ করা হয় কারণ তারা একে অপরকে বাতিল করতে পারে। অনেকটা যেভাবে লাল, নীল এবং সবুজ রং একে অপরকে বাতিল করে। যেহেতু মেসনের মতো কণাগুলো কোয়ার্ক এবং অ্যান্টিকোয়ার্ক (কোয়ার্কের সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী কণা) নিয়ে গঠিত, তাই বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে গ্লুওনেরও অ্যান্টিরেড, অ্যান্টিব্লু এবং অ্যান্টিগ্রিনের মতো অ্যান্টিকালার রয়েছে।
উপরন্তু, গ্লুওনগুলো নিজেদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে এমন কণা তৈরি করে যা কোয়ার্ক নয়, যাকে বলা হয় ‘গ্লুবল’। কোয়ার্কগুলোও সাব-এটমিক কণা (কোন পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মৌলিক কণা); তারা প্রোটনের নিউক্লিয়াস গঠন করে। মেসনও কোয়ার্ক থেকে তৈরি হয়, বা আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়, একটি কোয়ার্ক এবং একটি অ্যান্টিকোয়ার্ক। যেহেতু গ্লুয়ন সবল নিউক্লীয় বল বহন করে, তারা কোয়ার্ক এবং অন্যান্য গ্লুয়ন কণার সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম। এই পরবর্তী বৈশিষ্ট্যের কারণে, গবেষকরা ধারণা করেছেন যে গ্লুয়নগুলো কোয়ার্ককে জড়িত না করে এক ধরনের কণা তৈরি করতে পারে। যাকে আমরা গ্লুবল বলছি।
গ্লুবল এবং অন্যান্য কণার মধ্যে মূল পার্থক্যটি তাদের গঠন এবং তাদের সাথে জড়িত মিথস্ক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে। প্রোটন এবং নিউট্রনের মতো সাধারণ হ্যাড্রনগুলোতে (শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়া দ্বারা একসাথে রাখা দুই বা ততোধিক কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি একটি যৌগিক কণা), গ্লুয়ন আঠা হিসাবে কাজ করে যা কোয়ার্কগুলোর মধ্যে শক্তিশালী বল এর মধ্যস্থতা করে।
বিপরীতে, গ্লুবল হল বিশুদ্ধ গ্লুইয়নিক অবস্থা — মূলত, গ্লুয়নের ক্লাস্টার (একত্রিত অবস্থা) একে অপরের সাথে আবদ্ধ। গ্লুয়নের এই স্ব-মিথস্ক্রিয়া হল একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজমের ফোটন কণার মতো অন্যান্য শক্তি বাহকদের চেয়ে ব্যতিক্রমী।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা পত্রে, BES III এর বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে তারা একটি নতুন যৌগিক কণা X (2370) শনাক্ত করেছেন। বন্ধনীতে থাকা সংখ্যাটি ছিল MeV/c²-এ এর ভরের প্রাথমিক মান, যা পরবর্তী গবেষণায়, 2395 MeV/ c² বা 2.395 GeV/c² হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ভর সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীর সাথে মিলে যায়।
আরও গুরুত্বপূর্ণ, কণাটির কোন স্পিন নেই এবং এর পরিসংখ্যানগত তাৎপর্য 11.7-σ। যা সোনার মান (5-σ) থেকে অনেক উপরে, এর দ্বারা বোঝা যায় যে এটি আবিষ্কারের সম্ভাবনা 0.00006 শতাংশ। যদিও এটি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয় যে বিজ্ঞানীরা গ্লুবলটিকে দেখেছেন, তবুও এটি নিশ্চিত করার সবচেয়ে শক্তিশালী ফলাফল যে স্ট্যান্ডার্ড মডেল দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করা গ্লুবলের অস্তিত্ব রয়েছে এবং সম্ভবত বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো এর অস্তিত্বের দিকে নজর দিয়েছেন।
আমিনুল ইসলাম সিয়াম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিক্স.অর্গ