পাই (π) এমন একটি গাণিতিক ধ্রুবক যার ব্যবহার আমরা নিজেদের এই জীবনে নূন্যতম একবার হলেও করেছি। কিন্তু আসলে কি এই পাই?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে যেকোনো আদর্শ বৃত্তের পরীধি এবং ব্যাসের অনুপাতই হচ্ছে পাই (π)। বৃত্ত ছোট বড় যেকোনো আকৃতির হোক না কেন, সকল বৃত্তের ক্ষেত্রে এর পরিধি এবং ব্যাসের অনুপাত ধ্রুব থাকবে, আর এই ধ্রুব সংখ্যাটিই হচ্ছে পাই।
π একটি অমূলদ সংখ্যা, অর্থাৎ দশমিকের পর এখানে রয়েছে অসীম সংখ্যক সংখ্যা। যার কারণে পাই এর সুনিশ্চিত মান আজও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে বছরের পর বছর ধরে মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন পাই এর যত নিঁখুত মান সম্ভব বের করার। এজন্য তারা সাহায্য নিচ্ছে অনেক শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের।
সর্বশেষ এ বছর পাই দিবসে (১৪-ই মার্চ) প্রকাশিত এক স্ট্যাটমেন্ট অনুযায়ী আমেরিকার এক সুপার কম্পিউটার সর্বোচ্চ সংখ্যক π এর মান নির্ণয় করেছেন, যার পরিমাণ ছিল ১০৫ ট্রিলিয়ন অংকের একটি সংখ্যা। পাই এর এই মানটি বের করতে সুপার কম্পিউটারের সময় লেগেছে ৭৫ দিন এবং এই সংখ্যাটির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ১ মিলিয়ন গিগাবাইট (জিবি) ডাটা।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এর দুই পদার্থবিদ, যারা হলেন প্রিয়া সাহা এবং সিনহা, তাদের প্রচেষ্টায় পাইকে নতুন ভাবে উপস্থাপন করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। একটি গাণিতিক ধ্রুবক হওয়ার কারণে π এর মান কখনো পরিবর্তন হয় না। এটি যতই অমূলদ হোক না কেন নিত্য নতুন এর সংখ্যা দীর্ঘায়িত হবে কিন্তু এর মান পরিবর্তন হবে না। বর্তমানে পাই এর সর্বোচ্চ প্রাপ্ত মান ১০৫ বিলিয়ন সংখ্যা। ভবিষ্যতে আরো বড় হবে কিন্তু মান একই থাকবে।
সাহা এবং সিনহার নতুন কাজটি π এর জন্য নতুন একটি সিরিজে রূপ দিয়েছে। যা π এর মানকে আরো সহজভাবে বের করতে সাহায্য করবে বলে ধারণা। কণা এক্সিলারেটরে উচ্চ-শক্তির কণার কোয়ান্টাম বিক্ষিপ্তকরণের গণনা ব্যবহার করে পাইকে আরো সহজে বের করা যায়।
কিন্তু এই পদ্ধতিতে কিছু গনিতবিদ দ্বিমত দেখিয়েছেন। কেননা গণিতে, পাই একটি সিরিজ এর মতো একটি প্যারামিটারে উপাদানগুলোকে এমনভাবে সাজায় যে গণিতবিদরা দ্রুত π এর মান, এর উপাদান এর অংশগুলোর থেকে বের করতে পারেন। এটি একটি খাবার তৈরির জন্য রেসিপি অনুসরণ করার মতো।
একটি সুস্বাদু খাবার তৈরি করার জন্য যেমন প্রতিটি উপাদান সঠিক পরিমাণে এবং ক্রমানুসারে যোগ করা প্রয়োজন ঠিক তেমনটাই। যদি আপনার কাছে রেসিপি না থাক, তবে আপনি জানেন না কোন উপাদানগুলোর সংমিশ্রণে নির্দিষ্ট খাবারটি তৈরি করা হয় এবং প্রত্যেকটি উপাদান কতটুকু ও কখন যোগ করতে হবে।
পাই এর মান বের করার অভিনব পদ্ধতি নয়, বরং সিনহার গ্রুপ মূলত খুঁজতে চেয়েছিল অন্যকিছু। তা হলো যতটা সম্ভব কম এবং সহজ ফ্যাক্টর ব্যবহার করে গাণিতিকভাবে উপ-পরমাণু কণার মিথস্ক্রিয়াকে উপস্থাপন করার উপায়।
মাহফুজুর রহমান রিদোয়ান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট