নাসার টেলিস্কোপ সন্ধান পেয়েছে নতুন এক গ্রহের যেখানে বালির বৃষ্টি হয়। শুনতে আশ্চর্য শোনালেও নতুন আবিষ্কৃত এই গ্রহ (Wasp-107b) ওয়াস্প-107বি-তে বালির বৃষ্টি এর সাথে রয়েছে উত্তপ্ত তাপমাত্রা, প্রচণ্ড বাতাস এবং সালফার ডাই অক্সাইডের পোড়া-ম্যাচের গন্ধ।
নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ গ্রহটি খুঁজে বের করেছে যেখানে বালির কণা বৃষ্টির মতো পড়ে এবং নিঃসন্দেহে এটি একটি যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণ।
পৃথিবী থেকে ২০০ আলোকবর্ষ দূরে Virgo Constellation নামক নক্ষত্রে অবস্থিত এই গ্রহটি ইতিমধ্যেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কারণ এটি খুব বড় কিন্তু খুব হালকা এবং এটিকে “ক্যান্ডি ফ্লস” নামেও অনেকে নামকরণ করেছেন।
সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণগুলো সৌরজগতের বাইরে অদ্ভুত এই অভূতপূর্ব গ্রহের আভাস দেয় যেখানে সিলিকেট বালির মেঘ এবং বৃষ্টি, উত্তপ্ত তাপমাত্রা, প্রচণ্ড বাতাস এবং সালফার ডাই অক্সাইডের স্বতন্ত্র পোড়া-ম্যাচের গন্ধ রয়েছে৷
এই গবেষণার প্রথম লেখক ক্যাথলিক ইনস্টিটিউট (কেইউ) লিউভেনের অধ্যাপক লিন ডেসিন গ্রহটির ব্যাপারে বলেছেন,
“অন্যান্য গ্রহ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আমরা পৃথিবী থেকে যা জানি তার উপর ভিত্তি করে এবং এটি একটি খুবই সীমাবদ্ধ জ্ঞান। গ্রহটি ২০১৭ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল যখন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রতিবার গ্রহটি এর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার হোস্ট নক্ষত্র থেকে আলোর একটি পর্যায়ক্রমিক ঝিকিমিকি দেখেছিলেন। এটি রাস্তার বাতির সামনে একটি মাছির মতো। আপনি আলোর সামান্য ম্লান দেখতে পাচ্ছেন।”
জেমস ওয়েব গ্রহের বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে ফিল্টার করা তারার আলো পরিমাপ করে এই পর্যবেক্ষণগুলোকে অন্যস্তরে নিয়ে গিয়েছে। যেহেতু বিভিন্ন উপাদান বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে, তাই তারার আলোর বর্ণালীই মূলত নির্দেশ করে গ্রহটিতে কোন কোন গ্যাস রয়েছে।
Wasp-107b গ্রহটি ভরের দিক থেকে নেপচুনের মতো হলেও এর আকার প্রায় বৃহস্পতি গ্রহের মতো এবং বিশাল। এই বিশালতার জন্য জেমস ওয়েব টেলিস্কোপক এর বায়ুমণ্ডলের অনেক গভীর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
ন্যাচার জার্নালে প্রকাশিত সর্বশেষ পর্যবেক্ষণগুলো থেকে জানা যায় গ্রহটিতে জলীয় বাষ্প এবং সালফার ডাই অক্সাইডের উপস্থিতি প্রমাণিত যা কিনা এর বায়ুমণ্ডলে পোড়া ম্যাচের গন্ধের জন্য দায়ী। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সকল গ্রহের মাঝে কেবল এই গ্রহটিতেই প্রথমবারের মতো মেঘের রাসায়নিক গঠন শনাক্ত করা গিয়েছে এবং যার প্রধান উপাদান হলো সিলিকেট বালি।
নতুন এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে চলতে থাকা পানিচক্রের অনুরূপ। তবে পানিচক্রের পরিবর্তে এটিকে বলতে হবে বালিচক্র। উষ্ণতর বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তর থেকে যেখানে তাপমাত্রা ১০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর এর কাছাকাছি সেখান থেকে সিলিকেট বাষ্প উপরে উঠে, শীতল হয় এবং বালির আণুবীক্ষণিক দানা তৈরি করে যা দেখতে খুব ছোট। অবশেষে, বালির ধূলিকণার এই মেঘগুলি যথেষ্ট ঘন হয়ে উঠে এবং তারা বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরগুলিতে বৃষ্টি হয়ে ঝরা শুরু করে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর বালি আবার বাষ্পে পরিণত হয় এবং চক্রটি চলতে থাকে।
ডেসিন বলেন,
“মেঘগুলি একটি ধোঁয়াটে ধুলোর মতো দেখতে হয় এবং এই বালির কণাগুলি অত্যন্ত উচ্চ বেগে চারপাশে প্রবাহিত হয়। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় কয়েক কিলোমিটার।”
ডেসিন আরও বলেন,
“জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের একটি প্রধান লক্ষ্য হলো দূরবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করা এবং জীবের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে এরকম বায়োসিগনেচার গ্যাসের সন্ধান করা। কিন্তু Wasp-107b এর 1,000 ডিগ্রি সেলসিয়াস এর জলবায়ু এবং শক্ত পৃষ্ঠের অভাবের কারণে এটি জীবের উপস্থিতি পাওয়ার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত হয় না। এটি জীবের জন্য একেবারে প্রতিকূল -এবং এটি আমাদের জন্যও অনুকূল নয়।”
যাইহোক, Wasp-107b-এর মতো দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তু থেকে এত বিস্তারিত প্রাপ্তির বিষয়টিকে একটি উৎসাহ যোগানো পর্যবেক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মহাবিশ্বের রয়েছে নানানরকম বিস্ময়। পৃথিবীর বাইরে জনপদ গড়ে তোলার অনেক বিকল্প পথ থাকতে পারে বলে গবেষণার লেখক ডেসিন বিশ্বাস করেন এবং তিনি আমাদেরকে আমাদের কল্পনার জগৎকে আরও বৃহৎ করা পরামর্শ দিয়েছেন।
আসিফুল হাসান আসিফ / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, লাইভ সাইন্স
+1
+1
1
+1
+1
+1
1
+1
+1