ভাষা হলো মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। কিন্তু ভাষা আসলে একদিনে আসেনি। যুগের পর যুগ ধরে মানুষ যত বুদ্ধিমান হয়েছে তত ভাষার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ঘটিয়েছে। আমাদের আজকের বাংলা ভাষা আজ থেকে ২০০০ বছর আগে এমন ছিল না। আমাদের বাংলা ভাষা মূলত ইন্দো-ইউরোপিয়ো ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এবার বিজ্ঞানীরা প্রায় ৩০০০ বছরের পুরোনো হারানো ভাষার পুঁথি ফলকের সন্ধান পেয়েছেন যা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষার বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাটির সেই ফলকটিতে ধর্মীয় কোনো পুঁথি লেখা আছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তুরস্কের বোগাযকালে শহরের কাছে মাটি খোঁড়ার কাজ করার সময় ফলকগুলো উদ্ধার করা হয়। যেখানে প্রাচীন এই ভাষার ফলকগুলো পাওয়া গিয়েছে সেখানে ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে ‘হিটাইট’ নামের একটি সাম্রাজ্য ছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ সাল পর্যন্ত এই সভ্যতার রাজত্ব ছিল বলে জানা যায়। আনাতোলিয়ার (বর্তমান তুরস্কের ভূখণ্ডে) উত্তরে এদের বসবাস ছিল বলে মনে করা হয়। এরা মূলত ছিল ইন্দো-ইয়োরোপীয় এবং খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ শতকে এরা আনাতোলিয়ায় সাম্রাজ্য গড়ে তোলে।
জার্মান আর্কিওলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের আর্কিওলজিস্ট আন্দ্রিয়াস স্ক্যাচনার বোগাযকালে শহরে এই অনুসন্ধান পরিচালনা করেন। তার দলটি সেখান থেকে প্রায় হাজার খানেক মাটির ফলক পেয়েছে। এই ফলকগুলোতে ধর্মীয় পুথি লেখা রয়েছে। এগুলো ‘কিউনিফর্ম’ পদ্ধতিতে লেখা। এটি প্রাচীনতম একটি লেখার পদ্ধতি। সুমেরিয়ানরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করতো এবং এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হওয়া সবচেয়ে প্রাচীনতম লিখিত ফলকটি তাদেরই যা প্রায় ৫০০০ বছরের পুরোনো। কিউনিফর্ম পদ্ধতিতে সুমেরিয়ানরা মাটির ফলকে চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে পুথি লিখে রাখতো।
অধিকাংশ ফলক মূলত হিটাইট ভাষাতে লেখা রয়েছে তবে কিছু অন্য বৈদেশিক ভাষার ফলকও মিলেছে। কারণ ধারণা করা হয় যে হিটাইটরা বিদেশি ভাষা ও ধর্মীয় আচারে আগ্রহী ছিল। হিটাইটরা মূলত যে ধর্ম পালন করতো তা ছিল একপ্রকার মিশ্রিত ধর্ম। কারণ তারা আঞ্চলিক ও বৈদেশিক উভয়ের সংমিশ্রণে ঘটিত ধর্ম পালন করতো।
আর্কিওলজিস্ট স্ক্যাচনার বলেন যে, “আমরা যা পেয়েছি তা পরিষ্কারভাবে ধর্মীয় পুঁথি”
ফলকগুলো গবেষণার জন্য জার্মানি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে উর্জবার্গ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. ডেনিয়েল শুয়েচমার এর ওপর গবেষণা চালাচ্ছেন৷ তিনি ও তার দল গবেষণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ফলকগুলোর ছবি প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। তবে তারা ধারণা করছেন যে এটি ইন্দো-ইয়োরোপীয় ভাষার আনাতোলিয়া ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত এবং হিটাইটদের ভাষাও সেখান থেকেই এসেছে।
আনাতোলিয়া (বর্তমান তুরস্কের ভূ-খণ্ড) অঞ্চলগত প্রাচীন ভাষাগুলো যেমন হিব্রু ও আরামিক এর সাথেও এর উৎপত্তিগত মিল পাওয়া যায়। বিস্তারিত গবেষণার পরেই জানা যাবে হারানো ভাষার পুঁথি অর্থাৎ, সেই ফলকগুলোতে কি লেখা আছে এবং এগুলো কি উদ্দেশ্যে লেখা রয়েছে। তার সাথে যারা এগুলো লিখেছে তাদের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্র: ব্রিট্যানিকা, লাইভ সাইন্স
মুরছালিন রহমান/ নিজস্ব প্রতিবেদক