২০ জুলাই, ১৯৬৯। প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন মানুষ টেলিভিশন স্ক্রিনের দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে। সকলের চোখেমুখে চাপা উত্তেজনার ছাপ। তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ-ই হতে চাচ্ছেনা। আজ প্রথমবারের মতো মানবজাতি চাঁদে অবতরণ করতে চলেছে।
মানব ইতিহাসে এত বড় ঘটনা খুব কম-ই ঘটেছে। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। নীল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রাখলেন।
এই ঐতিহাসিক ঘটনার পর আরও বেশ কয়েকবার মানুষ চাঁদে যেতে সক্ষম হয়। সর্বশেষ ইউজিন সারনান এবং হ্যারিসন স্মিট ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ অভিযানের মাধ্যমে সেখানে যান। এরপর প্রায় ৫০ বছর পেরিয়ে গেলো। এখন পর্যন্ত আর কোন মানুষ এই সৌভাগ্যটি অর্জন করতে পারেনি।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, ৫০ বছর আগে চাঁদে যাওয়া সম্ভব হলেও বর্তমানে আমরা তা পারছিনা কেন?
পারছিনা বললে আসলে কথাটা ভুল হয়। সঠিক উত্তরটা হলো, আমরা যাচ্ছিনা। এর অন্যতম কারণ, এই অভিযানগুলো অবিশ্বাস্যরকমের কঠিন এবং ব্যয়বহুল। সব মিলিয়ে অ্যাপোলো প্রোগ্রামের জন্য সেসময় মোট খরচ হয়েছিলো ২৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। টাকার অংকটিকে যদি বর্তমানের আলোকে হিসাব করা হয়, তাহলে তা দাঁড়ায় প্রায় ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা অবশ্যই বেশ মোটা অংকের টাকা।
তাহলে কি মানুষ আর কখনো-ই চাঁদে যাবেনা?
উত্তর হলো, হ্যাঁ যাবে। নাসার পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যেই এমনটা হবে। এটি করা হবে একাধিক পর্বে বিভক্ত ‘আর্টেমিস‘ অভিযানের মাধ্যমে। চলুন অভিযানটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
আর্টেমিস-১ ছিল একটি যাত্রীবিহীন চন্দ্র-প্রদক্ষিণ অভিযান। পাঁচ দশক পূর্বে হওয়া অ্যাপোলো প্রোগ্রামের সমাপ্তির পর, আর্টেমিস-১ হলো নাসার প্রথম চন্দ্রাভিযান। এটি ছিল ‘Orion’ মহাকাশযান এবং Space Launch System (SLS) রকেটের প্রথম সমন্বিত পরীক্ষা। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্টেমিস মিশনের প্রস্তুতির জন্য ‘Orion’ মহাকাশযান এবং Space Launch System (SLS) রকেটের কার্যকারীতা যাচাই করে দেখা। অভিযানটি সফল হয়। ‘Orion’ পরিকল্পনা মোতাবেক ১৬-ই নভেম্বর, ২০২২ এ পৃথিবী ছেড়ে গিয়ে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে ১১-ই ডিসেম্বর, ২০২২ এ পৃথিবীতে ফিরে আসে।
আর্টেমিস-১ এর সফলতার পর বর্তমানে ‘আর্টেমিস-২’ এর প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ক্রিস্টিনা কোচ, ভিক্টর গ্লোভার, রিড উইজম্যান এবং জেরেমি হ্যানসেন এই চারজন মহাকাশচারী ‘Orion‘ মহাকাশযানে পৃথিবী ছেড়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। তারপর তারা চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।
যদি আর্টেমিস-২ সফল হয়, তাহলে তা আর্টেমিস অভিযানের চূড়ান্ত অংশ ‘আর্টেমিস-৩’ এর জন্য রাস্তা পরিষ্কার করে দিবে। ‘আর্টেমিস-৩’ এর মাধ্যমে ১৯৭০ এর দশকের পর প্রথমবারের মতো মানুষ চাঁদের বুকে পা রাখবে। এ অভিযানের সম্ভাব্য সময় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাস।
সবকিছু পরিকল্পনা মোতাবেক হলে ক্রিস্টিনা কোচ হয়ে যাবেন চাঁদে পা রাখা প্রথম নারী এবং ভিক্টর গ্লোভার হবেন চাঁদে পা রাখা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ। যদিও এই সময়সীমাগুলোর মধ্যে কাজ শেষ হবে কিনা তা কেউ জানে না। অভিযানগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং যেকোনো সময় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এত বছর পর মানুষের আবার হঠাৎ চাঁদে যাবার শখ হলো কেন?
বর্তমানে বিজ্ঞানীদের অন্যতম একটি লক্ষ্য হলো, পৃথিবীর বাইরে মানববসতি স্থাপন। আর্টেমিস অভিযান হলো সেই পরিকল্পনার-ই একটি অংশ।
চাঁদে যাওয়া মহাকাশচারীদের মূল কাজ হবে, চাঁদের মেরু অঞ্চলে থাকা সম্ভাব্য বরফের উপস্থিতি খুঁজে বের করা। যদি ভবিষ্যতে কখনও মানুষেরা চাঁদে বসতি স্থাপন করতে চায়, তাহলে সেগুলোকে পানি এবং অক্সিজেনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া ২০৩২ সাল নাগাদ নাসা চাঁদে খনন কাজ শুরু করতে চায়। ‘Lunar soil‘ আমাদের খনিজ পদার্থের নতুন উৎসের সন্ধান দিতে পারে।
এই সম্পূর্ণ অভিযানটি নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন? জানাতে ভুলবেন না।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ আতিক হাসান রাহাত
তথ্যসূত্রঃ দ্য কনভারসেশন, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, কেমিস্ট্রি ওয়ার্ল্ড