শরতের শুভ্র কাশফুল কিংবা বসন্তের সুমধুর বাতাস যখন প্রায় সবাইকে ব্যাকুল করে তোলে বন্দি ঘরের বাইরের নতুন সাজে সজ্জিত পরিবেশটাকে উপভোগ করার জন্য; ঠিক তখনই যদি আপনি হাঁচি, কাশি, সর্দি, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগতে শুরু করেন এবং শরতের সাদা কাশফুল কিংবা বসন্তের এই স্নিগ্ধ বাতাসই যদি হয়ে উঠে আপনার জন্য যমদূতের ন্যায়, তাহলে নিশ্চয়ই বিষয়টি অপ্রীতিকর বলে মনে হতেই পারে আপনার কাছে। তবে সত্য এটাই যে, এরকম মৌসুমগুলোতেই হাজারো মানুষের এ-সকল সমস্যা দেখা দেয় এবং অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া বেড়ে যায় শুধুমাত্র পরাগ নির্গমনের কারণে। আর এই সকল কারণে ভুক্তভোগী রোগীরা এই মৌসুমগুলোকে অ্যালার্জি মৌসুম বা পরাগ মৌসুম বলেই অ্যাখায়িত করে। মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড এর বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অ্যালার্জি মৌসুম বৃদ্ধি পাবে এবং অ্যালার্জির প্রভাব বৃদ্ধি পেয়ে আরো তীব্র হয়ে উঠবে বলে জানা গেছে University of Michigan এর এক গবেষণায়।
University of Michigan এর এই গবেষণা অনুযায়ী, বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অ্যালার্জি মৌসুম বৃদ্ধি পেয়ে স্বাভাবিক সময়ের ৪০ দিন পূর্বে আগমণ করবে এবং অন্যান্য বছরের তুলনায় আরো ১৯ দিন বেশি স্থায়ী হবে। অর্থাৎ যে সময়টায় পরাগ নির্গমন কমে আসার কথা, সেই সময়েও পরাগ নির্গমন ঘটবে, যা ১৯৯৫ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেখা যায়নি। প্রতিনিয়ত কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকায়, বার্ষিক পরাগ নির্গমণের হার প্রতিবছর ২০০% করে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসকল ঘাস, গাছ এবং কাঠ পরাগ উৎপন্ন করে, অত্যধিক তাপমাত্রায় সেগুলোর পরাগ স্বাভাবিক সময়ের পূর্বেই সক্রিয় হয়ে উঠে। ফলে অতি দ্রুত উচ্চ ঘনত্বের পরাগ নির্গমন ঘটতে দেখা যায়।
পরাগ নির্গমনের কারণে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়। পরাগের কারণে সংঘটিত অ্যালার্জির উপসর্গগুলো হলো, জলযুক্ত চোখ, হাঁচি, ফুসকুঁড়ি দেখা দেওয়া, শ্বাস নিতে অসুবিধা বা Anaphylaxis এর মতো গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করে। Anaphylaxis হলো এক ধরনের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া যা দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গমনে বাধ্য করে যার ফলে ব্যক্তি শকে চলে যায়। শিশুরা সাধারণত বয়স্কদের তুলনায় পরাগের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে, ফলে উচ্চ ঘনত্বে শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন উপসর্গ তীব্রভাবে দেখা দেয়।
পরাগজনিত কারণে ঘটা শ্বসনতন্ত্রের অ্যালার্জি প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে আরো তীব্র হয়ে উঠছে বলে জানান একজন U-M graduate ছাত্রী, Climate and Space Sciences and Engineering এর গবেষণা সহকর্মী এবং ‘Nature Communications‘ পত্রিকার প্রথম লেখিকা ইংজিয়াও ঝাং। University of Michigan (U-M) এর গবেষকদের করা এই গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যগুলো, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে পরাগ নির্গমনের হার বৃদ্ধিজনিত সম্পর্ক এবং এর প্রভাবে স্বাস্থ্যের উপর যে সকল বিরূপ প্রভাবগুলো দেখা যায় তা অনুসন্ধানের একটি বড়ো মাধ্যম হয়ে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন ইংজিয়াও ঝাং।
U-M গবেষণাকর্মীরা একটি মডেল প্রস্তুত করেন যার মাধ্যমে তারা ১৫ ধরনের পরাগের উপর পরীক্ষা চালান এবং তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন পরাগ উৎপাদনের ওপর কীরূপ প্রভাব ফেলবে তা জানার চেষ্টা করেন। তাদের বানানো এই মডেলটির মাধ্যমে ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে অ্যালার্জি মৌসুম ও সে অনুযায়ী অ্যালার্জির প্রভাব বৃদ্ধি বা হ্রাসের আগাম বার্তা জানা যাবে এবং জনগণকে সতর্ক করা যাবে বলে জানান Climate and Space Sciences and Engineering এর অধ্যাপক এলিসন স্টেইনার।
U-M গবেষকগণ তাদের তৈরি করা পরাগ নির্গমন মডেলটি National Weather Service Air Quality Forecast এ অন্তর্ভুক্ত করার আশা রাখছেন যা পরবর্তীতে জনগণকে উন্নত এবং জলবায়ু সংবেদনশীল আবহাওয়া প্রদানে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন ইংজিয়াও ঝাং। National Weather Service Air Quality Forecast হলো এমন একটি ব্যবস্থা যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ওজোন, কণা পদার্থ ও অন্যান্য দূষণকারী বস্তু সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদান করে এবং প্রতিকূল প্রভাব প্রতিরোধ কিংবা কমানোর ক্ষেত্রে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আগাম বার্তা জানায়।
University of Michigan এর এই গবেষণাটি National Science Foundation দ্বারা সমর্থন করা হয়েছে।
দিদারুল ইসলাম/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: নেভাডা নিউজ, মিশিগান আর্কাইভ