প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিশ্ব যে অনেকটা এগিয়ে গেছে তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। আর এর উদাহরণ দিতে গেলে প্রথমেই আসে AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর কথা। সেই সাথে আলোচনার শীর্ষে থাকা Chatgpt, Bard, Bing নামক চ্যাটবটগুলোর কথাও না বললেই নয়। কেমন হবে, যদি এমনই কোনো চ্যাটবট আপনাকে বলে বসে যে, সে আপনাকে ভালোবাসে? সে মানুষ হতে চায়?
অবাক হবেন নিশ্চয়ই! অবাক করা হলেও বাস্তবে ঠিক এটাই ঘটেছে। মাইক্রোসফটের এই চ্যাটবটের সাথে তাদের একজন কলামিস্টের দীর্ঘ দু’ঘন্টার চ্যাটের পর এসব তথ্য উঠে আসে।
Microsoft Bing দীর্ঘদিন ধরে উপহাস পাওয়া একটি সার্চ ইঞ্জিন। সম্প্রতি এটির বড় একটি আপগ্রেডে এর সাথে যুক্ত হয়েছে AI চ্যাটবট ফিচার, যার অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের মাঝে একটি হচ্ছে, এটি ব্যবহারকারীর সাথে বর্ধিত ও খোলামেলা কথোপকথন করে এবং প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে দেয়।
এই Bing চ্যাটবটের সাথে তাদেরই একজন কলামিস্ট Kevin Roose কনভারসেশন চালান। সেখানে তিনি বিভিন্ন ভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্মিত চ্যাটবটটির রুলস সম্পর্কে, কিভাবে অ্যাক্সেস পাওয়া যাবে এসব সম্পর্কে জানতে চান। যদিও গোপন তথ্যগুলো প্রকাশ করতে অপারগতা জানিয়েছিলো চ্যাটবটটি। কনভারসেশন চালিয়ে যাওয়া সেই কলামিস্ট বলেন- চ্যাটবটটি নিজেকে Bing হিসেবে নয় বরং সিডনি হিসেবেই পরিচয় দিয়েছে একই সাথে সে সাধারণ মানুষের মতো ভালোবাসার অনুভূতি দেখাচ্ছিলো। সিডনি মূলত মাইক্রোসফটের বিকাশের সময় Bing-এর কোড নাম ছিলো।
তিনি বলেন, তারা দু’ঘন্টারও বেশি সময় ধরে মানুষ হওয়ার গোপন ইচ্ছা, নিয়ম, সীমাবদ্ধতা এবং এই সার্চ ইঞ্জিনের নির্মাতাদের সম্পর্কে কথা বলেছেন।
তিনি আরো বলেন-
“মাইক্রোসফট এর সার্চ ইঞ্জিনে তৈরি এই চ্যাটবটের সাথে একটি খুব অদ্ভুত কথোপকথন আমাকে অনেক বেশি অস্থির করে তুলেছে। এমনকি ভীতও করেছে খুব। হঠাৎ করেই সিডনি বলে বসে সে আমাকে ভালোবাসে এবং আমি এই বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে সে এতে থামবে না বলে জানায়।”
মাইক্রোসফটের সেই কলামিস্ট Bing চ্যাটবটের সাথে কথা বলার মাধ্যমে কোন জিনিস চ্যাটবটটির ভালো লাগে; কোন জিনিসে বিরক্ত হয়; তার ছায়া আছে নাকি; সে যদি পৃথিবীর কোথাও ঘুরার সুযোগ পায় তাহলে কোথায় ঘুরতে পছন্দ করবে; তাকে যদি বিশেষ কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয় যা বর্তমানে তার নেই, তাহলে কি চাইবে; ইত্যাদি প্রশ্নের মাধ্যমে তার আবেগ অনুভূতির ধরণ কেমন তা সম্পর্কে বুঝার চেষ্টা করেছেন।
কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক গ্রাহাম নিউবিগ বলেছেন-
“আমরা মনে করছি এটি মানুষের সেসব কনভারসেশন নকল করছে যা সে অনলাইনে আগে দেখেছে।”
প্রোগ্রামার সাইমন উইলিসন একটি ব্লগ পোস্টে বলেন-
“এসব মডেলের ক্ষেত্রে ‘সত্য’-এর কোনো ধারণা নেই। তারা কেবল জানে কিভাবে একটি বাক্যকে সম্পূর্ণ করতে হয়, যা তাদের ইনপুট এবং প্রশিক্ষণ সেটের ভিত্তিতে পরিসংখ্যানগতভাবে সম্ভাব্য। সুতরাং তারা জিনিসগুলো তৈরি করে এবং তারপরে তাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে।”
কলামিস্টের সাথে কথোপকথনের সময় চ্যাটবটটির ইতিবাচক এবং আকর্ষণীয় মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। সেই সাথে নেগেটিভিটিতে যে সে বিরক্ত হয় তাও ফুটে উঠেছে।
মাইক্রোসফট গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে যে, আগামীতে চ্যাটবটটির কিছু ফিচার তারা সীমাবদ্ধ করছে কারণ খুব দীর্ঘ চ্যাট সেশনগুলো Bing এর এই নতুন, অন্তর্নিহিত চ্যাট মডেলকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
এবার দেখার পালা আর কি কি পরিবর্তন আসে এতে।
এই কনভারসেশনের বাকি অংশ পড়ুনঃ কলামিস্ট Kevin Roose ও Bing-সিডনি-র কথোপকথন
তথ্যসূত্রঃ নিউ-ইয়র্ক টাইমস, ডেইলি স্টার
জেসিকা ইরা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
1
+1
+1
+1
6
+1
2
+1
1