কেমন হবে যদি গত বছর মারা যাওয়া আপনার নানী বা দাদীর কন্ঠস্বর আপনি আবার শুনতে পারেন? অসম্ভব মনে হচ্ছে? কিন্তু আম্যাজনের আধুনিক প্রযুক্তি এই অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তর করার চেষ্টা চালাচ্ছে, এমন-ই জানিয়েছে বিখ্যাত জায়ান্ট কোম্পানিটি।
অ্যালেক্সার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান বিজ্ঞানী রোহিত প্রসাদ লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত অ্যামাজনের একটি কনফারেন্সে বলেন, এই উদ্ভাবনের পিছনের উদ্দেশ্য ছিল সহানুভূতি এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামঞ্জস্যতা রেখে অ্যালেক্সার সাথে ব্যবহারকারীদের আরো আস্থাশীল সম্পর্ক তৈরি করা।
কিভাবে কাজ করবে এই ফিচারটি?
অ্যালেক্সার ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট ফিচারটি এক মিনিটের এরও কম সময়ের একটি রেকর্ডিং এর উপর ভিত্তি করে কন্ঠস্বর নকল করতে পারে, এমনটাই কনফারেন্সে জানান বিজ্ঞানীরা। রোহিত প্রসাদ আরো জানান, সম্প্রতি এই মহামারীতে আপনজনদের হারিয়েছে লক্ষ মানুষ, তাই তাদের এই কষ্ট কিছুটা কমাতে অ্যামাজনের একটি প্রয়াস হলো অ্যালেক্সার এই ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট। যদিও প্রযুক্তি মৃতদের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম নয়, কিন্তু তাদের স্মৃতিগুলো যেন স্থায়ী হয়ে থাকে আমাদের কাছে তাই-ই এর লক্ষ্য।
লাস ভেগাসের অ্যামাজনের ঐ ইভেন্টে একটি ছোট শিশু জিজ্ঞাসা করে “অ্যালেক্সা, দাদি কি আমার ওজের উইজার্ডটি পড়া শেষ করতে পারবেন?” তখন অ্যালেক্সা শিশুটির অনুরোধমত তার মৃত দাদির অনুকরণ করে অন্য একটি কন্ঠে সুইচ করে এবং ভার্চুয়াল ভয়েস এসিটেন্টের সাহায্যে একই কণ্ঠে বইটি পড়তে থাকে।
রোহিত প্রসাদ জানান, ফিচারটি তৈরি করার জন্য কোম্পানিকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মাধ্যমে স্টুডিওতে কয়েক ঘন্টা রেকর্ডিংয়ের বিপরীতে একটি ছোট রেকর্ডিং থেকে “উচ্চ মানের ভয়েস” তৈরি করা শিখতে হয়েছে। তবে অ্যামাজন কর্তৃপক্ষ ফিচারটি সম্পর্কে বিশদ তথ্য দেয়নি গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার স্বার্থে। এমনকি কাদের কন্ঠস্বর নকল করা যাবে এবং কারা এই ফিচারটি ব্যবহার করতে পারবে এই ব্যাপারেও কিছু কঠোর নিয়মনীতি নিয়ে ভাবছে অ্যামাজন।
সুবিধা – অসুবিধা:
বর্তমানে অনেকেই এই প্রযুক্তিটির পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছেন। কারো মতে, অ্যালেক্সা কোনোভাবেই মৃত ব্যক্তিটির মতো হুবহু ভয়েস নকল করে কথা বলতে পারবে না, কারণ এটি একটি ভয়েস সিনথেসিস মাত্র। আবার, অ্যালেক্সা ভয়েস নকল করার জন্য তাকে যে এক মিনিটের একটি ক্লিপ শোনাতে হবে, তা হয়ত ওই ব্যক্তির জীবদ্দশায় করা। সেক্ষেত্রে তার সম্মতি ছাড়া মৃত্যুর পর তার ভয়েস ব্যবহার করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
এইসব প্রশ্নের ক্ষেত্রে অ্যামাজনের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, কেউ যদি চায় মৃত্যুর পর কারো ভয়েস এভাবে বাঁচিয়ে রাখতে, তাহলে তাকে স্বাগতম! সে অবশ্যই তাদের পুরো বিষয়টাকে পছন্দ করবে। কিন্তু কেউ যদি না চায়, সেক্ষেত্রে এটাও তার নিজস্ব পছন্দ।
“অ্যালেক্সার এই প্রযুক্তিটির শিক্ষা এবং বিনোদন খাতে ব্যবহারের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও এটি সহজে অনুমেয়, কীভাবে এই প্রযুক্তি অনুপযুক্তভাবে বক্তাদের ছদ্মবেশ ধারণ করতে এবং শ্রোতাদের প্রতারিত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে”, বললেন মাইক্রোসফটের এআই এথিক্স বিভাগের প্রধান নাতাশা। তাই বলা যায় প্রযুক্তিটি যেমন অনেক মানুষের মানসিক প্রশান্তি দিবে, কিন্তু এর অপব্যবহার অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীনও করতে পারে সমাজকে। তাই এখন দেখার বিষয় হলো, নতুন এই প্রযুক্তি আসলে আমাদেরকে কোন দিকে নিয়ে যায়!
জান্নাতুল মাওয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ টেক এক্সপ্লোর | Tech Explore, টেক রাডার | Tech Radar
+1
+1
2
+1
+1
+1
2
+1
+1