ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন তৈরীর পরিকল্পনাটি ছিল প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মস্তিষ্কপ্রসূত, যিনি 1984 সালে অন্যান্য কয়েকটি দেশের সহযোগিতায় একটি স্থায়ীভাবে বসবাসযোগ্য মহাকাশযান নির্মাণের প্রস্তাব করেছিলেন। 1998 সালে রাশিয়ান একটি রকেটে স্পেস স্টেশন-এর প্রথম অংশ (নিয়ন্ত্রণ মডিউল) মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে, পৃথিবীর 19 টি দেশের 200 এর অধিক নভোচারীর বাড়ি ছিল এই স্পেস স্টেশন। এই স্টেশনে মাইক্রোগ্র্যাভিটি গবেষণার জন্য একটি গবেষণাগার আছে। এখানে বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন উন্নয়ন নিয়ে গবেষণা হয়, পানি বিশুদ্ধ করাসহ ক্যানসারের মতো রোগের চিকিৎসা নিয়েও গবেষণা হয়।
গত দুই দশকে ISS বেশ কিছু ল্যান্ডমার্ক অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, 2018 সালে, NASA-এর কোল্ড অ্যাটম ল্যাবটি মহাকাশে বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট নামে পরিচিত পদার্থের পঞ্চম অবস্থা তৈরি করতে সক্ষম প্রথম সুবিধাকেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে। 2016 সালে একজন NASA মহাকাশচারী প্রথমবারের মতো মহাকাশে ডিএনএ সিকোয়েন্স করতে সক্ষম হন। উন্নত জল পরিস্রাবণ এবং পরিশোধন ব্যবস্থার পাশাপাশি মহাকাশ স্টেশনে শস্য উৎপাদনের সফল প্রচেষ্টা-এ সমস্ত অর্জন বিশ্বজুড়ে গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সরবরাহক হিসেবে কাজ করবে।
The @Space_Station has provided a unique opportunity for research and results for more than 20 years — that’s a lot of science!
The Biden-Harris Administration has extended operations for the orbital lab until 2030. Find out what we’ll be prepping for: https://t.co/zk6B5JIz9f pic.twitter.com/FMcmj0hfen
— NASA (@NASA) January 31, 2022
কীভাবে পরিচালিত হতো ISS?
ISS পরিচালিত হয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচটি মহাকাশ সংস্থার যৌথ উদ্যোগে। 2024 সাল পর্যন্ত এর কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও পরে 5 টি মহাকাশ সংস্থা এই স্টেশনের কার্যক্রম 2030 সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার বিষয়ে নীতিগতভাবে সহমত হয়। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল 15 হাজার কোটি ডলার। এটি পরিচালনা করতে নাসার প্রতিবছর 400 কোটি ডলার খরচ হয়।
নাসার কমার্শিয়াল লো আর্থ অরবিট প্রোগ্রাম অফিসের ম্যানেজার অ্যাঙ্গেলা হার্ট জানান, এ মুহূর্তে আরেকটা মহাকাশ স্টেশন বানানোর কোনো পরিকল্পনাই নেই নাসার, বরং আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের দায়িত্ব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়ে মঙ্গল আর চাঁদ নিয়ে গবেষণায় মনযোগ দিতে চায় নাসা।
নাসা ISS-এর জন্য একটি রূপান্তর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে কীভাবে এর ক্রিয়াকলাপগুলি শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে স্থানান্তরিত হবে। 4টি কোম্পানিকে 40 কোটি ডলার দিয়ে সাহায্য করবে নাসা যেন মহাকাশে স্পেস স্টেশন তৈরি করতে পারেন তারা। এদিকে বেসরকারিভাবে স্পেস স্টেশন তৈরিতে এগিয়ে গেছে চীন। মহাকাশে একটি ছোট শহরই তৈরি করে ফেলতে চায় চীন। চীনের তিয়াংগং স্পেস স্টেশন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের তুলনায় আকারে 5 গুণ বড় হবে। তাছাড়া আমাজন আর ব্লু অরিজিনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসও মহাকাশ স্টেশন তৈরিতে আগ্রহী।
ISS -এর চূড়ান্ত পরিণতি কী হবে?
NASA-এর বাজেট অনুমান অনুসারে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ISS-এর পুনঃপ্রবেশ ঘটবে 2031 সালের জানুয়ারিতে৷ মহাকাশযানটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনমানবহীন পয়েন্ট নিমো নামে পরিচিত একটি এলাকায় ডুবে যাবে, যা পুরনো মহাকাশযানের ভাগাড় হিসেবেই পরিচিত।
এই বিষয়ে পূর্ববর্তী লেখাটি পড়ুনঃ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন কি চিরস্থায়ী? কিভাবে হবে এর শেষ?
মোঃ গালীব হাসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নাসা