হতে পারে আপনি সেই মানুষদের একজন যারা বনাঞ্চলে নস্টালজিক হয়ে পড়েন। আপনার কল্পনায় বন হলো রূপকথার গল্পের মতো, যেখানে অসাধারণ সুন্দর দূর্গ, রাজকন্যাদের সহ চাঁদের আলোয় আলোকিত।
হতে পারে আপনি সম্পূর্ণ বিপরীত, আপনার কাছে অরণ্য হলো দুঃস্বপ্নও ভৌতিক সিনেমার সেটিং এর মত, ভীতিপূর্ণ জায়গা যাতে একবার প্রবেশ করলে আপনি কখনোই আর বের হতে পারবেন না।
প্রতিটি বনেরই কিছু আলাদা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে, তাই তাদের সকলকে একই হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয়। এখানে আপনাকে জানাচ্ছি বিশ্বজুড়ে পাঁচটি অসাধারণ বনের সম্পর্কে যা আপনাকে হয়তো শিহরিত করবে অথবা মুগ্ধ করবে।
১. ক্রুকড ফরেস্ট, পোল্যান্ড:
এই অদ্ভুত বনের দিকে একবার তাকালেই আপনি নিঃসন্দেহে হয়ে যাবেন কেন এটি আমাদের লিস্টে এসেছে। পশ্চিম পোল্যান্ডের ছোট্ট একটি কোণে এই আঁকাবাঁকা গাছে বন প্রায় ৪০০টি পাইন গাছ নিয়ে গঠিত। সবগুলো গাছের গোড়াতেই একটি ৯০ ডিগ্রি কোণের বক্ররেখা রয়েছে।
কেউ জানেনা গাছগুলো কেন এভাবে বেড়ে উঠেছে তবে বিজ্ঞানীদের ধারণাকৃত সর্বাধিক স্বীকৃত তত্ত্বটি হলো ১৯৩০ সালের দিকে কৃষকেরা এই গাছগুলো লাগিয়েছিলেন প্রাকৃতিক ভাবে বাঁকানো কাঠ তৈরির জন্য, যাতে তারা তাদের নির্মিত কোন সরঞ্জাম ব্যবহার করেছিলেন। সম্ভবত নৌকা তৈরির কাঠের জন্য। তবে কারণ যা–ই হোক না কেন এটি অবশ্যই দেখে বিমোহিত হবার মতো বনভূমি।
২. আকিগাহারা, জাপান:
জাপানের মাউন্ট ফুজির উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত “আকিগাহারা” বন তার ডাকনাম এর জন্যই অনেক বিখ্যাত। এই বনটি “সুইসাইড ফরেস্ট” এবং “মৃত্যুর জন্য নিখুঁত জায়গা” নামে পরিচিত।
আকিগাহারা সেই ভুতুড়ে বন গুলোর মধ্যে একটি যাতে একবার প্রবেশ করলে আপনি কখনো আর পালাতে পারবেন না, এক্ষেত্রে যদি আপনি মৃত্যুর উদ্দেশ্যেই যান। স্থানীয়রা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছেন, যেমন- তাদের উদ্দেশ্যে “আপনার জীবন আপনার বাবা–মায়ের পক্ষ থেকে একটি মূল্যবান উপহার” “দয়া করে একা ভুগবেন না, প্রথমে সমাধানের চেষ্টা করুন” এ ধরনের কথা লিখে রেখেছে, তারপরও ২০১৩-১৫ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। আকিগাহারা কেউ মারা যাবার জন্য পৃথিবীর দ্বিতীয় বিখ্যাত স্থান।
৩. হ্যালারবোস ফরেস্ট, বেলজিয়াম:
হ্যালারবোস ফরেস্ট সবচেয়ে মনোরম বনগুলোর মধ্যে অন্যতম। হ্যালারবোস বা “ব্লু ফরেস্ট” হিসেবে এটিকে প্রায় ই বলা হয়ে থাকে। এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত কয়েক লক্ষ “ব্লু বেল” ফুল গাছের মাঝে যেন কার্পেটের মতো বিছিয়ে থাকে।
ব্রাসেলস থেকে খুব দুরে নয়, এই স্বপ্নের মত বনটির আয়তন প্রায় ২.২৫ বর্গমাইল বা ৫.৮ বর্গকিলোমিটার।ঘূর্ণায়মান পথ ও বন্য হরিণ ও খরগোশের উপস্থিতি এই অরণ্যের পরিবেশকে রুপকথার মতো করে তুলেছে, যাতে যে কেউ হারিয়ে যেতে চাইবে।
৪. হোইয়া-বাকিয়ু বন, ট্রান্সিলভেনিয়া, রোমানিয়া
“ট্রান্সিলভেনিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল” হিসাবে খ্যাত, হোয়া-বাকিয়ু এক রহস্যে আবৃত। শুরুর দিকে, বনের গাছগুলি এলোমেলো জিগজ্যাগ ভাবে ও ঘড়ির কাটার দিকে বেড়ে ওঠা। বনের মাঝখানে একটি ডিম্বাকৃতির আকারের জমি যেটাকে পিয়ানা রোটুন্ডা (Poiana Routunda) বলা হয় – বা সহজভাবে, “দ্যা ক্লিয়ারিং” – যেখানে বলা হয় যে কিছুই বৃদ্ধি পায় না, জন্ম ও নেয়না আবার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও নেই।
(গুগল ম্যাপস দেখায় যে এটি আসলে একটি ঘাসে ঢাকা জায়গা, তবে গাছগুলি অঞ্চলটি এড়িয়ে চলেছে বলে মনে হয়)। যদি সেগুলি এতটা অদ্ভুত না হয় তবে খ্যাতি অর্জনের জন্য হোইয়া– বাকিয়্যু এর নাম সর্বপ্রথম আসে ১৯৬৮ সালে যখন একজন সামরিক প্রযুক্তিবিদ একটি ছবি তুলেছিলেন যাতে দাবী করা হয় “দ্যা ক্লিয়ারিং” এর উপর ঘোরাফেরা করছেন এমন একটি ইউএফও দেখা যাচ্ছে। সবাই মনে করে এই বনটি দুঃস্বপ্নের বন হিসেবে প্রথমদিকে থাকবে।
৫. সিংগি বন, মাদাগাস্কার
এমন বন “যেখানে কেউ হাঁটতে পারে না” বাক্যটিকে অনুবাদ করে, মাদাগাস্কারের সিংগি ফরেস্টের নামকরণ হয়েছে, যাতে বছরের পর বছর ধরে গ্রীষ্মমন্ডলীয় বৃষ্টিপাতের ক্ষয়ের ফলে গঠিত ৩০০ ফুট এলাকার চিটচিটে এবং চটকানো চুনাপাথরের শিলাগুলির একটি অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক দৃশ্য। প্রথম নজরে, এই পাথর অরণ্যটি বেশ শত্রুভাবাপন্ন বা ক্ষতিকর দেখা যায়, তবে এটি আসলে লেমুরের ১১ টি উপজাতি, ১০০ প্রজাতির পাখি, ৪৫ টি বিভিন্ন ধরণের সরীসৃপ এবং বিভিন্ন বন্যজীব এবং সবুজ গাছের আবাসস্থল। এই বনে হারিয়ে যাবেন না – কারন আপনি বের হবার কোনও “উপায়” পেতে হলে এই গাছগুলোয় আরোহণ করতে হবে।