‘এই রোগের জন্য সবধরনের চিকিৎসা তো করালি, এবার হোমিওপ্যাথি খেয়ে দেখ তো!’, আপনি যদি খাঁটি বাঙালী হন তাহলে এই কথা আপনি নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন।
হোমিওপ্যাথি নিয়ে আমাদের যেমনই মতামত থাকুক না কেন, হোমিওপ্যাথি কিন্তু বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা প্রায় সকলের জন্য। তবে হোমিওপ্যাথি নিয়ে অনেক অনেক মিথ প্রচলিত। মিথ মানে তো আমরা জানিই, মিথ হল একটি ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত কিন্তু মিথ্যা বিশ্বাস বা ধারণা। আর ফ্যাক্টস এমন একটি জিনিস যা জানা বা সত্য বলে প্রমাণিত। তাহলে এবার হোমিওপ্যাথির মিথ এবং ফ্যাক্টস নিয়ে আমার আজকের অপারেশন শুরু করা যাক!
মিথ: হোমিওপ্যাথি কেবল ভেষজ ওষুধ!
ফ্যাক্টস: না, হোমিওপ্যাথি ওষুধে ভেষজ উদ্ভিদ ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, রাসায়নিক পদার্থ, প্রাণীজ পদার্থ ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন ওষুধি উপাদান ব্যবহার করা হয়।
মিথ: হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন ধীরে ধীরে কাজ করে
ফ্যাক্টস: হোমিওপ্যাথিক খুব বেশি দ্রুত, আবার খুব বেশি ধীরেও কাজ করে না। কত দ্রুত কাজ করবে তা নির্ভর করে দুটো বিষয়ের উপরঃ
- সময়
- রোগের তীব্রতা (SOD)
হোমিওপ্যাথি সংক্রামক ডায়রিয়া, জ্বর, ফুসকুড়ি, হাঁপানির মতো সংক্রামক রোগে ভালো কাজ করে। দুর্ভাগ্যবশত, লোকেরা শেষ অবলম্বন হিসাবে হোমিওপ্যাথের কাছে যায় এবং ততক্ষণে রোগটি বেশ কিছুটা জটিল হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। তাই মূল বিষয় হল, “যত তাড়াতাড়ি আপনি একজন হোমিওপ্যাথের কাছে যাবেন, আপনার ফলাফল দ্রুত হবে”।
মিথ: হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সেবনের জন্য অবশ্যই একটি কঠোর ডায়েট অনুসরণ করতে হবে
ফ্যাক্টস: হোমিওপ্যাথিতে এমন কোন খাদ্য নিষেধাজ্ঞা নেই; তবে আপনি যে রোগে ভুগছেন তার প্রকৃতির জন্য বা ওই সম্পর্কিত ওষুধের সর্বোচ্চ কার্যকারিতার জন্য কিছু খাদ্যের উপরে বিধিনিষেধ প্রযোজ্য হতে পারে। বিধিনিষেধ সবসময় নির্দিষ্ট রোগের অবস্থার জন্য সাধারণ ব্যবস্থাপনা হিসাবে আসে। যেমন: ডায়াবেটিসে মিষ্টি এড়িয়ে চলা এবং উচ্চ কোলেস্টেরল আছে এমন রোগীদের তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা। শক্তিশালী কফি এবং ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
মিথ: হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার সময় আপনি অন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে ওষুধ গ্রহণ করতে পারবেন না
ফ্যাক্টস: প্রায় ৬০% রোগী যারা হোমিওপ্যাথি ওষুধের দিকে যান তারা ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, আইএইচডির মতো বিভিন্ন রোগের জন্য কিছু বা অন্য ওষুধ গ্রহণ করছেন; তাই হোমিওপ্যাথির সাথে প্রচলিত ওষুধ ব্যবহার করা কোন বাধা নয়। জটিলতা এড়াতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন যে ওষুধ গ্রহণের সময়ের মাঝে কি রকম পার্থক্য বজায় রাখা উচিত।
মিথ: হোমিওপ্যাথিক ওষুধে স্টেরয়েড এবং ভারী ধাতু থাকে
ফ্যাক্টস: হোমিওপ্যাথিতে স্টেরয়েডের কোনো স্থান নেই। যেহেতু সমস্ত উৎসের উপাদানগুলি potentisation এবং trituration প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, তাই এতে অপরিশোধিত ধাতব উপাদানগুলির একটি চিহ্নও থাকবে না। তবে হোমিওপ্যাথিক বড়িগুলি স্টেরয়েড পরীক্ষায় ইতিবাচক সাড়া দেয় কারণ অনেক প্রাকৃতিক উদ্ভিদ ড্রাগে প্রাকৃতিক স্টেরয়েড থাকে।
মিথ: হোমিওপ্যাথি সার্জারির বিরুদ্ধে
ফ্যাক্টস: যেসব রোগে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার খুব বা কাজই নেই, সেখানে সার্জারি করা আবশ্যক। যেমন দাঁতের গুরুত্বর সমস্যাগুলো। হোমিওপ্যাথিও প্রচলিত সব চিকিৎসার মতোই, এটা সার্জারির বিরুদ্ধে না।
মিথ: হোমিওপ্যাথি সব রোগ নিরাময় করে!
ফ্যাক্টস: কোন ওষুধই সব রোগ নিরাময় করতে পারে না। বরং ওষুধ আমাদের দেহকে সাহায্য করে উক্ত রোগের প্রতিরোধী হয়ে উঠতে।
মিথ: হোমিওপ্যাথি রোগ নিরাময়ের আগে রোগ বৃদ্ধি করে!
ফ্যাক্টস: সত্য না। শুধুমাত্র কিছু রোগ (যেমনঃ একজিমা) বেলায় হতে পারে তবে তা ৫% এর কম তাও যদি চিকিৎসক সঠিকভাবে ওষুধ নির্ধারন করে না দেন।
এতো মিথ নিয়ে কথা বললাম, তবে হোমিওপ্যাথির মূল নিয়ে কথা বলা এখনও বাকি। যে জিনিসটা নিয়ে দু’পক্ষের মারামারি লাগে তা একটু স্পষ্ট করার চেষ্টা করি। একদল, যারা মনে করেন হোমিওপ্যাথি মানেই প্লাসিবো বিজ্ঞান অর্থাৎ হোমিওপ্যাথি আসলেই কোন কাজ করে না, শুধুমাত্র মনের বিশ্বাস থেকে তাদের রোগ ভালো হয়।
আরেকদল মনে করেন, এ ক্ষেত্রে প্লাসিবো বিজ্ঞানই হলো মিথ। ফ্যাক্টস হলো হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় যা পোটেনাইজেশন নামে পরিচিত, যেখানে অপরিশোধিত (প্রাকৃতিক) ঔষধি পদার্থগুলিগুলোকে অধিক পাতলা (ultra-diluted) করা হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে, একটি নিরাময় হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে, বেশ কয়েকটি পরীক্ষা রয়েছে যা প্রমাণ করে যে হোমিওপ্যাথিক ডাইলিউশনে মূল ওষুধের ন্যানো পার্টিকেল থাকে।
নানা বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ এখানেই, যেহেতু এই ওষুধগুলি অতি মিশ্রিত করা হয় তাই তরলীকরণে মূল ওষুধের কোনও চিহ্ন নাও থাকতে পারে, তবে সমস্ত হোমিওপ্যাথিক ডাইলিউশনগুলি ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করার আগে ক্লিনিক্যালি মানুষের উপর পরীক্ষা করে নেয়া হয়।
১০ই এপ্রিল, আজ যেহেতু “হোমিওপ্যাথি ডে“, তাহলে আজ একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই নিই আমাদের আসলে কোন পক্ষে যাওয়া উচিত? আমাকে যদি সিদ্ধান্ত দিতে বলা হয়, আমি বলবো যেহেতু হোমিওপ্যাথি এতো বছর ধরে প্রচলিত একটা চিকিৎসা ব্যবস্থা, অনেক মানুষও উপকার পাচ্ছে, তাহলে আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিটাকে একদম হেয় করার কোন কারণ নেই। বরং এটা নিয়ে ভবিষ্যতে আরো অনেক গবেষণা করে কীভাবে হোমিওপ্যাথি কাজ করে, তা বের করা যেতে পারে। আর যেহেতু পরিমিত পরিমাণে গ্রহণে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কোন সাইড ইফেক্ট নেই, তাই আপনিও চাইলে পদ্ধতিটা সহজে গ্রহণ করে ফলাফল দেখতে পারেন।
তানজিনা সুলতানা শাহীন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: 1mg Team, Life Force, Medico Sage, Jims Homeo College, Health Mug
+1
2
+1
4
+1
3
+1
4
+1
8
+1
+1