৬ই আগস্ট, ১৯৪৫, সকালবেলা। সুমিতমো ব্যাংকের বাইরের সিঁড়িতে বসে, লাঠি হাতে অপেক্ষা করছিলেন “অচি মিতসুনো” নামের ৪২ বছর বয়সী এক নারী। খুব সম্ভবত সুমিতমো ব্যাংকে কাজের জন্য তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। বাকিরাও নিজেদের কাজে ব্যস্ত ছিল। কে জানতো সেই দিন এতো বিভীষিকাময় হয়ে উঠবে?
সুমিতমো ব্যাংকের থেকে মাত্র ৮৫০ ফিট দূরে সেদিন ৬ই আগস্ট সকাল ৮:১৫ তে মানব ইতিহাসে যু*দ্ধে ব্যবহৃত প্রথম পার*মাণবিক বো*মা ৯৭০০ পাউন্ডের “Little Boy” হিরোশিমা শহরে বি*স্ফোরণ ঘটায়। পুনরায়, ৯ই আগস্ট “Fat Man” নামক আরেক পা*রমাণবিক বো*মা নাগাসাকিতে আঘাত হানে। এই দুই বি*স্ফোরণে বহু মানুষ প্রাণ হারান আর অনেক অবকাঠামো এর ক্ষতিও হয়।
তবে পরবর্তী সময়ে অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়, সুমিতমো ব্যাংকের সিঁড়িতে তৈরি হাতের লাঠিসহ এক মানবছায়ার উপর। এই পরিচিত মানবছায়া “Shadow of Death” ( hitokage no ishi ) হিসেবে পরিচিত। আশেপাশের মানুষ তখন ধারণা করেছিল, বি*স্ফোরণে তৈরি অধিক পরিমাণ তাপ এর কারণে কোনো এক মানুষের দেহ বাষ্পীভূত হয়েছে আর সেই মানুষের দেহের শেষচিহ্ন হিসেবে সিঁড়িতে আপাত গাঢ় ছায়া তৈরি হয়েছে। মানুষটির পরিচয় সম্পর্কে তখন কারো জানা ছিল না।
তবে, তাদের এমন ধারণা সঠিক ছিল না। The National Museum of Nuclear Science and History(Albuquerque, New Mexico) এর Dr. Michael Hartshorne এই মানবছায়া তৈরির প্রকৃত কারণ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেন। সুমিমতো ব্যাংকের সিঁড়িতে থাকা মানবছায়া আসলে তৈরি হয়েছিল কোনো এক মানুষের দেহের আকার অনুসরণে। বি*স্ফোরণের অধিক তাপ আর তেজস্ক্রিয়তায় সিঁড়ির সব অংশ বিবর্ণ হয়ে যায়- তবে, সিঁড়ির উপর একজন মানুষের অবস্থানের কারণে সিঁড়ির নির্দিষ্ট একস্থানের পদার্থ বিবর্ণ না হয়ে তার স্বাভাবিক বর্ণ ধরে রাখে। অন্য কথায়, সেই ভয়ঙ্কর ছায়াগুলি আসলে পারমাণবিক বিস্ফোরণের আগে ফুটপাথ বা বিল্ডিংগুলিকে কমবেশি দেখতে কেমন ছিল তা নির্দেশ করে। আর তাই এমন মানবছায়ার তৈরি হয়। তবে কোনোভাবে মানবদেহ বাষ্পীভূত হওয়ার কারণে এমন শেষচিহ্ন তৈরি হতে পারবে না।
একই রকম উপায়ে, হিরোশিমা আর নাগাসাকির বি*স্ফোরণ পরবর্তী বিভিন্ন স্থানে বাইসাইকেল, খাম্বা আর অন্যান্য বস্তুর আড়ালে অভিন্ন ধরণের ছায়ার তৈরি হয়। যদিও হিরোশিমার সেই বি*স্ফোরণের সময় ৩০০০-৪০০০⁰ সেলসিয়াস তাপমাত্রা পাওয়া যায়- তবে, এই তাপমাত্রার প্রভাবে মানবদেহ ভস্মীভূত হতে পারে, তেজস্ক্রিয়তায় ত্বকে মারাত্মক ক্ষত হতে পারে, মৃত দেহের হাঁড়-মাংসের পুড়ে যাওয়া অবশেষ ঘটনাস্থলেই পাওয়া যেতে পারে।
তবে, সম্পূর্ণ দেহ বাষ্পীভূত হয়ে এমন মানবছায়া তৈরির তেমন সম্ভাবনা নেই। বি*স্ফোরণের পরে বহুবছর পর্যন্ত The Shadow of Death তার প্রকৃত অবস্থানে ছিল। পরে, মানবছায়ার সেই সিঁড়ি থেকে ৩.৩মিটার X২ মিটার অংশ কেটে নিয়ে Hiroshima Peace Memorial Museum তে প্রদর্শনীর জন্য সংরক্ষণ করা হয়। একসময় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ মানবছায়াটিকে “অচি মিতসুনো” নামের ৪২ বছর বয়সী এক নারীর দেহের ছায়া হিসেবে তথ্য প্রদান করেন- তবে তার বি*স্ফোরণের পরের পরিণতি কি হয়েছিল, তা নিয়ে সঠিকভাবে তথ্য প্রদান করতে পারেননি।
Fahad Mannan/ Own Correspondent
Source:
1. https://allthatsinteresting.com/hiroshima-shadows
2. https://en.wikipedia.org/wiki/Human_Shadow_Etched_in_Stone
3. https://www.livescience.com/nuclear-bomb-wwii-shadows.html