বিভিন্ন বই, সিনেমায় আমরা অনেকে সম্মোহন বা হিপনোটাইজড হওয়া নিয়ে পড়েছি এবং দেখেছি। এসব দেখে মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, সম্মোহন বা হিপনোসিস বলে কি আসলেই বাস্তবে কিছু আছে? কীই বা তার প্রয়োগ?
চলুন আজকে আমরা জেনে নিই এই সম্মোহন সম্পর্কে!
হিপনোসিস মূলত মানসিক থেরাপিতে ব্যবহার করা হয়। একজন দক্ষ হিপনোটিস্ট বা হিপনোথেরাপিস্ট এর সাহায্যে রোগীর মন একটি অতি শান্ত অবস্থায় পৌঁছায়। অনেকটা ঘোরে থাকার মতো। এ অবস্থায় হিপনোটিস্ট রোগীর মনকে নানারকম পরামর্শ দেয়। অবচেতন মনে গাঁথা এ পরামর্শগুলো রোগীকে বাস্তবজীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। আসল হিপনোথেরাপিতে কিন্তু সিনেমার মতো একটি পকেটঘড়ি চোখের সামনে নিয়ে দোলাতে হয় না!
তাহলে বাস্তবে কিভাবে হিপনোটাইজড বা সম্মোহন করা হয়?
কোনো একটি নির্দিষ্ট কথা বা শব্দের পুনরাবৃত্তি করে রোগীকে একটি ঘোরের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীও মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে এই প্রক্রিয়ায় সহযোগীতা করে। ঘোরের ভেতরে অবস্থান করা অনেকটা ঘুমের মতো। শুধু পার্থক্যটি হচ্ছে এক্ষেত্রে ঘোরের ভেতরেও রোগী তার চারপাশে কী হচ্ছে তা নিয়ে সচেতন থাকবে।
কেন্দ্রীভূত মনযোগ থাকার কারণে এ অবস্থায় আপনার অবচেতন মন এমন অনেক উপদেশও গ্রহণ করতে পারে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে আপনি হয়তোবা অগ্রাহ্য করে যেতেন। আর হিপনোথেরাপি এই মূলতন্ত্রটিই অবলম্বন করে।
একটি সফল হিপনোথেরাপি সেশনের পর আপনার হিপনোটিস্ট আপনার ঘোর ভাঙাবে, বা আপনি নিজেও মনের জোরে বাস্তবে ফিরে আসতে পারেন।
হিপনোসিস এর সময় মস্তিষ্ক কীভাবে প্রভাবিত হয়?
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই সময়ে মস্তিকের যে অংশ শরীরে কী হচ্ছে না হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করে সেটি বেশী কাজ করে। আবার যে অংশটি প্রতিক্রিয়া এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে সচেতনতায় কাজ করে সেটির কার্যক্রম কমে যায়।
হিপনোথেরাপি আসলে প্ল্যাসিবো ইফেক্ট-ও হতে পারে। হিপনোসিস এর মতো প্ল্যাসিবো ইফেক্ট-এও বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ এবং মনের বিশ্বাস মানুষকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তবে হিপনোসিসের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায়, যা প্ল্যাসিবো ইফেক্ট-এ যার না। সুতরাং বিজ্ঞানীরা এটিকে প্ল্যাসিবো ইফেক্ট-এর থেকেও শক্তিশালী মনে করেন।
স্বভাবত এ থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ হিপনোটিস্টের নেতৃত্বে পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে। তবুও মাঝে মাঝে রোগী
- মাথাব্যথা,
- মাথা ঘোরা,
- ঘুম ঘুম ভাব বা
- অস্থিরতা অনুভব করতে পারেন।
কী কী ক্ষেত্রে হিপনোসিস করা হয়?
বেশ কিছু মেডিক্যাল কন্ডিশনের জন্য বর্তমানে হিপনোসিস একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। গবেষণামতে, নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলো হিপনোসিস দিয়ে চিকিৎসা করার ব্যাপারে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
- পেইন
- ইরিটেবল বওয়েল সিনড্রোম
- পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার
- অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া
এছাড়াও এংজাইটি, ডিপ্রেশন, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, ওজন কমানো, সার্জারি পরবর্তী রিকভারি এসব ক্ষেত্রেও হিপনোসিস ব্যবহারে সীমিত সাফল্য পাওয়া গেছে।
সবাইকে কিন্তু হিপনোটাইজড করা সম্ভব না। এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর জনসংখ্যার আনুমানিক ১০ শতাংশ মানুষকে সহজেই সম্মোহিত করা যাবে। বাকিদেরকে করা যাবে না তা নয়, তবে তাদের মন সহজে এটিতে সাড়া দেবে না।
আবার হিপনোসিসের সময় মানুষ মিথ্যা বলে না এমন ধারণাও কিন্তু সঠিক নয়! হিপনোসিস কোন ট্রুথ সেরাম নয়। সম্মোহিত হলে আপনার বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করার প্রবণতা বাড়ে ঠিকই, কিন্তু তারপরও আপনি আপনার শরীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। সে সময়ে আপনার মন নিজে কোনকিছু করতে বা বলতে না চাইলে কেউ আপনাকে জোর করতে পারবে না।
হাসিনাত রিফা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
+1
4
+1
5
+1
1
+1
3
+1
1
+1
2
+1
3