শিরোনাম পড়ে অবাক হচ্ছেন, তাই তো? হাই তোলার মতো একটা সাধারণ ব্যাপার কিভাবে এতো মারাত্মক স্বাস্থ্যগত অবস্থা/ হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব ইঙ্গিত বহন করে? গুরুত্বপূর্ণ কোনো কথা বলার সময় কেউ যদি হাই তোলে, সেক্ষেত্রে আমরা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই যে, ওই ব্যক্তি নিশ্চয়ই মনোযোগ দিচ্ছেনা, সে হয়ত ক্লান্ত বা বিরক্ত। কিন্তু, হাই তোলার বিষয়টি কি কেবল বিরক্তি বা ক্লান্তির ভাব প্রকাশেই সীমাবদ্ধ!? আবার অনেক সময় আমরা এটাও দেখে থাকি যে আমাদের আশেপাশে কেউ একজন হাই তুললে আমরা তার দ্বারা প্রভাবিত হই। কেন এমনটা হয়? এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি?
হাই তোলার সময় অনেকে আবার নানারকম আওয়াজ করেন। হাত-পা ছড়িয়ে, পিঠ সোজা করে বড় করে হাই তোলেন। ঘুমের ঘাটতি হলে, ক্লান্তি-অবসাদ গ্রাস করলে, কাজের মধ্যে কোনও উত্সাহ খুঁজে না পেলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের হাই চলে আসে। তবে হাই তোলা নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা হল রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো ও অতিরিক্ত কার্বণ-ডাই-অক্সাইড বের করে দেওয়ার জন্য বার বার হাই উঠে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, হাই ওঠার আগে ও পরে রক্তে অক্সেজেনের মাত্রা একই থাকে।
বার বার হাই তোলার নেপথ্যে থাকতে পারে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের মত রোগ। আমাদের শরীর সব সময় ঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যখন আমাদের শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন বার বার হাই ওঠার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। একে থার্মোরেগুলেটরি ডিসফাংশন বলা হয়। স্ট্রোকের আগে বা পরে অতিরিক্ত হাই উঠতে পারে। এর সাথে অন্যান্য উপসর্গগুলি হল অসারতা, বাহুতে দুর্বলতা এবং কথা বলতে অসুবিধা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা ব্যায়ামের সময় খুব বেশি হাই তোলেন, বিশেষ করে গরমের দিনে তাদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ব্যাপক। তাছাড়া, মস্তিষ্কের নানান কোষ বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ঘনঘন হাই উঠতে পারে।
হাই তোলা কি ছোঁয়াচে? এ বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলে ?
হাই তোলার বিষয়টি ছোঁয়াচে বা কিছুটা সংক্রামক। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এ সম্পর্কে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন এবং তারা জানান, হাই নিয়ে চিন্তা, হাই তোলার দৃশ্য দেখা বা এ ব্যাপারে কিছু শোনার সময় একজন ‘সংক্রামক হাই’ তুলতে পারেন।
কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন কেন এমনটা হয়? হাই তোলা কেন এত ছোঁয়াচে? একজনের দেখাদেখি অন্যের হাই কেন ওঠে? বিশিষ্টদের মতে, এটা এক ধরনের সোশাল বিহেভিয়ার। এটা হওয়ার মূল কারণ আমাদের শরীরে মিরর নিউরনের ভূমিকা। সামাজিক ভাবে দলবদ্ধ আচরণ করতে মানুষ ভালবাসে। আদিমকাল থেকেই মানুষের অভ্য়াস দলগত ভাবে শিকারে যাওয়া, ঘুমানোসহ নানা কিছু। তারই প্রতিফলন এই দেখাদেখি হাই তোলা।
হিউম্য়ান বিহেভিয়ার খুব জটিল একটি বিষয়। বিশিষ্ট চিকিৎসক রবীন্দ্র জৈন বলেন, “কোন মহিলা বা শিশুকে মারলে আপনিও ব্য়থা অনুভব করেন। শারীরিক ভাবে না হলেও মানসিক ভাবে। এটা সমব্য়াথী বিহেভিয়ার। অনেকটা একইরকম ভাবে এই বিষয়টিও কাজ করে।” জেনে অবাক হবেন মাতৃগর্ভে থাকাকালেও একটি শিশু স্বাভাবিক হাই তুলতে পারে।
কী করলে ঘন ঘন হাই তোলা থেকে মুক্তি পাবেন:
-
ঘন ঘন হাই তুললে নাক দিয়ে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিন। তারপর মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন। কয়েকবার এমনটা করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে হাই ওঠা কমে গিয়েছে।
-
সোডা বা কার্বোনেটেড পানীয় হাই বন্ধ করতে সাহায্য করে।
-
দিনে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান।
-
ঘন ঘন হাই উঠলে খানিকটা হেঁটে নিন। তাতে শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি হবে। ক্লান্তি দূর হবে।
-
নিয়মিত যোগ-ব্যায়াম করুন। সকালের ব্রেকফাস্টে প্রচুর প্রোটিন আর ফাইবার-যুক্ত খাবার রাখুন। শাক-সবজি, ফল রাখুন দৈনিক খাদ্য তালিকায়।
কোন কোন রোগের সাথে অতিরিক্ত হাই তোলার যোগসুত্র রয়েছে?
হাই তোলা যে শুধুমাত্র হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সাথেই জড়িত এমনটি নয়, অন্যান্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার সাথে হাই তোলার যোগসূত্র রয়েছে। যেমন:
-
যকৃতের অকার্যকারিতা
-
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা
কাজেই বুঝতেই পারছেন অতিরিক্ত হাই তোলা বিষয়টি একদমই হেলাফেলার বিষয় নয়। বিশেষ করে রাতে ভাল করে ঘুমানোর পরও যদি ঘন ঘন হাই তোলেন তাহলে আর দেরি না করে অতি দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হন।
নিজস্ব প্রতিবেদক/ মোঃ গালীব হাসান
তথ্যসূত্র: Times of India | Excessive Yawning Can Be A Warning Sign Of An Impending Heart Attack