ওহাইয়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী ও অণুজীব বিজ্ঞানীদের একটি দল তিব্বতীয় মালভূমির গুলিয়া আইস ক্যাপ হতে হাজার হাজার বছরের পুরোনো ভাইরাস এর সন্ধান পেয়েছেন। গবেষণার জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২২০০০ ফুট উপরের আইস ক্যাপের চূড়া থেকে গবেষকেরা দুটি বরফের কোর সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে বরফের কোরগুলোকে তিন ফুট লম্বা ও চার ইঞ্চি ব্যাসের খণ্ডে কাটা হয়।
গবেষকেরা বরফ খণ্ডগুলো থেকে ৩৩ প্রজাতির ভাইরাস শনাক্ত করতে পেরেছেন। যার মধ্যে ২৮ প্রজাতির ভাইরাস পূর্বে কখনোই দেখা যায় নি। এ ভাইরাসগুলো সম্পূর্ণ নতুন এবং এদের টিকে থাকার ক্ষমতা অবাক করার মতো!
সবচেয়ে মজার এবং আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এসব পনেরো হাজার বছরের পুরোনো ভাইরাস গুলো কোন প্রকার ক্ষয় ক্ষতি ছাড়াই বিশাল বরফখণ্ডে বেঁচে ছিল এবং এদেরকে এত বছরে পৃথিবীর কোথাও, কখনো দেখা যায়নি। ফলে এত হাজার বছর পর ভাইরাসগুলো সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতি হিসেবে মানবজাতির কাছে ধরা দিয়েছে। তবে এখনকার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো- আবিষ্কৃত এই ভাইরাসগুলো জীবের প্রাণনাশে কতটা শঙ্কাময় অথবা এদের কোন উপকারই বা রয়েছে কি না। এছাড়াও জানার প্রয়োজন রয়েছে, ভাইরাসগুলোর উৎপত্তি কোথা থেকে, এদের দীর্ঘ জীবন লাভের রহস্যই বা কি?
ভাইরাসগুলোর উৎপত্তি ও জীবনকাল:
এই ভাইরাসগুলো সম্ভবত মাটি বা উদ্ভিদ হতে উদ্ভূত হয়েছিল, মানুষ বা প্রাণি হতে নয়। এদের বৈশিষ্ট্য হলো, তীব্র ঠাণ্ডায়ও এরা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। ফলে বরফের মাঝে এরা অবলীলায় বেঁচে ছিল। বলা যায় আইসকোর গুলো ছিল এদের সংরক্ষণাগার।
গবেষণার প্রধান ঝি পিং ঝং বলেন, “হিমবাহগুলো ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছিলো। ধূলো ও গ্যাসের পাশাপাশি বেশকিছু ভাইরাসও সেই বরফে জমা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এই জীবাণুগুলো পর্যবেক্ষণ করে তাদের বরফে জমা হওয়ার সময়ের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে”।
অতীত গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অণুজীবেরা বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একইসাথে জলবায়ুগত ও পরিবেশগত অবস্থাও নির্দেশ করে।
ধরণ:
প্রাপ্ত ভাইরাসগুলোকে পরিচিত ভাইরাসের সাথে তুলনা করে দলটি আবিস্কৃত ভাইরাসগুলোকে ব্যাকটেরিওফায হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বরফে সংগঠিত মিথেন চক্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকটেরিয়া মিথাইলোব্যাকটেরিয়ামকে এই ব্যাকটেরিওফায সংক্রমিত করতে পারে। ভাইরাসগুলোর আবাসস্থল উদ্ভিদ কিংবা মাটি। এই অঞ্চলের মিথাইলোব্যাকটেরিয়াম স্ট্রেইনে পাওয়া ভাইরাসের সাথে এদের তীব্র মিল ছিলো।
শঙ্কা:
বর্তমানে মহামারীর এ সময়ে আদিম ভাইরাসগুলোর আবিষ্কার উদ্বেগের বিষয়। তবে গবেষকেরা সংবাদ মাধ্যম CNN কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে মানুষের জন্য ক্ষতিকর না হলেও বেশকিছু শঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিপদ হলো গলিত বরফগুলো ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বিচ্ছিন্ন মিথেন ও কার্বনের বিশাল মজুদও পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও মাটির বা উদ্ভিদেরও ক্ষতি হতে পারে।
সম্ভাবনা:
অতীত থেকে পাওয়া ক্ষুদ্র জীবজগতের এই প্রমাণগুলো প্রাচীন বাস্তুতন্ত্রের ইতিহাস প্রকাশে সহায়ক হতে পারে। এছাড়াও বরফগুলো অতীতের পরিবেশগত পরিবর্তনসমূহ এবং ভাইরাসের বিবর্তনের ধারণা দিতে সহায়ক হবে।
হিমবাহের মতো চরম পরিবেশের ভাইরাস সম্পর্কে আমরা খুবই কম জানি। বৈশ্বিক উষ্ণতায় বরফ গলনের ফলে উক্ত পরিবেশের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ভাইরাস বা অন্যান্য অণুজীবের প্রতিক্রিয়া ঠিক কতটা হতে পারে কিংবা সেই বরফযুগ থেকে বর্তমানের উষ্ণ বিশ্বের বিবর্তন কীভাবে হয়েছে- এখনও খুঁজতে হবে অনেক প্রশ্নের জবাব!
মো. মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: CNN, Science Alert