১৯৮১ সালের ১২ এপ্রিল কেনেডি স্পেস সেন্টার, ফ্লোরিডা থেকে প্রথম স্পেস শাটল হিসেবে যাত্রা শুরু করে স্পেস শাটল কলাম্বিয়া। সেই সময়ই পু্নঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযানের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয়। তখন থেকে নাসা ১০০ টিরও বেশি মিশন যাত্রা করে তবে স্পেস মিশনের মূল খরচে সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। স্পেস শাটল বা রাশিয়ার অপুনঃব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান যেকোনটির যাত্রার জন্যই খরচ পড়ে প্রতি পাউন্ডে প্রায় ১০,০০০ ডলার (প্রতি কেজিতে ২২,০০০ ডলার)।
এ থেকেই বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন এমন একটি নতুন মহাকাশ পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে, যা জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিটে (Geostationary Earth Orbit-GEO) ভ্রমণকে দৈনন্দিন ঘটনায় রুপান্তর করতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও পরিবর্তন আনতে পারে। সেখান থেকেই এসেছে এই স্পেস এলিভেটর যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকেই সরাসরি ভ্রমণ করা যাবে মহাশূন্যে।
যেভাবে কাজ করবে স্পেস এলিভেটরঃ
স্পেস এলিভেটরের প্ল্যান অনুসারে মূল অংশে কার্বন ন্যানোটিউবের সংমিশ্রণে তৈরি একটি রিবন একপ্রান্তে যুক্ত থাকবে পৃথিবীতে, প্ল্যাটফর্মের সাথে ও অন্য প্রান্ত মহাকাশে প্রায় ৬০,০০০ মাইল (১০০,০০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারবে। রিবনের সাথে যুক্ত মেকানিকাল লিফটারটি রিবন বেয়ে কার্গো বা মানুষকে মহাকাশে নিয়ে যাবে। এতে খরচ পড়বে প্রতি পাউন্ডে মাত্র ১০০ থেকে ৪০০ ডলার (প্রতি কেজিতে ২২০ থেকে ৮৮০ ডলার)।
স্পেস এলিভেটর রিবন
স্পেস এলিভেটর এর ধারণাটি ভালোভাবে বোঝার জন্য টেথার বল খেলাটির কথা ভাবা যাক। খেলাটিতে একটি দড়ির একপ্রান্ত বাঁধা থাকে একটি পোলের সাথে এবং অন্য প্রান্তে একটি বল বাঁধা থাকে। স্পেস এলিভেটরের ক্ষেত্রে এই দড়িটাই হলো কার্বন ন্যানোটিউব সংমিশ্রণে তৈরি রিবন, পোলটি হলো পৃথিবী এবং বলটি হলো কাউন্টারওয়েট।
এখন ধরা যাক বলটিকে এত দ্রুত পোলের চারদিকে অনবরত ঘোরানো হচ্ছে যাতে দড়িটি সবসময় টানটান অবস্থায় থাকে। এটিই এই এলিভেটরের ধারণা। কাউন্টারওয়েট পৃথিবীর চারদিকে এমনভাবে ঘুরতে থাকে যাতে ক্যাবলটি টানটান থাকে এবং রোবোটিক লিফটারটি রিবনের মাধ্যমে উপর নিচে আসা যাওয়া করতে পারে।
এই এলিভেটর ডেভলপিং এর অন্যতম কোম্পানি লিফটপোর্ট এর ডিজাইন অনুযায়ী স্পেস এলিভেটরটি প্রায় ৬২,০০০ মাইল (১০০,০০০ কিলোমিটার) উঁচু। ২০০৬ এর অক্টোবর মাসে নিউ মেক্সিকোর লাস ক্রুসেস-এ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কয়েকটি দল এক্স-প্রাইজ কাপে স্পেস এলিভেটর গেমের জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, যার প্রথম পুরস্কার ৪০০,০০০ ডলার।
এলিভেটরটির কেন্দ্রবিন্দু হবে কার্বন ন্যানটিউবের রিবনটি যা মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার প্রশস্ত এবং কাগজের মতো পাতলা। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন ১৯৯১ সালে আবিষ্কৃত কার্বন ন্যানোটিউব হলো সেই বস্তু যা দিয়ে স্পেস এলিভেটর নির্মিত হতে পারে। স্পেসওয়ার্ড ফাউন্ডেশন এর ড. ব্রাডলি এডওয়ার্ডস এর মতে, “পূর্বে উপাদানের চ্যালেঞ্জটি অনেক বড় ছিল। তবে এখন আমরা কার্বন ন্যানোটিউব ও মেশিন তৈরিতে আরো সামনে এগিয়েছি, যা বিশাল দৈর্ঘ্যের রিবন তৈরি করতে পারে এবং মহাকাশে প্রসারিত হয়।”
কার্বন ন্যানোটিউবের স্টিলের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং এটি প্লাস্টিকের মতো নমনীয়। এর কারণ হলো এদের অনন্য কাঠামো। বিজ্ঞানীরা কার্বন টিউব থেকে তন্তু তৈরিতে সক্ষম হলে তা থেকেই এলিভেটরের রিবন তৈরি করা সম্ভব হবে। কিন্তু পূর্বে প্রাপ্ত উপাদানগুলো ছিল খুব দুর্বল অথবা খুব অনমনীয় যা সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে।
লিফটপোর্ট গ্রুপের রিসার্চ ডিরেক্টর টম নিউজেন্ট বলেন, “এদের স্থিতিস্থাপক গুণাঙ্ক এবং টেন্সাইল স্ট্রেংথ খুব উচ্চ। একটি উপাদানের এই বিষয়গুলোই স্পেস এলিভেটর তৈরিকে তুলনামূলকভাবে সহজ করে তোলে।”
একটি রিবন দুইভাবে তৈরি করা যেতে পারেঃ
১. কয়েক মিটার লম্বা কার্বন ন্যানোটিউব পাকিয়ে দড়ির মতো কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। ২০০৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ ন্যানোটিউবগুলোর দৈর্ঘ্য মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার।
২. ছোট ছোট ন্যানোটিউবগুলো পলিমার ম্যাট্রিক্সে স্থাপন করা যেতে পারে। তবে বর্তমান পলিমারগুলো কার্বন ন্যানোটিউবগুলোকে ভালভাবে আবদ্ধ করতে পারে না, ফলে টানের কারণে ম্যাট্রিক্স থেকে ন্যানোটিউবগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
২য় পর্বে থাকছে এই এলিভেটরটির কার্যপদ্ধতি, রক্ষণাবেক্ষন ও প্রভাব!
তন্ময় দাস/ নিজস্ব প্রতিবেদক