সম্প্রতি হয়ে যাওয়া একটি গবেষণার শেষে দুঃখজনক একটি সংবাদ দিয়েছেন একদল গবেষক। স্তন ক্যান্সার রোগীদের প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পর তাদের মৃত্যুঝুঁকি 60 শতাংশ বেড়ে যায়। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা হার্ট ফেইলিউর অর্থাৎ যে সমস্যাগুলোর কারণে রক্তপ্রবাহ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়, সেগুলো কিভাবে ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলোর উপরে প্রভাব ফেলে তা পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যেই গবেষণাটি করা হয়। গবেষণায় স্তন ক্যান্সারের প্রথম স্টেজে থাকা ১৭০০ এর বেশি রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো।
আমরা জানি আর্টারি দিয়ে সারা শরীরে হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়। যখন হার্ট অ্যাটাক হয় তখন আর্টারিগুলো ব্লক হয়ে যায়। এর ফলে স্তন ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে শরীরের যে ইমিউন সিস্টেম রয়েছে সেটি ধ্বংস হয়ে যায়।
স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে বন্ধ করে দিয়ে হার্টঅ্যাটাক স্তন ক্যান্সার কোষগুলোকে নতুনভাবে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ইমিউন সিস্টেমের টি- লিম্ফোসাইট কোষগুলো ন্যাচারাল কিলার (NK) হিসেবে পরিচিত যারা ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
রিসার্চাররা কার্ডিওভাস্কুলার হেলথ এবং স্তন ক্যান্সার এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করেছেন। কারণ প্রতিবছর আটজন আমেরিকান মহিলাদের মধ্যে একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। সর্বমোট সংখ্যাটা আরও ভয়াবহ।
পূর্ববর্তী রিসার্চগুলো প্রমাণ করে যে, কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন এর ফলে স্তন ক্যান্সার থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিন্তু রিসার্চাররা আগের নথি বের করে অবাক হয়ে যান। কারণ হার্ট অ্যাটাকের ফলে স্তন ক্যান্সারে কোনো প্রভাব রয়েছে কিনা এ বিষয়ে তারা কোন তথ্য পাচ্ছিলেন না। যেটি তাদেরকে এই রিসার্চটি করতে উৎসাহ দেয়।
পরীক্ষাটি করা হয় ইঁদুরের স্তনে ক্যান্সার কোষ ঢুকানোর মাধ্যমে এবং তাদের একটি করোনারি আর্টারি* কে ব্লক করে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, করোনারি আর্টারিতে মানবদেহে সবথেকে বেশি ব্লক হয়।
পরবর্তীতে অন্য একটি ইঁদুর স্তনে ক্যান্সার কোষ ঢুকানো হয় কিন্তু তাদের করোনারি আর্টারি ব্লক করে দেয়া হয়নি। দুই ক্ষেত্রের ফলাফল তুলনা করা হয়। গবেষকরা দেখতে পান, ব্লক বিহীন ইঁদুরগুলোতে ক্যান্সারের বিকাশ হয়নি বা কিছু ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম।
তবে রিসার্চের একটি আলোর দিকও রয়েছে। এটি স্তন ক্যান্সার রোগীদের হৃদপিণ্ডের দেখভালে বাড়তি সতর্কতা দেবে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করতে ক্যান্সার রোগীদের উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার পরিত্যাগ করতে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চার দিকে মনোযোগী হতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
*করোনারী আর্টারির মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে নিজের জন্য রক্ত প্রবাহিত হয় এবং সে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। অনেক ধরনের করোনারী আর্টারী থাকলেও সম্মুখদিকেরটায় মানবদেহে ব্লক দেখা যায় বেশি।
গোলাম কিবরিয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক