ভাইরাল হওয়া একটা সংবাদ, “টাংগাইলের স্কুলছাত্রী লাভলী হয়ে গেলো আব্দুল্লাহ জিসান”, টাঙ্গাইলের গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থী লাভলী আক্তার (১৫) মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হয়ে আব্দুল্লাহ জিসান নাম ধারণ করেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে নঠুরচর পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
কথা হচ্ছে কেন? এর সাথে আরও কয়েকটা প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।
১. এরা ট্রান্সজেন্ডার কিনা?
২. প্রাকৃতিকভাবেই কি তারা পুরুষ ছিলো?
৩. যদি প্রকৃতিগত ভাবেই পুরুষ থাকে, তাহলে সবাই নারী ভেবেছিলো কেন?
৪. জন্মগতভাবে পুরুষ হলে এতদিন প্রকাশ পায়নি কেন?
৫.পুরুষ হলেও তারা সন্তান জন্মদানে কতটা পারদর্শী হবে? শেষের চারটির উত্তর ক্রমান্বয়ে দেওয়া হবে। তার আগে প্রথম প্রশ্ন মাথায় এই মুহুর্তে আনবেনই না। কারণ এরা ট্রান্সজেন্ডার না, এরা জিনগতভাবে পুরুষ, আর দৃশ্যগতভাবে ছিলো নারী।
প্রথমে ভ্রূন হতে প্রজননতন্ত্রের বিকাশ সম্পর্কে জেনে নেই। মানুষের প্রজননতন্ত্র মূলত তিনটি ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়।
১.জেনিটাল ডাক্ট, যা পূর্ণাঙ্গ পুরুষে Mesonephric (Wolffian) Ducts ও মহিলাদের ক্ষেত্রে Paramesonephric (Mullerian) ducts এ রূপান্তরিত হয়।
২. জেনিটাল টিউবারকল যা পরবর্তীতে বাহ্যিক বিভিন্ন যৌনাঙ্গে(যেমনঃ Penis, Clitoris) পরিণত হয়। মূলত বাহ্যিক বিভিন্ন যৌনাঙ্গের ওপর ভিত্তি করেই জন্মের সময় লিংগ নির্ণয় করা হয়।
৩. গোনাড– এটি পুরুষের ক্ষেত্রে টেস্টিস ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ওভারিস হিসেবে পরিণত হয়৷
এখন আমরা সকলেই জানি, বায়োলজি বইয়ে পড়ে এসেছি, মেয়েদের ক্রোমোজম XX, ও পুরুষের ক্ষেত্রে তা XY. কিন্তু কথা হচ্ছে, ভ্রূনের ছয়-সাত সপ্তাহ পর্যন্ত এর লিংগ নির্ধারণ করা যায় না। এটিকে বলা হয় Indifferent Stage. মূলত, ভ্রূণকে পুরুষে রূপান্তরিত করার জন্য যে ফ্যাক্টর দায়ী তা হলো SRY জিন। SRY কী- Sex-determining Region of the Y- chromosome. এই SRY জিন ছাড়া যেকোনো ভ্রূণ নারী হিসেবে বিকশিত হবে।

এখন মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। SRY জিনের ফলে একটা ভ্রূণ পুরুষে বিকশিত হতে শুরু করে ঠিকই, কিন্তু কথা হচ্ছে, এই পুরুষ ভ্রূনের বিভিন্ন যৌনাঙ্গ বিকশিত করার জন্য কিছু হরমোন কাজ করে, আর তা হলো DHT (Dihydro-testosterone)। ভ্রূনে টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে DHT তৈরি হয়।
এখন, আজকের আলোচনা যাদের নিয়ে, তাদের ক্ষেত্রে এই DHT ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। একটু চক্রটা জেনে নেওয়া যাক- ক্রোমোজোমে SRD5A2 জিনে মিউটেশনের কারণে 5-alpha reductase এনজাইম উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে টেস্টোস্টেরন হরমোন পর্যাপ্ত থাকলেও এই 5-alpha reductase এর অপ্রতুলতার কারণে পর্যাপ্ত DHT তৈরি হয় না বা অল্প থাকে। DHT হরমোন অল্প থাকায় পুরুষাঙ্গ সুস্পষ্ট হয় না। এর ফলে সেই ভ্রূণটা নারীরূপেই বড় হতে লাগলো। এরূপ অবস্থাকে Guevedoces বা 5 -alpha reductase deficiency বলে। কিন্তু গণ্ডগোলটাই এখানে। দেখা যাচ্ছে ক্রোমোজমে XY, কিন্তু শিশু জন্মের সময় দেখেছেন তার কোনো পুরুষ যৌনাঙ্গ (পেনিস, টেস্টিস) নেই।
এখানে আমরা যেটাকে Clitoris মনে করছি, তা আসলে Undeveloped Penis, ব্যক্তির তলপেটে জরায়ুর দিকে থাকে Undeveloped Testes. প্রথমদিকে এইগুলোকে নারীদের যৌনাঙ্গ বলে মনে হলেও পরে বয়ঃসন্ধিতে যখন টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়তে থাকে, তখন এই পুরুষ যৌনাঙ্গ + বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেতে থাকে।
এখন গুয়েভেডোসদের প্রজনন ক্ষমতা কম থাকে, ইন্টারকোর্সের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে জটিলতাতেও পড়তে পারে৷ আরেকটা যে বিষয় এই ক্ষেত্রে আসে, তা হলো AIS. AIS কী? AIS এর পূর্ণরূপ হলো- Androgen insensitivity syndrome – AIS). আগেই জেনে এসেছি, গুয়েভেডোসদের বাহ্যিক নারী যৌনাঙ্গ হতে পুরুষ যৌনাঙ্গতে রূপান্তরিত করতে টেস্টোস্টেরন এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনঃ টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশন কিভাবে ঘটে?
কিন্তু AIS এ আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই টেস্টোস্টেরন নিষ্ক্রিয় থাকে। X ক্রোমোজমে ত্রুটির কারণে এদের দেহ হয়ে যায় অ্যান্ড্রোজেন রেজিস্ট্যান্ট, এর ফলে টেস্টোস্টেরন সংবেদনহীন থাকে শরীর৷ যার ফলে XY ক্রোমোজমবিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন না থাকায় এদের মধ্যে পুরুষাঙ্গ উন্মোচনের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এই AIS কে টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশন-ও বলা হয়ে থাকে।
এখন প্রথম প্রশ্নে ফিরে যাই। এরা ট্রান্সজেন্ডার কিনা? এখানে যারা Guevedoces, তারা প্রকৃতিগতভাবেই পুরুষে বিকশিত হয়, কিন্তু যারা AIS এর রোগী, তারা চাইলে নারী হিসেবে থাকতে পারে, কিংবা চাইলে সার্জারির মাধ্যমে পুরুষে রুপান্তরিত হতে পারে। তবে এদের মধ্যে একটাই মিল, তা হলো প্রত্যেকেরই ক্রোমোজম XY নিয়ে, অর্থাৎ, জেনেটিক্যালি তারা পুরুষ৷
Source: https://www.livescience.com/52247-guevedoces-girls-boys.html
মিথিলা ফারজানা মেলোডি/নিজস্ব প্রতিবেদক