ইউটিউবে ‘emotional baby’ ভিডিওটি এখনো দেখেননি?! শেষ আপডেট বলছে মোটামুটি ২৫ মিলিয়ন মানুষ ভিডিওটি দেখে ফেলেছে। যারা দেখেননি তাদের জন্য ছোট একটা স্পয়লার…একটা বাচ্চা ভেজা ভেজা চোখে হাসছে যখন তার মা একটা সুন্দর গান গাইছিলেন।
এটা সুর, ছন্দ এবং সর্বোপরি সুন্দর গানের একটা গোপন শক্তিকে তুলে ধরে, বিজ্ঞানীরা আরো বলেছেন, সুরের ভেতর এমন কিছু আছে যা আমাদের মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে তোলে। এ প্রসঙ্গে Institute for Music and the mind এর ডক্টর লরেল ট্রেইনর এর সাথে কথা বলেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনের একজন প্রতিনিধি।
ভিডিওতে আসলে এটি পরিষ্কার নয় বাচ্চাটি আসলে কোন ধরণের উদ্দীপকের প্রতি সাড়া দিয়ে এমন করছে, এটা হতে পারে গানের সুর ওঠানামা বা হতে মায়ের মুখোভঙ্গী। তবে এটা পরিষ্কার যে, বাচ্চারা কিছু নির্দিষ্ট ধরণের সুর এবং কণ্ঠ পছন্দ করে।
বিজ্ঞানী ট্রেইনর বলেন, “গান বা সুর এর ব্যাপার নির্ভর করে আসলে বাচ্চাটি কয়টি সুর শুনতে পারছে এবং এই শোনার উপর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছে। তবে, কিছু জিনিস আমরা বুঝতে পারি যেমন বাচ্চারা রাগী রাগী গলার স্বর থেকে হাসি হাসি গলা খুব পছন্দ করে। তবে বিশ্বজুড়ে বাচ্চাদের জন্য যে গানগুলি তৈরি করা হয়, তাদের পছন্দের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় গানগুলি হয় সংলাপধর্মী, প্রচুর রিপিটেশন হয়, পিচ সাধারন হাই স্কেলে সেট করা হয়, টেম্পো (গানের গতি) খুব কম হয় আর সর্বপরি তাতে যোগ করা হয় একটা ভালবাসা এর সুর”। (বিশ্বাস না হলে ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি টাইপ গানগুলো একটু শুনে দেখুন)
বাচ্চাদের জন্মগত সুর পছন্দ অপছন্দের কথা যদি বলা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে সুসঙ্গত সুর টাই তারা বেশি প্রাধান্য দেয়। বাচ্চাদের কান সাধারণত শব্দ গ্রহণের জন্য যথেষ্ট ম্যাচিউর থাকে, তাই এটা আশ্চর্যের নয় যে তারা এ বিষয়ে খুব সংবেদনশীল। বাচ্চারা একই সাথে টেম্পো এর পার্থক্য করা এবং একই গান দুই টেম্পোতে শোনার মাঝে পার্থক্য করতে পারে।
তারা পিচ এর ওঠা নামাও শনাক্ত করতে পারে, কারণ পিচ এর ওঠানামা মেলোডি একটু পরিবর্তন করে দেয়। আবার ভুল নোট বাজানো হলেও বাচ্চারা এটা শনাক্ত করতে পারে। এখন গানের ডাইভারসিটি বিবেচনা করে একটা প্রশ্ন আসতে পারে সেটা কি দেশ বা অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হতে পারে কিনা? দেখা গেছে, ভাষাগত বা অঞ্চলভেদেও শিশুর সুরের প্রতি সংবেদশীলতার কোন পার্থ্যক্য হয়না।
এইবার আসা যাক মিউজিক বা সুর ব্যাপারটা শিশুর মস্তিষ্কে কেমন প্রভাব ফেলে বা আদৌ কোন ভূমিকা রাখে কিনা…
“আমাদের গবেষণা বলছে যে, কোন সুরের কোন ছন্দবদ্ধ সংকলন শিশুর কথা বলতে এবং কথা ধরতে পারার সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এর মানে এই যে, সুরের সাথে প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকা শিশুদের কনগনিটিভ স্কিল বা বাচিক ক্ষমতার উপর একটি বিশাল ভূমিকা আছে”, গবেষণাটির নেতৃত্বে থাকা বিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা ঝাও কথাটি বলেন।
“শিশুরা এমন এক জটিল পৃথিবীতে আসে যেখানে বিভিন্ন সংবেদ যেমনঃ শব্দ, আলো আর স্পর্শের অনুভূতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। সেখানে একটি শিশুর কাজ হয় এই পরিবর্তনের একটি প্যাটার্ন শনাক্ত করা এবং একটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্তে আসা যে এরপর কি হতে চলেছে। এই প্যাটার্ন ধরতে পারা কগনিটিভ স্কিল এর একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ। এবং এর উন্নতি শিখনের জন্য অনেক সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখবে”।
সুরের মত ভাষারও কিছু ছন্দবদ্ধ প্যাটার্ন থাকে। কথা বলার এর টাইমিং ও সে সময়ের গলার স্বর শ্রোতাকে বুঝতে সাহায্য করে কোন অর্থে কোন বাক্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং এই ক্ষমতা একটা শিশুকে স্পিচ সাউন্ডের ডিফারেন্স বুঝতে সাহায্য করে এবং পরিশেষে এটি তাকে কথা বলতে সাহায্য করে।
গবেষণা চলাকালীন সময়ে,৩৯ জন শিশুকে দৈবচয়নে ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়। ২০ জন শিশুকে প্রায় এক সপ্তাহ সুর এবং সংযুক্ত অন্যান্য নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়। বাকি ১৯ শিশুকে এমন কিছুই দেওয়া হয়নি, বরং সাধারণ খেলনা দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ পর যখন তারা গবেষকদের কাছে আবার ফিরে আসে তখন তাদের Magnetoencephalography (MEG) নামে এক যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয় যার সাহায্যে তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন এ্যাকটিভিটি পরীক্ষা করা হয়।
গবেষকরা মস্তিষ্কের অডিটরি কর্টেক্স এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে ফোকাস করেন। পরীক্ষার সময় বাচ্চাদের সামনে কিছু বিচ্ছিন্ন শব্দ বাজানো হয়, এবং গবেষকরা খেয়াল করেন সুর এর অভিজ্ঞতা আছে এমন শিশুরা এই সব সুরের প্রতি শক্তিশালী রেস্পন্স দেখায়। অর্থাৎ তাদের কোনো শব্দ শনাক্ত করার ক্ষমতা বেড়ে গেছে।
তো, শিশুদের উপর সুর এবং গানের যে একটি উপকারী প্রভাব আছে তা আমরা অনুধাবন করালাম। এখন বাড়িতে এসব কি করে সম্ভব?
কিছু টিপস দেইঃ
বাচ্চাকে উৎসাহিত করুন কোন কিছু দিয়ে আঘাত করে শব্দ সৃষ্টি করতে। আইস্ক্রিম এর খালি কন্টেইনার কে ড্রাম হিসেবে ব্যবহার করে কাজটা করা যায়।কিংবা কোন চাইল্ড ফ্রেন্ডলি র্যাটল বা শেকার ব্যবহার করা যায়। নিজে বাজিয়ে তাকে শোনাতে পারেন এমন যন্ত্র থাকা আরো ভাল আইডিয়া।ইন্সট্রুমেন্টাল কল এন্ড রেসপন্স গেম খেলতে পারেন। মাঝে মাঝে গাইতে ভুলবেন না এবং শিশুকেও গাইতে উৎসাহিত করুন।
ঋভু/ নিজস্ব প্রতিবেদক