যদি কংক্রিটে তৈরি বিশালাকার দালানে ব্যাটারির মত বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রাখা যেত, তবে কেমন হতো বলেন তো! হ্যা, ব্যাপারটা অনেক রোমাঞ্চকর হবে। আর এমনই এক অনন্য আইডিয়া নিয়ে গবেষণা করছে সুইডেন এর Chalmers University of Technology. তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে তারা সুদূর ভবিষ্যতে এই ধারণাকে বাস্তবে রূপদানের আশা ব্যক্ত করেছেন।
ক্রমবর্ধমান বাজার চাহিদা মেটাতে, টেকসই নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ এবং গবেষণায় বরাবরই বেগ পেতে হয় গবেষকদের। কিন্তু এই নতুন ধারণা হতে পারে একটি মাইলফলক।
বিশ্ববিদ্যালয় এর পক্ষথেকে Doctor Emma Zhang এবং Professor Luping Tang অনেক বছর আগে থেকেই এমন দালান নির্মাণসামগ্রী তৈরির গবেষণা করে যাচ্ছেন যা বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবে। এবং এটাই বিশ্বের প্রথম সিমেন্ট নির্ভর রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরির ধারণা। তারা এর একটা প্রোটোটাইপ তৈরিতেও সক্ষম হয়েছেন।
মূলত সিমেন্টের সাথে কার্বন ফাইবার (০.৫%) যুক্ত করে সিমেন্টের পরিবাহিতা এবং নমনীয়তা বৃদ্ধি করা হবে। পরে এর মাঝে দেয়া হবে লোহা খচিত কার্বন ফাইবার জাল। যেখানে, লোহা অ্যানোড এবং নিকেল ক্যাথোড হিসেবে কাজ করবে।
Emma Zhang বলেন, পূর্বে করা এরূপ গবেষণা তেমন আশানুরূপ ফলাফল দিতে পারেনি। তবে তাদের এই গবেষণায় তাদের কাছে ল্যাব এ পরীক্ষিত প্রোটোটাইপ রয়েছে। তাই তারা খুবই আশাবাদী, যে শীগ্রই হয়তো এটা বাস্তবে করা সম্ভব হবে। তাদের গবেষণাগারে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি এই রিচার্জেবল ব্যাটারি-র বিদ্যুৎ সংরক্ষণ সক্ষমতা প্রতি বর্গমিটারে ৭ ওয়াট প্রতি মিনিট। এটি যদিও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাটারি থেকে কম তবে চূড়ান্ত ফলাফল আশাকরি আশানুরূপ হবে।
তবে কি এটি বিদ্যুৎ সংরক্ষণ সমস্যার অবাসান ঘটাবে?
সিমেন্ট নির্মিত এই ব্যাটারির সবচেয়ে বড় সক্ষমতা হচ্ছে এটি রিচার্জেবল। কিন্তু সংরক্ষণ সমস্যার অবসান ঘটাবে কিনা তা নির্ভর করে এর পরবর্তী উন্নততর সংস্করণ তৈরি এবং বানিজ্যিক ব্যবহার এর উপর। তবে নিঃসন্দেহে এটি অনেক সমস্যার অবসান ঘটাবে। যেমন: এটি দ্বারা সহজেই এবং নিরাপদভাবে দূরবর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ সংরক্ষণ সম্ভব।
এছাড়াও এটি দ্বারা সেলফোন টাওয়ারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে 4G তরঙ্গ বিতরণ সম্ভব। এতে করে প্রত্যন্ত এলাকায় ও 4G সেবা দেয়া সম্ভব হবে তাছাড়া এটাকে সোলার প্যানেল এর সাথে জুড়ে দিয়ে রিচার্জ করা যাবে। আরেকটি মজাদার ফিচার হচ্ছে, দেয়ালে কোথাও ছেদ বা ক্ষয় হলে সহজেই সেন্সর পর্যবেক্ষণ দ্বারা নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
এটি মূলত বিদ্যুতের প্রচলিত সংরক্ষনাগার এর বিকল্প হতে পারে, যা দুর্যোগ কালীন সময়ে আশীর্বাদ স্বরূপ কাজ করবে।
এখন প্রশ্ন আসে এটা কতটা টেকসই!
যেহেতু এই ধারণাটি এখনো গবেষণাধীন তাই এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। সাধারণত কংক্রিট নির্মিত স্থাপনা ৫০ বছর থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত টিকে। তাই গবেষকরাও এই নতুন উপাদানে তৈরি স্থাপনা যেনো সমপরিমাণ সময় টিকে সেই গবেষণাই করছেন। এমনকি তারা এ নিয়ে অনেক আশবাদীও।
জোবায়ের হোসেন সামস/ নিজস্ব প্রতিবেদক