আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উষ্ণ মরুভূমি হলো সাহারা মরুভূমি। যদিও আমরা কম-বেশি এই মরুভূমি সম্পর্কে জানি, তাও কিছু তথ্য যুক্ত না করলেই নয়! যেমন- সাহারা পুনরায় সবুজ হয়ে উঠলে পৃথিবীতে কি কি পরিবর্তন আসতে পারে?
সাহারা মরুভূমির আয়তন প্রায় চুরানব্বই লক্ষ বর্গ কিলোমিটার, যা প্রায় চীনের সমান এবং পৃথিবীর মোট ভূমির ৮%। সাহারা মরুভূমি আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত এবং এটি ১২টি দেশ জুড়ে বিস্তৃত। সাহারার গড় বার্ষিক তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এই এলাকায় সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমির অন্তর্গত লিবিয়ার ‘আল-আজিজিয়া’ হচ্ছে পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান, যেখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সর্বোচ্চ ৫৮° সেলসিয়াস।
সাহারা মরুভূমিতে এত বেশি বালি আছে যে তা দিয়ে সমগ্র পৃথিবীকে ৮ ইঞ্চি পুরু করে ঢেকে ফেলা সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে, সাহারার সিংহভাগই অনুর্বর, পাথুরে মালভূমি, সেইসাথে রয়েছে বালির টিলা, পাহাড় এবং শুষ্ক উপত্যকা। নীলনদ বাদে সাহারায় যেসব নদী ও স্রোত পাওয়া যায় তার সবই ঋতুভিত্তিক। সাহারাতে ২০ টিরও বেশি হ্রদ রয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই নোনা জলের হ্রদ। চাদ হ্রদ মরুভূমির একমাত্র মিঠা পানির হ্রদ। সাহারার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল ইমি কৌসি, যা ৩৪১৫ মিটার।
সাহারার জনসংখ্যা মাত্র ২.৫ মিলিয়ন। যারা সাহারায় বাস করে তারা প্রধানত যাযাবর। স্থানীয় ‘তুয়ারেগ’ জাতির লোকেরা বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সাহারা মরুভূমিতে ৭০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯০ প্রজাতির পাখি, ১০০ প্রজাতির সরীসৃপ আর কিছু আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণী বসবাস করে।
জানার বিষয় হলো, একসময় সাহারা মরুভূমি ছিলো না। এটি ছিল সবুজে ঘেরা, বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর আবাসস্থল। এই পরিবর্তন ঘটে আনুমানিক ৫০০০ বছর আগে, মৌসুমী বায়ুপ্রবাহের পরিবর্তনের ফলে। আরেকটি কারণ দেখানো হয়, যা হলো- প্রতি ২০ হাজার বছর পর পর সাহারা মরুভূমি জলাভূমি ও তৃণভূমিতে পরিণত হয়। এর কারণ হলো পৃথিবী প্রতি ২০ হাজার বছর পর পর তার নিজ কক্ষপথের সামান্য উত্তর দিকে কাত হয়ে যায়। ফলে পৃথিবীর মৌসুমী বায়ুর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। আর ঠিক সে সময়ে সাহারা মরুভূমিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে এ অঞ্চল সবুজে পরিণত হয়। মনে করা হয় যে সাহারা মরুভূমি ভবিষ্যতে কোন এক সময় আবার সবুজ হয়ে উঠবে।
এখন আসি মূল আলোচনায়, সাহারা পুনরায় সবুজ হয়ে উঠলে বা কৃত্রিমভাবে কোন প্রজেক্টের মাধ্যমে সাহারাকে পুনরায় সবুজ করে তুললে, পৃথিবীতে কি কি পরিবর্তন আসতে পারে?
প্রথমত প্রায় চীনের সমান আয়তনের একটা মরুভূমিকে গাছে ভরিয়ে তোলা সহজ কাজ না, যদিও কাজটা সম্ভব করার পরিকল্পনা চলছে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে এটি পৃথিবী থেকে প্রতিবছর ৭.৬ বিলিয়ন টন বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন অপসারণ করতে পারবে। আমরা জানি, গাছপালা পৃথিবীর ফুসফুস। ১০০০০০ কিলোমিটার (৬২,০০০ মাইল) গাড়ি চালানোর মাধ্যমে আপনি যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করবেন, সম পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড এক হেক্টর গাছ শোষণ করতে পারে। তাহলে চিন্তা করুন লক্ষ লক্ষ হেক্টর গাছ যুক্ত হলে তা জলবায়ু পরিবর্তনে কতটা ভূমিকা রাখবে!
সাহারার গাছের শিকড় স্থিতিশীল হতে শুরু করলে, মাটিও প্রয়োজনীয় পুষ্টির সাথে উর্বর হয়ে উঠবে। বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং সাহারার সামগ্রিক তাপমাত্রা ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস শীতল হবে। এখন কথা হচ্ছে সুবিধা সব পেলাম, কিন্তু বড় একটা ক্ষতিও আছে। প্রথমত, লক্ষ লক্ষ নতুন গাছ লাগানোর ফলে এই অঞ্চলটি ভেজা হয়ে যাওয়ার ফলে পঙ্গপালের উপদ্রবের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে প্রধান যে সমস্যাটা দেখা দিবে তা হল, আমরা আমাজন রেইনফরেস্ট হারাবো। কীভাবে?
বাতাস প্রতি বছর গড়ে ১৮২ মিলিয়ন টন ধূলিকণা সাহারার পশ্চিম প্রান্তের পার্শ্বে থেকে আমাজনে উড়িয়ে নিয়ে যায়। বাতাসের মাধ্যমে বালি গুলো আসার পথে দেখা হয় আটলান্টিক মহাসাগর এবং বৃষ্টির সাথে। এখান থেকেই প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা সংগ্রহ করে। বৃষ্টি আর ধুলোর কম্বো আমাজন রেইনফরেস্টে পড়ে, যা প্রয়োজনীয় সার এবং বাস্তুতন্ত্রকে তার প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করে, যা আমাজন রক্ষার্থে খুবই প্রয়োজনীয়। তাহলে বুঝলাম যে, সাহারা মরুভূমি না থাকলে আমাজনও থাকবে না। আর আমাজন না থাকলে তা আমাদের অস্তিত্বে কতখানি প্রভাব ফেলতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না!
তাহলে এখন সাহারা মরুভূমি সবুজ পরিণত করা, নাকি আমাজনকে রক্ষা করা, কোনটি আমাদের করা উচিত বলে আপনাদের মনে হয়?