সাবলিমিনাল মিউজিক শুনে কেউ ওজন কমাচ্ছে,কেউ ব্রন থেকে মুক্তি পাচ্ছে-এমন নিউজ বা ভিডিও নিশ্চয়ই এ কয়েকদিনে আপনার চোখে পড়ছে। মানে কি? এটা আবার কেমন মিউজিক যে ওজন কমাতে সাহায্য করছে? তাহলে বিষয়টি সম্পর্কে একটু জানা যাক।
মূলত সাবলিমিনাল ম্যাসেজ বা সাবলিমিনাল মিউজিক ল্যাঙ্গুয়েজে এমন কিছু থাকে,যা দ্বারা মানুষের আবেগ, ধ্যান ধারণা, চিন্তাধারা, বিশ্বাস ইত্যাদি বিশেষ কৌশলে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়। অর্থাৎ মানুষের অবচেতনমনকে একটি নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়।
এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আমাদের অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করে লাভ কি?
-অনেক লাভ।যেমন আপনাকে সবাই কোন একটা ভালো কাজ করতে খুব মোটিভেট করছে,আপনিও বুঝতে পারছেন যে,কাজটা আপনার করা উচিৎ। কিন্তু কাজটা আপনার কিছুতেই করা হচ্ছে না কারণ আপনার সচেতন মন কাজটা করতে চাইলেও,অবচেতন মন তা চায় না।তাহলে বুঝাই যাচ্ছে আমাদের অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ না।যদিও এর পিছনেও কয়েকটি কারণ আছে।যেমনঃঅবচেতন মন আমাদের পূর্বের সকল অভিজ্ঞতা, মূল্যবোধ, জ্ঞান, আবেগ, বিশ্বাস ও দক্ষতাকে ধারণ করে।যদি আমরা কোন কাজে বার বার ব্যর্থ হই এবং একটা বিশ্বাস তৈরি করে নিই যে,কাজটা আমি পারবো না।তাহলে অবচেতন মনও পরবর্তীতে ঐ কাজটা করতে সহজে রাজি হবে না।
অবচেতন মনের কাছেই থাকে আমাদের আবেগের নিয়ন্ত্রণ।আর আমরা বাঙালিরা যদি কোন কাজের বিরুদ্ধে আবেগি কোন কারণ দাঁড় করায়,তাহলে ঐ কাজ করা অসম্ভবের চেয়েও অসম্ভব হয়ে পড়ে।আরও একটি বিষয় অবচেতন মনের থাকে তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের অসীম ক্ষমতা।যেমন ধরেন,আপনার সচেতন মন চাচ্ছে আপনার কাজটি করা উচিৎ কিন্তু আপনার অবচেতন মন কাজটা না করার বিরুদ্ধে দশটা কারণ দেখাবে।কোন কাজ করতে গেলে অবচেতন মনের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়,ব্যাপারটা এমনই।
এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারলেন যে,অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করা আসলেই কতটা কঠিন। আর সাবলিমিলান মিউজিক বা ম্যাসেজের টার্গেটই হচ্ছে আমাদের এই অবচেতন মন। যদিও এর ল্যাঙ্গুয়েজ আমাদের সচেতন মন ভালোভাবে বুঝতে পারে না কিন্তু অবচেতন মনে তা গেঁথে যায়। তাহলে এটা ওজন নিয়ন্ত্রণে কেমনে সাহায্য করে?
আরও পড়ুনঃ অবচেতন মন কি এবং এটা কি ভাবে কাজ করে?
কিছু গবেষণা বলে,সাবলিমিনাল ম্যাসেজ আপনার খাবার বা ডায়েট সম্পর্কে ধারণা এবং অভ্যাসগুলোকে প্রভাবিত করে। যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।আবার কিছু গবেষণা দেখায় যে,ওজন নিয়ন্ত্রণে সাবলিমিনাল ম্যাসেজের কোন প্রভাবই নেই। তাই বিষয়টা এখনও স্পষ্ট নাহ।তবে যেহেতু এটা আপনার অবচেতন মনকে প্রভাবিত করতে পারে,সেহেতু কিছুটা ফল পেতেও পারেন।কিন্তু সবাই ফল পাবে,এমন গ্যারান্টি নেই।
এখন আসি,এর খারাপ দিকটা সম্পর্কে।সাবলিমিনাল ম্যাসেজের উদ্দেশ্য একটাই তা আপনাকে কোন কিছু করতে বাধ্য করবে যা আপনি করতে ইচ্ছুক নয়।
এটি যেমন ধুমপান ছাড়তে সাহায্য করতে পারে,তেমনি এটি আপনাকে আত্মহননেও প্ররোচিত করতে পারে।সাবলিমিনাল এর উপাদান হচ্ছে ছবি, দৃশ্য, সংগীত, সুর, চলচ্চিত্রের কোন ক্লিপিং, আবহ সংগীত, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ইত্যাদি।
প্রতিদিন যে সমস্ত মুভি আমরা দেখি, যে বিজ্ঞাপন চিত্র আমরা দেখি, যে সংগীত আমরা শুনি – সবখানেই এর ব্যাপক ব্যবহার।এর ভাল এবং খারাপ উভয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।মানুষের মনকে পরিবর্তন করার জন্য, তার মনে ভাল- খারাপ (বিশেষ করে “খারাপ”) উপাদান অনুপ্রবেশ করার জন্য চলচ্চিত্র, কার্টুন ছবি এবং বিজ্ঞাপন চিত্র ইত্যাদিতে সাবলিমিনাল উপাদানের ব্যবহার আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। কোন একসময় আমেরিকান সরকার সাবলিমিনাল ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো।
যদিও এটি তীব্রভাবে মানুষের অবচেতন মনকে প্রভাবিত করে, সচেতন মনে এটি তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না বলে এমন মেসেজ গ্রহণ বা বর্জন করতে কোনরূপ যুক্তিতর্ক করে না আমাদের সচেতন মন।
এখন বিষয়টা আপনার উপর,সাবলিমিনাল মিউজিক দিয়ে ওজন কমাবেন(যদিও ফল পাওয়ার গ্যারান্টি নেই) নাকি আপনার অবচেতন মনকে ওজন কমানোর লক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন।অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করার অনেক নিরাপদ উপায় কিন্তু আছেই।
Tanjina Sultana Shahin | Bee News Reporter