মানুষ স্বভাবতই শক্তির জন্য ক্ষুধার্ত এক প্রজাতি। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সূর্য, বায়ু, পানি, ভূ-গর্ভ ছাড়াও পদার্থের ক্ষুদ্র একক তথা অণু-পরমাণুর অভ্যন্তরীণ শক্তিকেও তারা বশে এনেছে।
নিউক্লিয়ার ফিউশন হচ্ছে শক্তির এক অবিনশ্বর উৎস ৷ সাধারণত সূর্যের মধ্যে ফিউশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। উচ্চতাপ এবং উচ্চচাপেই কেবল এই ফিউশন প্রক্রিয়া সম্ভব হয়। যদি বিজ্ঞানীরা নিউক্লিয়ার ফিউশন এর সঠিক ব্যবহার করতে পারে তাহলে এটি আমাদের প্রয়োজনীয়, নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন শক্তির যোগান দিতে পারবে। International Thermonuclear Experimental Reactor (ITER) এর উদ্যোগে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এবং ব্যয়বহুল নিউক্লিয়ার ফিউশন চুল্লীর কাজ শুরু হয়েছে এবং উৎপাদিত শক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফ্রান্সের সেন্ট পল লেজ ডুরেন্সে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ ৬ টি দেশ (চীন, ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)। যে প্রকল্পের চূড়ান্ত লক্ষ্যই হচ্ছে সর্বোচ্চ তাপ উৎপাদন করা।
বৃহৎ এই প্রকল্পটি কিছু সংশয়বাদীর চোখে সময় এবং অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই ছিলো না কিন্ত। ITER চলতি বছরের জুলাই মাসে সকল কিছুর অবসান ঘটিয়ে আনুষ্ঠানিক সূচনার মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাইলফলকে পৌঁছেছে।
বার্নার্ড বিগট, যিনি ২০১৫ সালে ITER এর মহাপরিচালক এর দায়িত্ব পালন করেন, তিনি বলেন, “এমন সফলতা একজন ম্যারাথন বিজয়ীর থেকে কোন অংশে কম নয়, কিন্ত এখনো আমাদের অনেক কিছুই করার আছে।” তিনি আরোও বলেন, “ভবিষ্যতের প্রতি এটি আমাদের আস্থা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।”
ল্যাবরেটরীর অভ্যন্তরে একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ শুরু করাটাই এখন চ্যালেঞ্জ। পরীক্ষণটির প্রধান অংশ হলো, একটি ২৩,০০০ টন সিলিন্ডার যেখানে অতিপরিবাহী চুম্বক ১৫০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্লাজমা বজায় রাখার চেষ্টা করবে, যা ফিউশন প্রক্রিয়া চলমান রাখবে। এইক্ষেত্রে পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে কার্য সম্পন্ন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও এটিই এই প্রজেক্টের অন্যতম সফলতা। প্লাজমা পদার্থবিদ সাস্কিয়া বলেন, “এই ফিউশন চুল্লী একটি বৃহদায়তনের আন্তর্জাতিক প্রকল্প, যেখানে যন্ত্রাংশগুলো পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রস্তুত করা হয় এবং এগুলো একত্রে একটি পাজলের ন্যায় পরস্পর সমন্বয় সাধন করে কাজ করবে।”
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন ২০২৫ সালের মধ্যেই ফিউশন চুল্লী-টি চালু করা হবে। তবে চূড়ান্ত ফলাফল পেতে হলে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চলমান থাকতে হবে চুল্লীর কার্যক্রম। আর যদি এটি সফল হয় তাহলে এর ফলাফল হবে অনেক বিশাল।
উল্লেখ্য, কয়লা, তেল বা নিউক্লিয়ার ফিশন এর থেকে ফিউশন প্রক্রিয়ায় সবথেকে বেশি শক্তি নির্গমন হয় এবং কোন গ্রীনহাউজ গ্যাস বা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপাদন করে না।
“আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ফিউশন সত্যিই একটি বিকল্প যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির পরিপূরক এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান হতে পারে”, বলেন বিগট।
এ.বি.এম. হাদীউজামান/ নিজস্ব প্রতিবেদক